ডলার ও মূল্যস্ফীতিতে চাপ আরও বাড়বে
আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম আবার বাড়তে শুরু করেছে। রোববার প্রতি ব্যারেলের দাম ৯৭ ডলারে উঠেছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় দুশ্চিন্তা বেড়েছে উদ্যোক্তা ও সরকারের। কারণ ডলারের দামের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে আবার জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে। এতে আমদানি খরচ বেড়ে যাবে। একই সঙ্গে ডলারের ওপর চাপও বাড়বে।
এদিকে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত অনুযায়ী আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে দেশের বাজারেও সমন্বয় করতে হবে। তখন দেশে মূল্যস্ফীতির চাপ আরও বাড়বে। এমনিতেই মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি এখনো নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। আগস্টে এ হার ডাবল ডিজিটের কাছাকাছি পৌঁছেছে।
সূত্র জানায়, করোনার সংক্রমণের সময় ২০২০ সালের ২৭ এপ্রিল জ্বালানি তেলের দাম সর্বনিæ পর্যায়ে নামে। ওই সময়ে বিশ্বে লকডাউনের কারণে জ্বালানি তেলের ব্যবহার হ্রাস পাওয়ায় দামও কমেছিল। প্রতি ব্যারেল তেলের দাম ছিল ২০ ডলার। এরপর থেকে দাম কিছুটা বাড়তে থাকে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির শেষদিকে রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ করলে তেলের দাম আবার বাড়তে থাকে। ওই বছরের ১৪ মার্চ বেড়ে সর্বোচ্চ ১২৭ ডলারে ওঠে। এরপর থেকে সামান্য ওঠানামার মধ্য দিয়ে কমতে থাকে। ২২ জুন তা কমে ৭০ ডলারে নামে। এরপর সৌদি আরব জ্বালানি তেল উত্তোলনের পরিমাণ কমিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দেয়।
রাশিয়াও কম দামে জ্বালানি তেল সরবরাহ বন্ধ করে দাম বাড়ানোর কথা বলে। এ থেকে আবার তেলের দাম বাড়তে থাকে। রোববার তা বেড়ে ৯৭ ডলারে ওঠে। অচিরেই তা ১০০ ডলার অতিক্রম করবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। কারণ করোনার ধকল ও বৈশ্বিক মন্দার ধাক্কা কাটিয়ে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আবার বাড়তে শুরু করেছে। এর প্রভাবে জ্বালানি তেলের ব্যবহারও বাড়ছে। এদিকে প্রধান তেল রপ্তানিকারক দেশগুলো এর উৎপাদন কমাচ্ছে। ফলে তেলের বাজারে আবার নতুন করে অস্থিরতার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এতে বাংলাদেশের বাজারেও উদ্বেগ ছড়িয়েছে। কেননা দেশের মোট আমদানির ১৫ থেকে ১৮ শতাংশ জ্বালানি তেল। এছাড়া গ্যাস ও অন্যান্য জ্বালানি মিলে প্রায় ২৫ শতাংশ ব্যয় জ্বালানি খাতে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে অন্যান্য জ্বালানির দামও বাড়তে থাকে। এ কারণে এ খাতে ব্যয় বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এদিকে দেশে ডলার সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। সংকটের কারণে ব্যাংকগুলো এখন বকেয়া জ্বালানি তেলের দাম পরিশোধ করতে পারছে না। এতে অনেক বিদেশি কোম্পানি দেশে জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করার হুমকি দিয়েছে। আগে জ্বালানি তেলের দেনা পরিশোধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ডলার দেওয়া হলেও এখন তা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।
গত বছরের ২২ এপ্রিল জ্বালানি তেলের দাম ১০০ ডলারের নিচে নেমে যায়। এতে তেল আমদানিতেও একটু স্বস্তি ছিল। কারণ তেল আমদানি ব্যয় কমছিল। এখন তেলের দাম বাড়ার কারণে আমদানি ব্যয়ও বাড়বে। এতে ডলার সংকট আরও প্রকট হবে। এমনিতেই আমদানিতে ডলার মিলছে না। তখন সংকটের কারণে ডলারের দাম বাড়ার পাশাপাশি শিল্প খাতের উৎপাদন ব্যয় বাড়বে। তখন মূল্যস্ফীতির হারও বাড়বে, যা মানুষকে আরও ভোগাবে।
এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে তেলের দাম সমন্বয় করার বিষয়ে আইএমএফ-এর শর্ত রয়েছে। সে হিসাবে বাংলাদেশে তেলের দামের চেয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে বেশি। এ কারণে দেশে তেলের দাম বাড়ানোর চাপ আসতে পারে আইএমএফ-এর কাছ থেকে। অক্টোবরের শুরুতেই আইএমএফ-এর টিম আসছে। তখন তারা এর দাম বাড়াতে চাপ দিতে পারে।
এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, গত অর্থবছরে জ্বালানি তেল আমদানি বাবদ প্রায় ৯৫০ কোটি ডলারের বেশি খরচ হয়েছে। এর মধ্যে অনেক দেনার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। যেগুলো পরিশোধ করা হয়নি। এর আগের অর্থবছরে খরচ হয়েছিল ৮০০ কোটি ডলার।
ডলার ও মূল্যস্ফীতিতে চাপ আরও বাড়বে
যুগান্তর প্রতিবেদন
