ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে কৃষকের গ্রীষ্মকালীন টমেটো
একরাম তালুকদার ও আতিউর রহমান, দিনাজপুর ও বিরল প্রতিনিধি
২৩ এপ্রিল ২০২০, ২২:৪১:৩৯ | অনলাইন সংস্করণ
বাম্পার ফলন হওয়ায় এবার বেশ লাভের স্বপ্ন দেখলেও এখন ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে কৃষকের গ্রীষ্মকালীন টমেটো। করোনাভাইরাসেই কেড়ে নিয়েছে তাদের সোনালী স্বপ্ন।
বাজারে বিক্রি না হওয়ায় এখন লাভ তো দূরের কথা, ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে কষ্ট করে ফলানো এই সবজি। এই অবস্থায় কৃষকের কিছুটা হলেও ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকারি ত্রাণ বিতরণের তালিকায় টমেটোকে যুক্ত করার জন্য সরকারি ত্রাণ সমন্বয় কমিটির কাছে প্রস্তাব রেখেছে কৃষি বিভাগ।
বৃহস্পতিবার বিরলের পুরিয়া গ্রামে রাষ্ট্রীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত কৃষক মতিউর রহমানের টমেটো ক্ষেতে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, ক্ষেতেই টমেটো পেকে শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
কৃষক মতিউর রহমান জানান, গত বছর বেশ লাভ হওয়ায় এবার টমেটোর আবাদ বাড়িয়ে দিয়ে ৯ একর জমিতে গ্রীষ্মকালীন টমেটো আবাদ করেছি। ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। এতে সব মিলিয়ে তার খরচ হয়েছে প্রায় ১৪ লাখ টাকা। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে গত বছরের বাজার দর হিসাবে অন্তত ৪০ লাখ টাকার টমেটো বিক্রি হতো।
তিনি বলেন, প্রথম অবস্থায় ৯০ হাজার টাকার টমেটো বিক্রি হয়েছে। কিন্তু এখন টমেটো বিক্রিই হচ্ছে না। বাজারে যে দাম তাতে শ্রমিক দিয়ে ক্ষেত থেকে বাজারে নিয়ে যাওয়ার খরচই উঠবে না। এই জন্য হাল ছেড়ে দিয়েছি। জমিতেই নষ্ট হয়ে জমির সার হোক। এই অবস্থা শুধু মতিউর রহমানের নয় দিনাজপুর সব চাষীর।
এ দিকে দিনাজপুর জেলার প্রধান টমেটোর বাজার গাবুড়ার হাটে অন্যান্য বছর প্রতিদিন এই মৌসুমে শতাধিক ট্রাক টমেটো বেচা-কেনা হয়। আর এ সব টমেটো রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে যায়। কিন্তু বৃহস্পতিবার করোনাভাইরাসের কারণে বাইরে থেকে কোনো বেপারী আসেননি। বেচাকেনাও ঢিলেঢালা।
বিরল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমান টমেটো চাষীদের এই অবস্থার কথা স্বীকার করে জানান, কৃষকদের ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে উপজেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কমিটির কাছে তিনি প্রস্তাব রেখেছেন, কৃষকদের কাছে এ সব টমেটো কিনে ত্রাণ হিসেবে অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে টমেটো বিতরণের। তাহলে কর্মহীন মানুষের পুষ্টির চাহিদা কিছুটা মিটবে।
দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. তৌহিদুল ইকবাল জানান, দিনাজপুর জেলায় এ বছর ১ হাজার ১৫৪ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন টমেটোর আবাদ হয়েছে। ফলন হবে অন্তত ৬০ হাজার মেট্রিক টন।
তিনি জানান, এবার ঢাকাসহ অন্যান্য স্থানে টমেটোর চাহিদা তেমন নেই। তাই বাজারে দাম কম। রমজান মাসে কিছুটা চাহিদা বাড়তে পারে এবং তখন কিছুটা দাম বাড়তে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
কৃষকদের আর্থিক ক্ষতির কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, সরকার ইতিমধ্যেই কৃষকদের জন্য আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। ক্ষতিগ্রস্ত টমেটো চাষীদেরকেও এই প্রণোদনার আওতায় নিয়ে আসা হবে।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৪০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে কৃষকের গ্রীষ্মকালীন টমেটো
