তাবিজের গল্প
তখন কলেজে পড়ি।
জ্যোৎস্নাময়ী রাত।চাঁদ তার সবটুকু আলো দিয়ে সেদিন এর রাতটাকে মায়াময় করে তুলেছিল। গৃহত্যাগী জ্যোৎস্না আমাদের হোস্টেল থেকে বের করে আনলো।
আমরা কয়েক বন্ধু মিলে জ্যোৎস্না গায়ে মাখতে মাখতে গেলাম ৩ কি.মি. দূরের বন্ধু রফিকের বাড়ি।
রাতে সেখানেই থেকে গেলাম আমরা।
ভোরে ওঠে হাঁটাহাঁটি করছি। রফিকের এক চাচার ঘরের পেছনে একটা কি যেন দুলছে গাছ থেকে টানানো।
কাছে গিয়ে দেখি তিনটা বড় বড় তাবিজ গাছ থেকে ঝুলানো। আমি এই দৃশ্য দেখে পুলকিত হলাম,রহস্য উদঘাটনে ব্যস্ত হলাম।
রফিকের চাচীকে জিজ্ঞেস করলাম তাবিজ কেন গাছে ঝুলানো। তিনি বললেন,একমাত্র মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন কিন্তু মেয়েটার কপালে সুখ নেই।
শাশুড়ি-ননদের ইন্ধনে জামাই মেয়ের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে,মাঝে মাঝে গায়ে হাত তুলে।
তাই মেয়েকে বাবার বাড়িতে নিয়ে এসেছেন।
একজন বিখ্যাত কবিরাজ তদবির দিয়েছেন,তাবিজ গাছে ঝুলিয়ে রাখতে বলেছেন এক মাস।
তাবিজ বাতাসে দুলবে, এতে জামাই, শাশুড়ি ও ননদের মন দুলবে।
দুলতে দুলতে উনার মেয়ের জন্য পাগল হয়ে যাবে জামাই।মেয়েটা চিরসুখী হবে।।
কিন্তু ৬ মাস পরে রফিকের চাচাত বোনের ডিভোর্স হয়ে গেছে শুনেছি।।
দুই.
কালেন্দ্র বিশ্বাস নামের একজন রোগী একবার আমার কাছে আসেন মৌমাছির কামড় থেকে এনাফাইলেক্সিস নিয়ে।
চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফেরার সময় গলায় তাবিজ দেখে আমি জিজ্ঞেস করলাম এই তাবিজ কে দিয়েছে?
কালেন্দ্র উত্তর দিলেন "মিয়া সাব দিয়েছেন"
জিজ্ঞাস,করলাম কিসের তাবিজ?
বললেন উপ্রির তাবিজ। জ্বিন সম্প্রদায়কে সিলেটের স্থানীয় ভাষায় উপ্রি বলা হয়।এদিকে উপ্রির খুব উপদ্রব।
মানুষ প্রায়শই বলে উপ্রির চিকিৎসা করাইছি, উপ্রি ধরছে,এর সঙ্গে উপ্রির ধরা আছে।
আমি কালেন্দ্রকে বললাম, আপনি কোন ধর্মের? বললেন হিন্দু ধর্ম। মিয়া সাব কোন ধর্মের? বললেন মিয়া সাব মুসলমান।
আমি তখন বললাম, ধর্ম ত দুইজনেরটাই গেছে।
আপনি তো কুরআন বিশ্বাস করেন না,মিয়া সাব তো কুরআন দিয়ে তাবিজ দিয়েছেন।
এটা শুনে কালেন্দ্র চিন্তিত হয়ে গেলেন।
ধর্ম জীবনের চেয়েও বড়।
আমি বললাম, চলেন আজ তাবিজটা খুলে দেখি কী আছে ভিতরে?
তারপর তাবিজের ৫টা লেয়ার খুলে ভেতরে পেলাম সিগারেটের প্যাকেটের ভেতর যেই সাদা কাগজ থাকে সেই কাগজ, তাতে লিখা ছিল "কালেন্দ্র তুই ভাল হয়ে যা"
এই লেখা দেখে কালেন্দ্র বাবুর চেহারাটা মলিন হয়ে গিয়েছিল।মিয়া সাবের কাণ্ড দেখে কালেন্দ্র বাবুর চোখ ভিজে উঠেছিল। ৫১১টাকার হাদিয়া নিয়েছেন মিয়া সাব বলে বিড়বিড় করতে করতে চলে গেলেন।
আমি তখন আক্ষেপ করছিলাম, কত মানুষ কে এই জগত এ উপ্রি ধরল, আমি কেন সেই উপ্রির দেখা পেলাম না আজ অব্দি।
তিন.
তামান্না নাম মেয়েটির। বয়স ১১ বছর।আমার কাছে আসল রাত ১০টায়।আমি জানতে চাইলাম ব্যাথা কখন থেকে?
তামান্নার মা বললো-সকাল থেকে।এত দেরি করে আসছেন কেন জিজ্ঞেস করতে করতে পেট এক্সামিনেশান করতে গিয়ে দেখি কালো দাগা বাঁধা পেটে প্যাঁচ দিয়ে।
আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম এটা কী?
সঙ্গে দাদী ছিল তামান্নার। তিনি বললেন, তামান্নার উপ্রির ধরা আছে।সকাল থেকে উপ্রির চিকিৎসা চলেছে।এখনো ব্যাথা না কমাতে ডাক্তারের কাছে নিয়ে এসেছেন।
চিকিৎসা দেওয়ার ১৫ মিনিটের মধ্যে এই ছোট্ট মেয়েটির চেহারায় আরামের ভাব ফুটে উঠল।
পরের দিন সকালে তামান্নার আল্ট্রাসনোগ্রাম করাই।রিপোর্ট এ কলিলিথিয়াসিস (পিত্তথলির পাথর) ধরা পড়ে।
চার.
২০০০ সাল। ক্লাস টেনে উঠলাম।রোল নাম্বারটা হাতছাড়া হয়ে গেল।
নাইনের ফাস্ট বয় টেনে গিয়ে সেকেন্ড।
আব্বা আম্মার সঙ্গে বকাবকি করছেন।ক্লাস সিক্সে রোল ১০০ নিয়ে স্কুলজীবনের যাত্রা করে ক্লাস নাইনে রোল ১ এর দেখা পেয়েছিলাম।
স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিনের মত আমার রোল নাম্বার রক্ষা না করতে পারায় আমি লজ্জিত হলাম।
আম্মাকে কেউ একজন বলছে, ভাবী একজন ভালো কবিরাজ দেখান।ছেলেকে কেউ তাবিজ করতে পারে।
আমার কোন শত্রু আছে এটা ভাবতে নারাজ।
আব্বা নিয়ে গেলেন চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার টোরাগড় গ্রামের পীর জিন্নত আলীর কাছে।
তিনি আমার দুই হাতে সুতা দিয়ে মাপলেন।
ডান হাতের সঙ্গে বাম হাতের সুতার গ্যাপ ৩ সেমি।
জিন্নাত আলী আব্বাকে বললেন, আপনার ছেলে কে তাবিজ করেছেন কেউ।ভালো ছাত্র তো তাই?
আব্বা আমার দিকে একটা তীব্র চাহনি দিলেন।
তারপর তিনি অনেক দোয়া পড়ে আমাকে ফুঁ দিলেন।
১ ঘন্টা বিরতিতে আবার মাপ দিলেন।
এবার কোন গ্যাপ নেই।
তাবিজের একশন কেটে গেছে।
আব্বার চোখমুখ খুশীতে চিকচিক করে উঠল।
তারপর আব্বা স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির ইলেকশনে দাঁড়ালে জিতবেন কিনা জানতে চাইলেন।
উনি ঝিম ধরে ধ্যান করলেন।
১৫ মিনিট পর বললেন, আপনি ফার্স্ট হবেন।
আব্বাকে আম্মা বারবার নিষেধ করা সত্ত্বেও আমার স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির ইলেকশনে দাঁড়ালেন এবং ফলাফল শোচনীয় পরাজয়।
হাজারো অভিভাবকের মধ্যে মাত্র ৮৪জন অভিভাবক স্কুলের ফার্স্ট বয়ের গ্রাজুয়েট পিতাকে ভোট দিলেন। যিনি ফার্স্ট হয়েছেন তিনি নিজের নামও লিখতে পারতেন না।উনি স্কুলের উন্নয়নে কী ভূমিকা রেখেছেন জানতে পারিনি।
আমি জিন্নাত আলীর ভবিষ্যদ্বাণী মাঠে মারা যাওয়া নিজ চোখে দেখে শয়তানের হাসি হেসেছিলাম।
পাঁচ.
আমার এক বন্ধু আমার সঙ্গে স্কুলে খুব কম্পিটিশন দিত।কেন সে আমার থেকে বেশি নাম্বার পায় না তাই সে শরনাপন্ন হল হুজুরের কাছে।
হুজুর ইন্তেকাল করেছেন বিধায় নাম উল্লেখ করলাম না।
হুজুর জাফরানের কালি দিয়ে একটা তাবিজ লিখে প্লেটে পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখলেন।
পানি তাবিজময় হওয়ার পর সে সেই পানি খেয়ে খুব ভাব ধরতে লাগলো সে।
ভাব এমন জোবায়ের তোর খবর আছে!
তাবিজ গুলে খাওয়ার পর টেস্টে তিন সাবজেক্টে ফেল।ভাগ্য ভালো এসএসসি পরীক্ষার আগে আর তাবিজ গুলা পানি খায়নি।
সেই বন্ধুর মলিন চেহারা আজো মনে পড়ে!
লেখক: ডা. জোবায়ের আহমেদ, প্রাক্তন শিক্ষার্থী, সিলেট এমজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৪০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
তাবিজের গল্প
তখন কলেজে পড়ি।
জ্যোৎস্নাময়ী রাত।চাঁদ তার সবটুকু আলো দিয়ে সেদিন এর রাতটাকে মায়াময় করে তুলেছিল। গৃহত্যাগী জ্যোৎস্না আমাদের হোস্টেল থেকে বের করে আনলো।
আমরা কয়েক বন্ধু মিলে জ্যোৎস্না গায়ে মাখতে মাখতে গেলাম ৩ কি.মি. দূরের বন্ধু রফিকের বাড়ি।
রাতে সেখানেই থেকে গেলাম আমরা।
ভোরে ওঠে হাঁটাহাঁটি করছি। রফিকের এক চাচার ঘরের পেছনে একটা কি যেন দুলছে গাছ থেকে টানানো।
কাছে গিয়ে দেখি তিনটা বড় বড় তাবিজ গাছ থেকে ঝুলানো। আমি এই দৃশ্য দেখে পুলকিত হলাম,রহস্য উদঘাটনে ব্যস্ত হলাম।
রফিকের চাচীকে জিজ্ঞেস করলাম তাবিজ কেন গাছে ঝুলানো। তিনি বললেন,একমাত্র মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন কিন্তু মেয়েটার কপালে সুখ নেই।
শাশুড়ি- ননদের ইন্ধনে জামাই মেয়ের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে,মাঝে মাঝে গায়ে হাত তুলে।
তাই মেয়েকে বাবার বাড়িতে নিয়ে এসেছেন।
একজন বিখ্যাত কবিরাজ তদবির দিয়েছেন,তাবিজ গাছে ঝুলিয়ে রাখতে বলেছেন এক মাস।
তাবিজ বাতাসে দুলবে, এতে জামাই, শাশুড়ি ও ননদের মন দুলবে।
দুলতে দুলতে উনার মেয়ের জন্য পাগল হয়ে যাবে জামাই।মেয়েটা চিরসুখী হবে।।
কিন্তু ৬ মাস পরে রফিকের চাচাত বোনের ডিভোর্স হয়ে গেছে শুনেছি।।
দুই.
কালেন্দ্র বিশ্বাস নামের একজন রোগী একবার আমার কাছে আসেন মৌমাছির কামড় থেকে এনাফাইলেক্সিস নিয়ে।
চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফেরার সময় গলায় তাবিজ দেখে আমি জিজ্ঞেস করলাম এই তাবিজ কে দিয়েছে?
কালেন্দ্র উত্তর দিলেন "মিয়া সাব দিয়েছেন"
জিজ্ঞাস,করলাম কিসের তাবিজ?
বললেন উপ্রির তাবিজ। জ্বিন সম্প্রদায়কে সিলেটের স্থানীয় ভাষায় উপ্রি বলা হয়।এদিকে উপ্রির খুব উপদ্রব।
মানুষ প্রায়শই বলে উপ্রির চিকিৎসা করাইছি, উপ্রি ধরছে,এর সঙ্গে উপ্রির ধরা আছে।
আমি কালেন্দ্রকে বললাম, আপনি কোন ধর্মের? বললেন হিন্দু ধর্ম। মিয়া সাব কোন ধর্মের? বললেন মিয়া সাব মুসলমান।
আমি তখন বললাম, ধর্ম ত দুইজনেরটাই গেছে।
আপনি তো কুরআন বিশ্বাস করেন না,মিয়া সাব তো কুরআন দিয়ে তাবিজ দিয়েছেন।
এটা শুনে কালেন্দ্র চিন্তিত হয়ে গেলেন।
ধর্ম জীবনের চেয়েও বড়।
আমি বললাম, চলেন আজ তাবিজটা খুলে দেখি কী আছে ভিতরে?
তারপর তাবিজের ৫টা লেয়ার খুলে ভেতরে পেলাম সিগারেটের প্যাকেটের ভেতর যেই সাদা কাগজ থাকে সেই কাগজ, তাতে লিখা ছিল "কালেন্দ্র তুই ভাল হয়ে যা"
এই লেখা দেখে কালেন্দ্র বাবুর চেহারাটা মলিন হয়ে গিয়েছিল।মিয়া সাবের কাণ্ড দেখে কালেন্দ্র বাবুর চোখ ভিজে উঠেছিল। ৫১১টাকার হাদিয়া নিয়েছেন মিয়া সাব বলে বিড়বিড় করতে করতে চলে গেলেন।
আমি তখন আক্ষেপ করছিলাম, কত মানুষ কে এই জগত এ উপ্রি ধরল, আমি কেন সেই উপ্রির দেখা পেলাম না আজ অব্দি।
তিন.
তামান্না নাম মেয়েটির। বয়স ১১ বছর।আমার কাছে আসল রাত ১০টায়।আমি জানতে চাইলাম ব্যাথা কখন থেকে?
তামান্নার মা বললো-সকাল থেকে।এত দেরি করে আসছেন কেন জিজ্ঞেস করতে করতে পেট এক্সামিনেশান করতে গিয়ে দেখি কালো দাগা বাঁধা পেটে প্যাঁচ দিয়ে।
আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম এটা কী?
সঙ্গে দাদী ছিল তামান্নার। তিনি বললেন, তামান্নার উপ্রির ধরা আছে।সকাল থেকে উপ্রির চিকিৎসা চলেছে।এখনো ব্যাথা না কমাতে ডাক্তারের কাছে নিয়ে এসেছেন।
চিকিৎসা দেওয়ার ১৫ মিনিটের মধ্যে এই ছোট্ট মেয়েটির চেহারায় আরামের ভাব ফুটে উঠল।
পরের দিন সকালে তামান্নার আল্ট্রাসনোগ্রাম করাই।রিপোর্ট এ কলিলিথিয়াসিস (পিত্তথলির পাথর) ধরা পড়ে।
চার.
