পলিসিস্টিক ওভারি: এক নীরব ঘাতক
অনেক কিশোরী বা তরুণী অনিয়মিত মাসিক, সাথে অবাঞ্ছিত লোম বা স্থূলতার সমস্যা নিয়ে চিকিৎসকের কাছে শরনাপন্ন হন। বেশীরভাগ সময় এ ধরণের সমস্যাগুলো পলিসিস্টিক ওভারি হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকে।
পলিসিস্টিক ওভারির বৈশিষ্ট্য সমূহ
সাধারণতঃ ৩টি বৈশিষ্ট্য থাকে এ ধরণের রোগীদের। কারো কারো মাঝে সবগুলো বৈশিষ্ট্য প্রকট থাকে। তবে যে কোন ২টি বৈশিষ্ট্য থাকলেই পলিসিস্টিক ওভারি হিসেবে চিহ্নিত করা যায়।
১) অনিয়মিত মাসিক, এক মাসিক হতে অন্য মাসিকের মাঝে ব্যবধান ৩৫ দিনের বেশি। কারো কারো ঔষধ ছাড়া মাসিক হয় না। এদের অনিয়মিত ওভুলেশন হয় কিংবা ওভুলেশন হয়ই না।
২) আলট্রাসনোগ্রাফিতে পলিসিস্টিক ওভারি পাওয়া যায়। এ ধরণের ওভারিগুলো আকৃতিতে বড়, আর ছোট ছোট ডিম্বাণু বা সিস্ট থাকে যা সংখ্যায় ১০ এর অধিক আর আকৃতিতে ১০ মিলিমিটারের কম।
৩) শরীরে পুরুষ হরমোনের আধিক্য, যা দেখেই বোঝা যেতে পারে বা ল্যাবে পরীক্ষা করে প্রমাণিত হতে পারে।
করণীয় কী?
পলিসিস্টিক ওভারির চিকিৎসার কয়েকটি ধাপ আছে যা বয়স ও সমস্যা অনুপাতে চিকিৎসা করতে হয়।
১) সব বয়সীদের জন্য খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন, ফাস্ট ফুড, জাংক ফুড ও কার্বহাইড্রেট কম খাওয়া।
২) নিয়মিত শরীর চর্চা, আদর্শ ওজন বজায় রাখা।
৩) থাইরয়েড ও প্রোলাকটিন হরমোন অনিয়ন্ত্রিত থাকলে তার চিকিৎসা করা।
৪) অনিয়মিত মাসিক থাকলে তা নিয়মিতকরার ঔষধ সেবন, এমনকি কখনো কখনো জম্ম বিরতিকরণ পিলও দেয়া হয় অবিবাহিত কিশোরী বা তরুণীকে।
৫) মেটফরমিন বা মায়ো ইনোসিটোল জাতীয় ঔষধের কিছু ভূমিকা আছে।
৬) অবাঞ্ছিত লোমের জন্য মুখে ঔষধ বা ক্রীম, এমনকি লেজার চিকিৎসা ও সহায়ক হতে পারে।
৭) বিবাহিত যেসব নারী গর্ভধারণ করতে চান, তাদের ডিম্বাণু তৈরির ঔষধ সেবন করতে হতে পারে, অবশ্যই তা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ও সম্ভব হলে ট্রান্স ভ্যাজাইনাল সনোগ্রাফির করে মনিটর করে নিতে হবে।
৮) এদের গর্ভাবস্থায় বা পরবর্তী জীবনে ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগের সমস্যা, স্ট্রোক, উচ্চ কোলেস্টেরল এইসব সমস্যা হতে পারে, তাই আগে থেকেই যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।
৯) দীর্ঘসময় মাসিক বন্ধ থাকলে জরায়ুর এন্ডোমেট্রয়ামে ক্যান্সার হতে পারে। তাই সতর্ক থাকতে হবে।
১০) এদের মেনোপজ দেরিতে হতে পারে।
পলিসিস্টিক ওভারি একটি দীর্ঘমেয়াদী রোগ, তাই সবসময় চিকিৎসকের ফলোআপে থাকাটা জরুরি। তবে ওজন নিয়ন্ত্রণ, খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন, নিয়মিত ব্যায়াম অনেকসময় এ সমস্যাকে প্রতিহত করতে পারে। তাই সুস্থ জীবন যাপন খুব জরুরি। আর পলিসিস্টিক ওভারির রোগীদের দীর্ঘ সময় মাসিক বন্ধ থাকলে ঔষধ সেবন করতে হবে পরবর্তী জটিলতা এড়ানোর জন্য। এটা এক পরিবারে কয়েকজনের হতে পারে। তাই রোগের পারিবারিক ইতিহাস জানাটা ও সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারলে ভালো।
সেপ্টেম্বর মাস পলিসিস্টিক ওভারি সচেতনতা মাস, আসুন আমরা সুস্থ জীবন যাপনের মাধ্যমে এ সমস্যাকে নিয়ন্ত্রণে রাখি।
লেখক: ডা. শাহীনা বেগম শান্তা
কনসালটেন্ট-গাইনি বিভাগ,বিআরবি হাসপাতাল ঢাকা
