পায়ুপথে ক্যান্সার বুঝবেন কীভাবে, কী করবেন?
লাইফস্টাইল ডেস্ক
১৬ জানুয়ারি ২০২২, ১১:১০:২১ | অনলাইন সংস্করণ
মলদ্বারে বহু জটিল রোগ হয়ে থাকে। কোষ্ঠকাঠিন্য, পাইলস ও ফিস্টুলার সঙ্গে আমরা সমধিক পরিচিত। মলদ্বার দিয়ে রক্ত গেলে আমরা ধরে নিই পাইলস কিংবা ফিস্টুলা হয়েছে।
কিন্তু অনেক সময় মলদ্বারের ক্যান্সার থেকেও এ রকম রক্ত যেতে পারে। এমন লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
মলদ্বারে ক্যান্সারের লক্ষণ ও চিকিৎসা নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন ইডেন মাল্টিকেয়ার হাসপাতালের বৃহদান্ত ও পায়ুপথ সার্জারি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. একেএম ফজলুল হক।
পায়ুপথে ক্যান্সার হলে বিভিন্ন রকম উপসর্গ দেখা দেয়। যেমন- পায়খানার সঙ্গে রক্ত ও মিউকাস বা আম যাওয়া, কিছুদিন পাতলা পায়খানা এবং এরপর কিছুদিন কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়া, মলদ্বারে ব্যথা হওয়া, মল ত্যাগের অভ্যাসে পরিবর্তন, খুব সকালে পায়খানার বেগ হওয়া, মল ত্যাগের পর আরও মল রয়ে গেছে এরূপ অনুভূতি হওয়া ইত্যাদি।
যন্ত্র দিয়ে মলদ্বারের ভেতর পর্যবেক্ষণ করা যেমন- প্রকটস্কপি, সিগময়ডস্কপি, কোলনস্কপি, বেরিয়াম এনেমা পরীক্ষার মাধ্যমে ক্যান্সার শনাক্ত করা হয়। পরীক্ষার মাধ্যমে এসব রোগ আগেভাগে ধরতে পারলে চিকিৎসা সহজ ও কার্যকরী হয়।
অনেক লোকের ধারণা ক্যান্সার অপারেশন না করাই ভালো। অস্ত্রোপচার করলে আরও ছড়িয়ে যায় এবং ক্ষতি হয়। এখন পর্যন্ত সারা পৃথিবীতে বিভিন্ন অঙ্গের ক্যান্সারের, যেমন পরিপাকতন্ত্র, লিভার, অস্থি, মগজ, চর্ম, ফুসফুস- প্রধান চিকিৎসাই হচ্ছে অপারেশন। বিভিন্ন অঙ্গের ক্যান্সার হলে অপারেশনের সময় কতদূর পর্যন্ত কাটতে হবে এবং কী কী অঙ্গ এর অন্তর্ভুক্ত করতে হবে তার নীতিমালা নির্ধারণ করা আছে। যাকে ক্যান্সার সার্জারির ভাষায় বলা হয় অনকোলজিক্যাল প্রিন্সিপালস অব সার্জারি। শুধু ক্যান্সার আক্রান্ত টিস্যু টুকু কেটে ফেলে দিলেই ক্যান্সার অপারেশন যথার্থ হয় না।
ক্যান্সার যে পথ ধরে ছড়িয়ে পড়ে সেই অংশও মূল ক্যান্সারের সঙ্গে কেটে ফেলে দিতে হবে। এর পরেও যদি সন্দেহ থাকে যে ক্যান্সার কোষ সম্ভবতঃ আরও দূরে বিস্তৃতি লাভ করেছে কিন্তু সেই অঙ্গটি কেটে ফেলে দেওয়া সম্ভব নয় তাহলে ক্ষেত্রভেদে কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপি ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এগুলোর চিকিৎসার জন্য মেডিকেল অনকোলজিস্ট ও রেডিয়েশন অনকোলজিস্ট রয়েছে।
রেকটাম ক্যান্সার হলে এর প্রধান চিকিৎসা হচ্ছে জলদি অপারেশন করে ফেলা। এমনকি যদি রোগী আর মাত্র কয়েক মাস বেঁচে থাকবেন বলে মনে হয় তবুও অপারেশন করা উচিত। এতে জীবন ধারণের গুণগত উন্নতি হয়। রোগীর ভোগান্তি অনেকটা লাঘব হয়।
