Logo
Logo
×

সম্পাদকীয়

না, কোনো শোকগাথা নয়

বিচারহীনতার সংস্কৃতির অবসান হতেই হবে

Icon

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ১৫ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

না, কোনো শোকগাথা নয়

ফাইল ছবি

ছোট্ট শরীরে নরপশুদের লালসার একরাশ যন্ত্রণা নিয়ে টানা হাসপাতালের বিছানায় ২০৪ ঘণ্টা জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করে অবশেষে হেরে যেতে হয়েছে মাগুরার নিষ্পাপ শিশু আছিয়াকে। চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ চেষ্টা, দেশবাসীর প্রার্থনা-সবকিছুকে ব্যর্থ করে বৃহস্পতিবার জীবন ও জগৎকে দেখার আগেই তাকে মানুষের অবর্ণনীয় নির্মমতা প্রত্যক্ষ করে চলে যেতে হলো এই পৃথিবী ছেড়ে। শিশুটি চলে গেল; কিন্তু আমাদের কাছে একটি বড় প্রশ্ন সে ছুড়ে দিয়ে গেল-আমাদের সমাজ নারী ও শিশুর নিরাপত্তা দিতে কি আসলেই পেরেছে? নাকি এ বিষয়ে আমরা চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ? মাগুরার এই শিশুটির মতো মানুষরূপী অমানুষদের হাতে অতীতে অসংখ্য শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে, জীবন দিয়েছে; কিন্তু এ সমাজ তা রুখতে ব্যর্থ হয়েছে বারবার। শিশুটির মৃত্যুতে খুব স্বাভাবিকভাবেই আমরা শোকাহত ও বিক্ষুব্ধ। কিন্তু এ ঘটনা থেকে কি আমরা শিক্ষা নেব? নাকি বরাবরের মতো রুটিন শোক ও নিন্দা জানিয়ে দায় সেরে অপেক্ষায় থাকব নতুন কোনো শিশু ধর্ষণের ঘটনার?

সমাজে নারী ও শিশু ধর্ষণের ঘটনা যে হারে বাড়ছে, তাতে একে শুধু ‘উদ্বেগজনক’ বিশেষণ দিয়ে দায় সারলে হবে না। এটা যে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সামাজিক উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার পথে বড় ধরনের অন্তরায়, তা অনুধাবন করতে হবে। অতীতে নারী ও শিশু ধর্ষণের যেসব ঘটনা ঘটেছে, সেগুলোর সত্যিকারের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে পারলে এমন দৃশ্য আজ যে দেখতে হতো না, তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু আমরা তা পারিনি। বিচারের দীর্ঘসূত্রতা, আইনের ফাঁক গলে অপরাধীর বের হয়ে যাওয়া, নির্যাতিতার দিকে উলটো সমাজের অভিযোগের তির ছোড়ার মতো কাজ এ ধরনের অপরাধকে আরও উসকে দিয়েছে। তবে আর নয়, শিশু আছিয়ার মৃত্যুর শোকে মুহ্যমান হওয়ার বদলে একে যদি যৌক্তিক শক্তিতে পরিণত করে নারী ও শিশুর প্রতি বিদ্বেষমূলক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আচরণ বদলাতে পারি, ভুক্তভোগীদের আইনি সুরক্ষা দিতে পারি, তাহলেই ভবিষ্যতে এমন মর্মান্তিক ট্র্যাজেডি প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে বলে মনে করি আমরা। এ জন্য প্রত্যেক নাগরিককেই এগিয়ে আসতে হবে।

সাধারণত সমাজে কোনো অপকর্ম ঘটে গেলে তার দায় রাষ্ট্রের দায়িত্বরতদের দেওয়ার প্রবণতা আমাদের মধ্যে দেখা যায়। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না, ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে হলে সবাইকেই দায়িত্ব নিতে হয়, তবে সেই দায়িত্ব আইন নিজ হাতে তুলে নেওয়া নয়, বরং আইনকে শ্রদ্ধা করে তা মেনে চলা, নিজে সচেতন থাকা, পাশের মানুষটি যেন সচেতন হন সে ব্যাপারে তাকে সহযোগিতা করা। তবে রাষ্ট্রের যে দায়, সেটিকেও অগ্রাহ্য করার উপায় নেই। শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে সরকারকে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে শুধু কাজ করলেই হবে না, এর ব্যত্যয় ঘটলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্রুত তৎপরতাও আমরা দেখতে চাই। দেখতে চাই সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দ্রুত বিচার। দেখতে চাই অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত হওয়া। এতদিন ধরে ধর্ষকদের বিরুদ্ধে বিচারহীনতার যে নজির সমাজে রয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার এর অবসান ঘটিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে, এটাই প্রত্যাশা।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম