ইউক্রেন বিষয়ে লন্ডন সম্মেলন
সংঘাত নয়, শান্তি কাম্য

সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৪ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

রোববার ইউক্রেন সংকট নিয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির উপস্থিতিতে যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনের ল্যাংকেস্টার হাউজে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ইউক্রেনের পক্ষে যুদ্ধ চলাকালে সামরিক সহায়তা অব্যাহত রাখাসহ চারটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের বিষয়ে বিশ্বনেতারা একমত হয়েছেন। পাশাপাশি রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার জন্য ইউক্রেনকে ১৬০ কোটি পাউন্ড দেওয়ার ঘোষণাও এসেছে।
সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে জেলেনস্কির উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ের পর স্বভাবতই ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। কারণ, দেশটিতে রাশিয়ার আক্রমণের পর যুক্তরাষ্ট্রই ছিল কিয়েভের বড় ভরসা। বিগত বাইডেন প্রশাসন জেলেনস্কির আহ্বানে সাড়া দিতে কার্পণ্য না করলেও গোল বাধে ট্রাম্প আমেরিকার ক্ষমতায় আসার পর। যুদ্ধের চেয়ে অর্থকে প্রাধান্য দেওয়া এই দুঁদে ব্যবসায়ী লাভ ছাড়া আর জেলেনস্কিকে সাহায্য করতে রাজি নন। অবশ্য রাশিয়াকে ঠেকাতে জেলেনস্কির পাশে শুধু যে আমেরিকা ছিল, তা নয়। ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোও ইউক্রেনকে যথাসাধ্য সহযোগিতা করে আসছে। তবে হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প ও জেলেনস্কির বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়া, এর জের ধরে জেলেনস্কিকে হোয়াইট হাউস থেকে চলে যেতে বলা-সব মিলিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের এহেন আচরণ ভালো চোখে দেখেনি ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো। বরং যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের ওপর দাঁড়িয়ে পুতিনের সঙ্গে কোনো আপস না করার যে দৃঢ় মনোভাব জেলেনস্কি দেখিয়েছেন, ইউরোপীয় নেতাদের তা মুগ্ধ করেছে।
তবে ভুলে গেলে চলবে না, যুদ্ধ কখনোই ধ্বংস ছাড়া কল্যাণ ডেকে আনে না। জো বাইডেনের পরামর্শে ন্যাটোভুক্ত হওয়া নিয়ে যে জটিলতায় জেলেনস্কি তার দেশকে ফেলেছেন, তার মূল্য চুকাতে গিয়ে খুইয়েছেন অনেক। জানমালের ক্ষয়ক্ষতি তো হয়েছেই, হারাতে হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ বন্দরসহ ইউক্রেনের বিশাল অংশ। শুধু সহযোগিতার ওপর ভিত্তি করে লড়ে যাওয়া ইউক্রেনীয়রাও জানে, জয় যদি ভাগ্যে থাকেও, যা তারা হারিয়েছেন, তা আর ফিরে আসবে না। আমরাও মনে করি, সভ্যতা ও মানবতার স্বার্থে অবিলম্বে এ যুদ্ধ বন্ধ হওয়া জরুরি। হিংসার বদলে হিংসা, রক্তের বদলে রক্তের স্বাদ নিতে গিয়ে দুপক্ষ যে হোলিখেলায় মেতেছে, করোনা-পরবর্তী বিশ্বকেও এর জের টানতে হয়েছে, এখনো হচ্ছে। বলা বাহুল্য, ইউরোপের নেতারা যেভাবে জেলেনস্কির পাশে দাঁড়িয়েছেন, তা সাধুবাদযোগ্য। তবে সংঘাতকে আর উসকে দিতে নয়, বরং বিশ্বনেতারা কীভাবে এ যুদ্ধের সমাপ্তি টানা যায়, সেদিকেই মনোযোগী হবেন, এটাই প্রত্যাশা।