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
পলিসিস্টিক ওভারি: এক নীরব ঘাতক
অনেক কিশোরী বা তরুণী অনিয়মিত মাসিক, সাথে অবাঞ্ছিত লোম বা স্থূলতার সমস্যা নিয়ে চিকিৎসকের কাছে শরনাপন্ন হন। বেশীরভাগ সময় এ ধরণের সমস্যাগুলো পলিসিস্টিক ওভারি হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকে।
পলিসিস্টিক ওভারির বৈশিষ্ট্য সমূহ
সাধারণতঃ ৩টি বৈশিষ্ট্য থাকে এ ধরণের রোগীদের। কারো কারো মাঝে সবগুলো বৈশিষ্ট্য প্রকট থাকে। তবে যে কোন ২টি বৈশিষ্ট্য থাকলেই পলিসিস্টিক ওভারি হিসেবে চিহ্নিত করা যায়।
১) অনিয়মিত মাসিক, এক মাসিক হতে অন্য মাসিকের মাঝে ব্যবধান ৩৫ দিনের বেশি। কারো কারো ঔষধ ছাড়া মাসিক হয় না। এদের অনিয়মিত ওভুলেশন হয় কিংবা ওভুলেশন হয়ই না।
২) আলট্রাসনোগ্রাফিতে পলিসিস্টিক ওভারি পাওয়া যায়। এ ধরণের ওভারিগুলো আকৃতিতে বড়, আর ছোট ছোট ডিম্বাণু বা সিস্ট থাকে যা সংখ্যায় ১০ এর অধিক আর আকৃতিতে ১০ মিলিমিটারের কম।
৩) শরীরে পুরুষ হরমোনের আধিক্য, যা দেখেই বোঝা যেতে পারে বা ল্যাবে পরীক্ষা করে প্রমাণিত হতে পারে।
করণীয় কী?
পলিসিস্টিক ওভারির চিকিৎসার কয়েকটি ধাপ আছে যা বয়স ও সমস্যা অনুপাতে চিকিৎসা করতে হয়।
১) সব বয়সীদের জন্য খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন, ফাস্ট ফুড, জাংক ফুড ও কার্বহাইড্রেট কম খাওয়া।
২) নিয়মিত শরীর চর্চা, আদর্শ ওজন বজায় রাখা।
৩) থাইরয়েড ও প্রোলাকটিন হরমোন অনিয়ন্ত্রিত থাকলে তার চিকিৎসা করা।
৪) অনিয়মিত মাসিক থাকলে তা নিয়মিতকরার ঔষধ সেবন, এমনকি কখনো কখনো জম্ম বিরতিকরণ পিলও দেয়া হয় অবিবাহিত কিশোরী বা তরুণীকে।
৫) মেটফরমিন বা মায়ো ইনোসিটোল জাতীয় ঔষধের কিছু ভূমিকা আছে।
৬) অবাঞ্ছিত লোমের জন্য মুখে ঔষধ বা ক্রীম, এমনকি লেজার চিকিৎসা ও সহায়ক হতে পারে।
৭) বিবাহিত যেসব নারী গর্ভধারণ করতে চান, তাদের ডিম্বাণু তৈরির ঔষধ সেবন করতে হতে পারে, অবশ্যই তা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ও সম্ভব হলে ট্রান্স ভ্যাজাইনাল সনোগ্রাফির করে মনিটর করে নিতে হবে।
৮) এদের গর্ভাবস্থায় বা পরবর্তী জীবনে ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগের সমস্যা, স্ট্রোক, উচ্চ কোলেস্টেরল এইসব সমস্যা হতে পারে, তাই আগে থেকেই যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।
৯) দীর্ঘসময় মাসিক বন্ধ থাকলে জরায়ুর এন্ডোমেট্রয়ামে ক্যান্সার হতে পারে। তাই সতর্ক থাকতে হবে।
১০) এদের মেনোপজ দেরিতে হতে পারে।
পলিসিস্টিক ওভারি একটি দীর্ঘমেয়াদী রোগ, তাই সবসময় চিকিৎসকের ফলোআপে থাকাটা জরুরি। তবে ওজন নিয়ন্ত্রণ, খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন, নিয়মিত ব্যায়াম অনেকসময় এ সমস্যাকে প্রতিহত করতে পারে। তাই সুস্থ জীবন যাপন খুব জরুরি। আর পলিসিস্টিক ওভারির রোগীদের দীর্ঘ সময় মাসিক বন্ধ থাকলে ঔষধ সেবন করতে হবে পরবর্তী জটিলতা এড়ানোর জন্য। এটা এক পরিবারে কয়েকজনের হতে পারে। তাই রোগের পারিবারিক ইতিহাস জানাটা ও সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারলে ভালো।
সেপ্টেম্বর মাস পলিসিস্টিক ওভারি সচেতনতা মাস, আসুন আমরা সুস্থ জীবন যাপনের মাধ্যমে এ সমস্যাকে নিয়ন্ত্রণে রাখি।
লেখক: ডা. শাহীনা বেগম শান্তা
কনসালটেন্ট-গাইনি বিভাগ,বিআরবি হাসপাতাল ঢাকা