চট্টগ্রামে বিয়ে বাড়িতে মব সৃষ্টির নেপথ্যে চাঁদাবাজি
এমন বেশ কয়েকটি ঘটনায় সমালোচনার ঝড়

চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৫, ০৪:৪২ এএম

ফলো করুন |
|
---|---|
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা পরিচয়ে প্রথমে চাঁদা দাবি করেন। দাবি করা চাঁদা না পেলে দলবল নিয়ে টার্গেট ব্যক্তির বিরুদ্ধে সৃষ্টি করেন মব। তারপর ফ্যাসিবাদের দোসর আখ্যা দিয়ে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। চট্টগ্রামে এভাবেই ঘটেছে বেশ কয়েকটি ঘটনা।
সবশেষ চট্টগ্রামে এক আওয়ামী লীগ নেতার ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানে বিক্ষোভের
নামে মব সৃষ্টির অপচেষ্টায় চট্টগ্রামে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন,
চট্টগ্রামের সদস্যসচিব মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন মবের নেতৃত্ব দেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
স্বয়ং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের আরেকটি পক্ষ অভিযোগ করেছে, কোটি টাকা চাঁদা
চেয়ে না পেয়েই অভিযানের নামে বিয়ে বাড়িতে মব সৃষ্টি করার অপচেষ্টা চলছে। এতে বিয়ের
উৎসব ম্লান হয়ে যায়। অতিথিদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে
আতঙ্ক।
শুক্রবার চট্টগ্রাম ক্লাবের সামনে রাত ১১টায় শুরু হওয়া বিক্ষোভ চলতে
থাকে রাত ১টা পর্যন্ত। একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে
কোতোয়ালি থানা পুলিশ। উপস্থিত হয় সেনাসদস্যরাও। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এই বিক্ষোভের
ছবি ছড়িয়ে পড়ে। তবে শেষ পর্যন্ত বড় ধরনের অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটেনি। রাত ১০টার মধ্যে
দাবি করা টাকা না দেওয়ায় রাত ১১টা থেকে বিয়ে বাড়িতে বিক্ষোভ করা হয়। এর আগে চট্টগ্রামের নেভি কনভেনশন হলে ফটিকছড়ির আওয়ামী
লীগ নেতা ফরিদুল আনোয়ারের মেয়ের বিয়েতেও অভিযানের নামে রাতভর তাণ্ডব চালানো হয়েছে।
ওই বিয়ের অনুষ্ঠান থেকেই মবকারীরা ফরিদুল আনোয়ারকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। এ ঘটনাও
চট্টগ্রামে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়।
জানা গেছে, শুক্রবার রাতে চট্টগ্রাম ক্লাবে বোয়ালখালী উপজেলার সাবেক
চেয়ারম্যান ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য জাহেদুল হকের ছেলের বিয়ের
অনুষ্ঠান চলছিল। ওই বিয়েতে শেখ হাসিনার ফুফাতো বোনের জামাই স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের
চেয়ারম্যান কাজী আকরাম উদ্দিনও উপস্থিত থাকার কথা ছিল। এ খবর পেয়ে নিজাম উদ্দিনের নেতৃত্বে
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বেশকিছু নেতা-কর্মী বিয়ের উৎসব চলাকালেই ক্লাব ফটকে জড়ো হয়ে
বিক্ষোভ করতে থাকে। এ সময় তারা চট্টগ্রাম ক্লাব থেকে বের হওয়া বা ক্লাবে প্রবেশ করা
প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন যানবাহন থামিয়ে তল্লাশি করতে থাকে। এর আগে বিক্ষোভে
অংশ নেওয়া মোবারক হোসাইন নামের একজন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দেন।
এতে তিনি লিখেন, শেখ হাসিনার ফুফাতো
বোনের জামাই কাজী আকরাম উদ্দিন এবং বোয়ালখালী উপজেলা চেয়ারম্যান জাহেদুল হককে ধরতে
ছাত্র-জনতা এই মুহূর্র্তে চিটাগাং ক্লাবে জড়ো হচ্ছে। ঘটনাস্থলে এক বিক্ষোভকারী বলেন,
প্রশাসন একাধিক মামলার আসামিদের গ্রেফতার করছে না। জাহেদুল হক একজন চিহ্নিত আওয়ামী
লীগ নেতা। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। প্রশাসন এতদিনেও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা
নেয়নি। তাই সে প্রকাশ্যে ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পেরেছে। আমরা চাই, তাকে
আইনের আওতায় আনা হোক।
এদিকে শুক্রবার রাতে চট্টগ্রাম ক্লাবে বিয়ের অনুষ্ঠানে মব সৃষ্টি নিয়ে
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা এইচএম ওবায়দুর
রহমান। পরে অবশ্য তিনি পোস্টটি মুছে ফেলেন। তার দেওয়া পোস্টের শিরোনাম দেন- ‘চিটাগং ক্লাব এবং বিয়ে।’ তিনি লিখেন,
একটা অথেনটিক তথ্য দেই। সারাদিন চাঁদা নিয়ে বার্গেইনিং চলছিল, সন্ধ্যার মধ্যেই সব টাকা
পে’ করার কথা ছিল। কিন্তু রাত ৯টা পর্যন্ত পর্যাপ্ত টাকা পে না করায় বিষয়টি ফাঁস করে
দেওয়া হয়। দাবিকৃত টাকার পরিমাণ ছিল ১ কোটি। আমি এক শর্তে তার এবং তাদের নাম ফাঁস করব
যদি তোমরা সেইসব ‘জুলাই বিক্রিকারী’দের প্রকাশ্যে নিউ মার্কেট মোড়ে লটকায় রাখবা- বলো।
তবে চাঁদা না পেয়ে মব সৃষ্টির যে অভিযোগ সংগঠনের অভ্যন্তর থেকেই উঠেছে- এ বিষয়ে জানতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন
নেতা নিজাম উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা
ও বানোয়াট। এসব অভিযোগের এক শতাংশও সত্যি নয়।