কান্সার চিকিৎসার গুরুত্বপূর্ণ দিক হল- এ অপারেশনের পরে পেটে কলোস্টমি করে ব্যাগ লাগাতে হবে কিনা। রেকটামের খুব গভীরে ক্যান্সার হলে পেটে মলত্যাগের ব্যাগ লাগানোর সাধারণত প্রয়োজন হয় না। কিন্তু রেকটামের নিচের দিকে অর্থাৎ মলদ্বারের খুব কাছাকাছি ক্যান্সার হলে পেটে কলোস্টমি করা বা ব্যাগ লাগানোর সম্ভাবনা বেড়ে যায় এবং কখনও কখনও অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে।
এ ব্যাপারে কৌশলগত সমস্যাটি হচ্ছে ক্যান্সারে আক্রান্ত রেকটামের অংশটুকু কেটে ফেলার পর পরিপাকতন্ত্রের দুটি অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। উপরে থাকে বৃহদান্ত্র এবং নিচে থাকে রেকটাম ও মলদ্বারের অবশিষ্টাংশ। পেলভিস বা তলপেটের গঠনগত বৈশিষ্ট্যের কারণে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া পরিপাকতন্ত্রের দুটি অংশ হাত দিয়ে সেলাই করে জোড়া দেয়া অনেক সময় সম্ভব হয় না।
এজন্য বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন ধরনের স্ট্যাপলিং যন্ত্র বানিয়েছেন যেমন গোলাকার স্ট্যাপলার, লিনিয়ার স্ট্যাপলার, রোটিকুলেটর ইত্যাদি। এসব যন্ত্রের সাহায্যে হাত দিয়ে সেলাই সম্ভব নয় এমনসব ক্ষেত্রে রেকটাম ও বৃহদান্ত্র জোড়া দেয়া সম্ভব। ফলে পেটে স্থায়ীভাবে কলোস্টমি করে ব্যাগ লাগানো দরকার হয় না।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
পায়ুপথে ক্যান্সার বুঝবেন কীভাবে, কী করবেন?
মলদ্বারে বহু জটিল রোগ হয়ে থাকে। কোষ্ঠকাঠিন্য, পাইলস ও ফিস্টুলার সঙ্গে আমরা সমধিক পরিচিত। মলদ্বার দিয়ে রক্ত গেলে আমরা ধরে নিই পাইলস কিংবা ফিস্টুলা হয়েছে।
কিন্তু অনেক সময় মলদ্বারের ক্যান্সার থেকেও এ রকম রক্ত যেতে পারে। এমন লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
মলদ্বারে ক্যান্সারের লক্ষণ ও চিকিৎসা নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন ইডেন মাল্টিকেয়ার হাসপাতালের বৃহদান্ত ও পায়ুপথ সার্জারি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. একেএম ফজলুল হক।
পায়ুপথে ক্যান্সার হলে বিভিন্ন রকম উপসর্গ দেখা দেয়। যেমন- পায়খানার সঙ্গে রক্ত ও মিউকাস বা আম যাওয়া, কিছুদিন পাতলা পায়খানা এবং এরপর কিছুদিন কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়া, মলদ্বারে ব্যথা হওয়া, মল ত্যাগের অভ্যাসে পরিবর্তন, খুব সকালে পায়খানার বেগ হওয়া, মল ত্যাগের পর আরও মল রয়ে গেছে এরূপ অনুভূতি হওয়া ইত্যাদি।
যন্ত্র দিয়ে মলদ্বারের ভেতর পর্যবেক্ষণ করা যেমন- প্রকটস্কপি, সিগময়ডস্কপি, কোলনস্কপি, বেরিয়াম এনেমা পরীক্ষার মাধ্যমে ক্যান্সার শনাক্ত করা হয়। পরীক্ষার মাধ্যমে এসব রোগ আগেভাগে ধরতে পারলে চিকিৎসা সহজ ও কার্যকরী হয়।