২০০০ সাল। ক্লাস টেনে উঠলাম।রোল নাম্বারটা হাতছাড়া হয়ে গেল।
নাইনের ফাস্ট বয় টেনে গিয়ে সেকেন্ড।
আব্বা আম্মার সঙ্গে বকাবকি করছেন।ক্লাস সিক্সে রোল ১০০ নিয়ে স্কুলজীবনের যাত্রা করে ক্লাস নাইনে রোল ১ এর দেখা পেয়েছিলাম।
স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিনের মত আমার রোল নাম্বার রক্ষা না করতে পারায় আমি লজ্জিত হলাম।
আম্মাকে কেউ একজন বলছে, ভাবী একজন ভালো কবিরাজ দেখান।ছেলেকে কেউ তাবিজ করতে পারে।
আমার কোন শত্রু আছে এটা ভাবতে নারাজ।
আব্বা নিয়ে গেলেন চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার টোরাগড় গ্রামের পীর জিন্নত আলীর কাছে।
তিনি আমার দুই হাতে সুতা দিয়ে মাপলেন।
ডান হাতের সঙ্গে বাম হাতের সুতার গ্যাপ ৩ সেমি।
জিন্নাত আলী আব্বাকে বললেন, আপনার ছেলে কে তাবিজ করেছেন কেউ।ভালো ছাত্র তো তাই?
আব্বা আমার দিকে একটা তীব্র চাহনি দিলেন।
তারপর তিনি অনেক দোয়া পড়ে আমাকে ফুঁ দিলেন।
১ ঘন্টা বিরতিতে আবার মাপ দিলেন।
এবার কোন গ্যাপ নেই।
তাবিজের একশন কেটে গেছে।
আব্বার চোখমুখ খুশীতে চিকচিক করে উঠল।
তারপর আব্বা স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির ইলেকশনে দাঁড়ালে জিতবেন কিনা জানতে চাইলেন।
উনি ঝিম ধরে ধ্যান করলেন।
১৫ মিনিট পর বললেন, আপনি ফার্স্ট হবেন।
আব্বাকে আম্মা বারবার নিষেধ করা সত্ত্বেও আমার স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির ইলেকশনে দাঁড়ালেন এবং ফলাফল শোচনীয় পরাজয়।
হাজারো অভিভাবকের মধ্যে মাত্র ৮৪জন অভিভাবক স্কুলের ফার্স্ট বয়ের গ্রাজুয়েট পিতাকে ভোট দিলেন। যিনি ফার্স্ট হয়েছেন তিনি নিজের নামও লিখতে পারতেন না।উনি স্কুলের উন্নয়নে কী ভূমিকা রেখেছেন জানতে পারিনি।
আমি জিন্নাত আলীর ভবিষ্যদ্বাণী মাঠে মারা যাওয়া নিজ চোখে দেখে শয়তানের হাসি হেসেছিলাম।
পাঁচ.
আমার এক বন্ধু আমার সঙ্গে স্কুলে খুব কম্পিটিশন দিত।কেন সে আমার থেকে বেশি নাম্বার পায় না তাই সে শরনাপন্ন হল হুজুরের কাছে।
হুজুর ইন্তেকাল করেছেন বিধায় নাম উল্লেখ করলাম না।
হুজুর জাফরানের কালি দিয়ে একটা তাবিজ লিখে প্লেটে পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখলেন।
পানি তাবিজময় হওয়ার পর সে সেই পানি খেয়ে খুব ভাব ধরতে লাগলো সে।
ভাব এমন জোবায়ের তোর খবর আছে!
তাবিজ গুলে খাওয়ার পর টেস্টে তিন সাবজেক্টে ফেল।ভাগ্য ভালো এসএসসি পরীক্ষার আগে আর তাবিজ গুলা পানি খায়নি।
সেই বন্ধুর মলিন চেহারা আজো মনে পড়ে!
লেখক: ডা. জোবায়ের আহমেদ, প্রাক্তন শিক্ষার্থী, সিলেট এমজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