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২৩:৩৫:৩২ | অনলাইন সংস্করণ
আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম আবার বাড়তে শুরু করেছে। রোববার প্রতি ব্যারেলের দাম ৯৭ ডলারে উঠেছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় দুশ্চিন্তা বেড়েছে উদ্যোক্তা ও সরকারের। কারণ ডলারের দামের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে আবার জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে। এতে আমদানি খরচ বেড়ে যাবে। একই সঙ্গে ডলারের ওপর চাপও বাড়বে।
এদিকে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত অনুযায়ী আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে দেশের বাজারেও সমন্বয় করতে হবে। তখন দেশে মূল্যস্ফীতির চাপ আরও বাড়বে। এমনিতেই মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি এখনো নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। আগস্টে এ হার ডাবল ডিজিটের কাছাকাছি পৌঁছেছে।
সূত্র জানায়, করোনার সংক্রমণের সময় ২০২০ সালের ২৭ এপ্রিল জ্বালানি তেলের দাম সর্বনিæ পর্যায়ে নামে। ওই সময়ে বিশ্বে লকডাউনের কারণে জ্বালানি তেলের ব্যবহার হ্রাস পাওয়ায় দামও কমেছিল। প্রতি ব্যারেল তেলের দাম ছিল ২০ ডলার। এরপর থেকে দাম কিছুটা বাড়তে থাকে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির শেষদিকে রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ করলে তেলের দাম আবার বাড়তে থাকে। ওই বছরের ১৪ মার্চ বেড়ে সর্বোচ্চ ১২৭ ডলারে ওঠে। এরপর থেকে সামান্য ওঠানামার মধ্য দিয়ে কমতে থাকে। ২২ জুন তা কমে ৭০ ডলারে নামে। এরপর সৌদি আরব জ্বালানি তেল উত্তোলনের পরিমাণ কমিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দেয়।
রাশিয়াও কম দামে জ্বালানি তেল সরবরাহ বন্ধ করে দাম বাড়ানোর কথা বলে। এ থেকে আবার তেলের দাম বাড়তে থাকে। রোববার তা বেড়ে ৯৭ ডলারে ওঠে। অচিরেই তা ১০০ ডলার অতিক্রম করবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। কারণ করোনার ধকল ও বৈশ্বিক মন্দার ধাক্কা কাটিয়ে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আবার বাড়তে শুরু করেছে। এর প্রভাবে জ্বালানি তেলের ব্যবহারও বাড়ছে। এদিকে প্রধান তেল রপ্তানিকারক দেশগুলো এর উৎপাদন কমাচ্ছে। ফলে তেলের বাজারে আবার নতুন করে অস্থিরতার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এতে বাংলাদেশের বাজারেও উদ্বেগ ছড়িয়েছে। কেননা দেশের মোট আমদানির ১৫ থেকে ১৮ শতাংশ জ্বালানি তেল। এছাড়া গ্যাস ও অন্যান্য জ্বালানি মিলে প্রায় ২৫ শতাংশ ব্যয় জ্বালানি খাতে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে অন্যান্য জ্বালানির দামও বাড়তে থাকে। এ কারণে এ খাতে ব্যয় বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এদিকে দেশে ডলার সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। সংকটের কারণে ব্যাংকগুলো এখন বকেয়া জ্বালানি তেলের দাম পরিশোধ করতে পারছে না। এতে অনেক বিদেশি কোম্পানি দেশে জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করার হুমকি দিয়েছে। আগে জ্বালানি তেলের দেনা পরিশোধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ডলার দেওয়া হলেও এখন তা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।
গত বছরের ২২ এপ্রিল জ্বালানি তেলের দাম ১০০ ডলারের নিচে নেমে যায়। এতে তেল আমদানিতেও একটু স্বস্তি ছিল। কারণ তেল আমদানি ব্যয় কমছিল। এখন তেলের দাম বাড়ার কারণে আমদানি ব্যয়ও বাড়বে। এতে ডলার সংকট আরও প্রকট হবে। এমনিতেই আমদানিতে ডলার মিলছে না। তখন সংকটের কারণে ডলারের দাম বাড়ার পাশাপাশি শিল্প খাতের উৎপাদন ব্যয় বাড়বে। তখন মূল্যস্ফীতির হারও বাড়বে, যা মানুষকে আরও ভোগাবে।
এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে তেলের দাম সমন্বয় করার বিষয়ে আইএমএফ-এর শর্ত রয়েছে। সে হিসাবে বাংলাদেশে তেলের দামের চেয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে বেশি। এ কারণে দেশে তেলের দাম বাড়ানোর চাপ আসতে পারে আইএমএফ-এর কাছ থেকে। অক্টোবরের শুরুতেই আইএমএফ-এর টিম আসছে। তখন তারা এর দাম বাড়াতে চাপ দিতে পারে।
এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, গত অর্থবছরে জ্বালানি তেল আমদানি বাবদ প্রায় ৯৫০ কোটি ডলারের বেশি খরচ হয়েছে। এর মধ্যে অনেক দেনার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। যেগুলো পরিশোধ করা হয়নি। এর আগের অর্থবছরে খরচ হয়েছিল ৮০০ কোটি ডলার।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by The Daily Jugantor © 2023