অনেক লোকের ধারণা ক্যান্সার অপারেশন না করাই ভালো। অস্ত্রোপচার করলে আরও ছড়িয়ে যায় এবং ক্ষতি হয়। এখন পর্যন্ত সারা পৃথিবীতে বিভিন্ন অঙ্গের ক্যান্সারের, যেমন পরিপাকতন্ত্র, লিভার, অস্থি, মগজ, চর্ম, ফুসফুস- প্রধান চিকিৎসাই হচ্ছে অপারেশন। বিভিন্ন অঙ্গের ক্যান্সার হলে অপারেশনের সময় কতদূর পর্যন্ত কাটতে হবে এবং কী কী অঙ্গ এর অন্তর্ভুক্ত করতে হবে তার নীতিমালা নির্ধারণ করা আছে। যাকে ক্যান্সার সার্জারির ভাষায় বলা হয় অনকোলজিক্যাল প্রিন্সিপালস অব সার্জারি। শুধু ক্যান্সার আক্রান্ত টিস্যু টুকু কেটে ফেলে দিলেই ক্যান্সার অপারেশন যথার্থ হয় না।
ক্যান্সার যে পথ ধরে ছড়িয়ে পড়ে সেই অংশও মূল ক্যান্সারের সঙ্গে কেটে ফেলে দিতে হবে। এর পরেও যদি সন্দেহ থাকে যে ক্যান্সার কোষ সম্ভবতঃ আরও দূরে বিস্তৃতি লাভ করেছে কিন্তু সেই অঙ্গটি কেটে ফেলে দেওয়া সম্ভব নয় তাহলে ক্ষেত্রভেদে কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপি ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এগুলোর চিকিৎসার জন্য মেডিকেল অনকোলজিস্ট ও রেডিয়েশন অনকোলজিস্ট রয়েছে।
রেকটাম ক্যান্সার হলে এর প্রধান চিকিৎসা হচ্ছে জলদি অপারেশন করে ফেলা। এমনকি যদি রোগী আর মাত্র কয়েক মাস বেঁচে থাকবেন বলে মনে হয় তবুও অপারেশন করা উচিত। এতে জীবন ধারণের গুণগত উন্নতি হয়। রোগীর ভোগান্তি অনেকটা লাঘব হয়।
কান্সার চিকিৎসার গুরুত্বপূর্ণ দিক হল- এ অপারেশনের পরে পেটে কলোস্টমি করে ব্যাগ লাগাতে হবে কিনা। রেকটামের খুব গভীরে ক্যান্সার হলে পেটে মলত্যাগের ব্যাগ লাগানোর সাধারণত প্রয়োজন হয় না। কিন্তু রেকটামের নিচের দিকে অর্থাৎ মলদ্বারের খুব কাছাকাছি ক্যান্সার হলে পেটে কলোস্টমি করা বা ব্যাগ লাগানোর সম্ভাবনা বেড়ে যায় এবং কখনও কখনও অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে।
এ ব্যাপারে কৌশলগত সমস্যাটি হচ্ছে ক্যান্সারে আক্রান্ত রেকটামের অংশটুকু কেটে ফেলার পর পরিপাকতন্ত্রের দুটি অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। উপরে থাকে বৃহদান্ত্র এবং নিচে থাকে রেকটাম ও মলদ্বারের অবশিষ্টাংশ। পেলভিস বা তলপেটের গঠনগত বৈশিষ্ট্যের কারণে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া পরিপাকতন্ত্রের দুটি অংশ হাত দিয়ে সেলাই করে জোড়া দেয়া অনেক সময় সম্ভব হয় না।
এজন্য বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন ধরনের স্ট্যাপলিং যন্ত্র বানিয়েছেন যেমন গোলাকার স্ট্যাপলার, লিনিয়ার স্ট্যাপলার, রোটিকুলেটর ইত্যাদি। এসব যন্ত্রের সাহায্যে হাত দিয়ে সেলাই সম্ভব নয় এমনসব ক্ষেত্রে রেকটাম ও বৃহদান্ত্র জোড়া দেয়া সম্ভব। ফলে পেটে স্থায়ীভাবে কলোস্টমি করে ব্যাগ লাগানো দরকার হয় না।