বাম্পার ফলন হওয়ায় এবার বেশ লাভের স্বপ্ন দেখলেও এখন ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে কৃষকের গ্রীষ্মকালীন টমেটো। করোনাভাইরাসেই কেড়ে নিয়েছে তাদের সোনালী স্বপ্ন।
বাজারে বিক্রি না হওয়ায় এখন লাভ তো দূরের কথা, ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে কষ্ট করে ফলানো এই সবজি। এই অবস্থায় কৃষকের কিছুটা হলেও ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকারি ত্রাণ বিতরণের তালিকায় টমেটোকে যুক্ত করার জন্য সরকারি ত্রাণ সমন্বয় কমিটির কাছে প্রস্তাব রেখেছে কৃষি বিভাগ।
বৃহস্পতিবার বিরলের পুরিয়া গ্রামে রাষ্ট্রীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত কৃষক মতিউর রহমানের টমেটো ক্ষেতে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, ক্ষেতেই টমেটো পেকে শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
কৃষক মতিউর রহমান জানান, গত বছর বেশ লাভ হওয়ায় এবার টমেটোর আবাদ বাড়িয়ে দিয়ে ৯ একর জমিতে গ্রীষ্মকালীন টমেটো আবাদ করেছি। ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। এতে সব মিলিয়ে তার খরচ হয়েছে প্রায় ১৪ লাখ টাকা। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে গত বছরের বাজার দর হিসাবে অন্তত ৪০ লাখ টাকার টমেটো বিক্রি হতো।
তিনি বলেন, প্রথম অবস্থায় ৯০ হাজার টাকার টমেটো বিক্রি হয়েছে। কিন্তু এখন টমেটো বিক্রিই হচ্ছে না। বাজারে যে দাম তাতে শ্রমিক দিয়ে ক্ষেত থেকে বাজারে নিয়ে যাওয়ার খরচই উঠবে না। এই জন্য হাল ছেড়ে দিয়েছি। জমিতেই নষ্ট হয়ে জমির সার হোক। এই অবস্থা শুধু মতিউর রহমানের নয় দিনাজপুর সব চাষীর।
এ দিকে দিনাজপুর জেলার প্রধান টমেটোর বাজার গাবুড়ার হাটে অন্যান্য বছর প্রতিদিন এই মৌসুমে শতাধিক ট্রাক টমেটো বেচা-কেনা হয়। আর এ সব টমেটো রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে যায়। কিন্তু বৃহস্পতিবার করোনাভাইরাসের কারণে বাইরে থেকে কোনো বেপারী আসেননি। বেচাকেনাও ঢিলেঢালা।
বিরল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমান টমেটো চাষীদের এই অবস্থার কথা স্বীকার করে জানান, কৃষকদের ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে উপজেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কমিটির কাছে তিনি প্রস্তাব রেখেছেন, কৃষকদের কাছে এ সব টমেটো কিনে ত্রাণ হিসেবে অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে টমেটো বিতরণের। তাহলে কর্মহীন মানুষের পুষ্টির চাহিদা কিছুটা মিটবে।
দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. তৌহিদুল ইকবাল জানান, দিনাজপুর জেলায় এ বছর ১ হাজার ১৫৪ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন টমেটোর আবাদ হয়েছে। ফলন হবে অন্তত ৬০ হাজার মেট্রিক টন।
তিনি জানান, এবার ঢাকাসহ অন্যান্য স্থানে টমেটোর চাহিদা তেমন নেই। তাই বাজারে দাম কম। রমজান মাসে কিছুটা চাহিদা বাড়তে পারে এবং তখন কিছুটা দাম বাড়তে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
কৃষকদের আর্থিক ক্ষতির কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, সরকার ইতিমধ্যেই কৃষকদের জন্য আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। ক্ষতিগ্রস্ত টমেটো চাষীদেরকেও এই প্রণোদনার আওতায় নিয়ে আসা হবে।