Logo
Logo
×

সারাদেশ

কুমিল্লায় প্রথম নারী ওসি নাজনীন সুলতানা

Icon

আবুল খায়ের, কুমিল্লা ব্যুরো

প্রকাশ: ১৭ জুন ২০২৫, ১০:৫৮ পিএম

কুমিল্লায় প্রথম নারী ওসি নাজনীন সুলতানা

কুমিল্লায় নাজনীন সুলতানা নামে একজন নারী ইন্সপেক্টর জেলার গুরুত্বপূর্ণ লাকসাম থানার ওসির দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি জেলায় প্রথম নারী ওসি হিসেবে সফলভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানা গেছে।

এরই মাঝে আইনশৃঙ্খলার উন্নয়নে ভূমিকা পালন করে তিনি প্রশংসা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। এ ইন্সপেক্টরের এমন সফলতায় গর্ববোধ করছেন জেলার সচেতন নারী সমাজ।

এদিকে নাজনীনের কর্মদক্ষতা দেখে জেলার বিভিন্ন থানায় আরও নারী ইন্সপেক্টরদের পদায়নের কথা ভাবছেন কর্তৃপক্ষ। 

জেলা পুলিশ সূত্র জানায়, কুমিল্লায় মোট ১৮টি থানা নিয়ে চলছে জেলা পুলিশের কার্যক্রম। এসব থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিসেবে পুরুষ ইন্সপেক্টররা নিয়মিত দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তবে এবার পুরুষদের পাশাপাশি নাজনীন সুলতানা নামে একজন নারী ইন্সপেক্টরকে জেলার গুরুত্বপূর্ণ থানা লাকসামের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এর আগে নারী ইন্সপেক্টর হিসেবে জেলায় কেউ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) দায়িত্ব পালন করেননি।

গত বছরের ৮ অক্টোবর নাজনীন সুলতানা কুমিল্লার লাকসাম থানার ওসি হিসেবে দায়িত্ব পান। এরপর থেকে অত্যন্ত দক্ষতা এবং সফলতার সঙ্গে তিনি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছেন। 

নাজনীন সুলতানা চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলার পূর্ব সৈয়দপুর গ্রামের ফজলুল হক ভূঁইয়ার মেয়ে। এক ভাই তিন বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। চট্টগ্রাম সিটি কলেজ থেকে বাংলায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেছেন তিনি। পাশাপাশি এলএলবিও সম্পন্ন করেছেন।

২০০৭ সালে উপ-পরিদর্শক (এসআই) হিসেবে পুলিশে যোগদান করেন তিনি। কর্মজীবন শুরু হয় ফেনী সদর থানার মাধ্যমে। তারপর সাব-ইন্সপেক্টর হিসেবে চট্টগ্রামের কোতোয়ালি, ডবলমুরিং, খুলসী, এসবি, চট্টগ্রাম বিমানবন্দর ইমিগ্রেশনে দায়িত্ব পালন করেন।

২০১৬ সালে ইন্সপেক্টর হিসেবে পদোন্নতি লাভ করে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি কার্যালয়ে অপারেশনের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৮ সালে তিনি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে যান। সর্বশেষ গত বছরের ৮ অক্টোবর তিনি লাকসাম থানায় যোগদান করেন। ১৯৮২ সালে প্রতিষ্ঠিত লাকসাম থানার ৪০তম ওসি তিনি এবং নারী ওসি হিসেবে প্রথম।

নাজনীন সুলতানা বলেন, নারী ইন্সপেক্টররা সচরাচর ওসির দায়িত্ব পান না। কারণ একটা থানা এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে একজন ওসিকে অনেক দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হয়। সেক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ অনেক বেশি। এ জন্য নারী ইন্সপেক্টররা এখানে আসার সাহস পায় না। তবে আমার দীর্ঘদিনের ইচ্ছা আমি ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করব। সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। দায়িত্ব পালনের প্রথম দিন থেকেই এখানকার মানুষ আমাকে সহায়তা করছেন। রাজনৈতিকভাবেও আমাকে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে না। কারণ আমি কোনো দলের দিকে ঝুঁকে যাইনি, যেটা সঠিক, সেটাই করছি। থানায় কোনো মানুষ এলে প্রথমে চেষ্টা করি মানুষের সমস্যাটা মনোযোগ দিয়ে শোনার জন্য, এরপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিই।

তিনি বলেন, পুলিশে চাকরি করব কখনই ভাবিনি। মূলত আমার ভাই ২০০৫ সালে এসআই পদে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন, তবে মৌখিক পরীক্ষা দেওয়ার পর তার চাকরিটা হয়নি। এরপর ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে যখন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিল, তখন আমার ভাই বললেন এখন কোনো সুপারিশ লাগবে না, যোগ্যতায় চাকরি হবে। ভাই বলাতে আমি আবেদন করি। এরপর চাকরিটা হয়ে যায়।

নাজনীনের স্বামীও পুলিশে চাকরি করেন। তাদের একমাত্র ছেলে সপ্তম শ্রেণির ছাত্র।

লাকসাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাউছার হামিদ বলেন, ওসি নাজনীন সুলতানা অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে নিয়মিত সমন্বয় করে কাজ করছেন। আমি মাঠপর্যায়ে কয়েকটি উপজেলায় দায়িত্ব পালন করেছি। তবে এখন পর্যন্ত আমার কাছে বেস্ট ওসি মনে হয়েছে নাজনীন সুলতানাকে।

কুমিল্লার বিশিষ্ট নারীনেত্রী দিলনাশি মোহসেন বলেন, একজন নারী ইন্সপেক্টর জেলার গুরুত্বপূর্ণ লাকসাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এটা আমাদের জন্য গর্বের। দক্ষতা যাচাই করে নারীদের আরও বেশি বেশি দায়িত্ব দিতে হবে। এতে নারীরা তাদের সফলতা দেখাতে পারবে। 

কুমিল্লার পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ নাজির আহমেদ খান বলেন, ওসি হিসেবে নাজনীন দক্ষতার সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছেন। বিশেষ করে একটা ক্রাইসিস মুহূর্তে সে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। এতে আমাদের ধারণা হয়েছে সে ক্যাপাবল। সামনের দিকে আরও কিছু থানায় নারীদের পদায়ন করার আমাদের ইচ্ছা আছে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম