ইসলামের টানে অভিনয় ছেড়েছিলেন প্রয়াত নায়ক শাহীন আলম
বিনোদন ডেস্ক
০৯ মার্চ ২০২১, ০০:৫৬:২৯ | অনলাইন সংস্করণ
ইসলাম ধর্মের অনুশাসন পুরোপুরি পালন করতে হঠাৎ চলচ্চিত্রে অভিনয়কে বিদায় জানিয়েছিলেন সদ্য প্রয়াত অভিনেতা শাহীন আলম।
মৃত্যুর কয়েকমাস আগে একটি ইউটিউব চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানিয়েছিলেন এ চিত্রনায়ক।
বেশ কয়েকবছর কিডনি জটিলতায় ভুগে সোমবার রাতে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান এই অভিনেতা।
করোনাকালীন সময়ে কঠিন অর্থ সংকটে পড়েছিলেন তিনি। উপার্জনের একমাত্র পথ কাপড়ের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানটি বন্ধ থাকায় সংসারের সদস্যদের খাবার জোগাড় করতেই অসমর্থ হয়ে পড়েন। এর সঙ্গে যুক্ত হয় সপ্তাহে একদিন ডায়ালোসিসসহ ওষুধপত্রের খরচ।
অথচ ঢাকাই সিনেমায় বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার ছিল তার। অভিনয় করে দুহাতে কামিয়েছেন টাকা। ২৭ বছরের অভিনয়ের ক্যারিয়ারে দেড়শোর বেশি সিনেমায় অভিনয় করেছেন।
রূপালি জগতের বিত্তবৈভব ছেড়ে হঠাৎ ধর্মে কেন ও কীভাবে মনোযোগী হলেন শাহীন আলম?
ইউটিউব চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শাহীন আলম বলেন, আমি তো মুসলমান। পরকালে বিশ্বাসী। আমাকে একদিন না একদিন ওই সর্বশক্তিমানের কাছে ফিরতেই হবে। তখন কী জবাব দেব? একটা মানুষ কত দিন বাঁচে? ধরুন খুব বেশি হলে ১০০ বছর বাঁচব। এরপর তো আল্লাহর কাছে গিয়ে জবাবদিহি করতে হবে। তাই আমি বলব, আগে পরকালের হিসাবের খাতাটা ঠিক রাখতে হবে। এসব বিবেচনা করেই সিনেমা থেকে সরে এসেছি। আস্তে আস্তে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছি।
অথচ এক সময় এই শাহীন আলমের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বয়েছিল অভিনয়ের নেশা।
সিনেমাজগত থেকে সরে আসার আরো তিনটি কারণ জানিয়েছিলেন শাহীন আলম।
বলেছিলেন, ঢাকাই ছবিতে যখন অশ্লীলতা মহামারী আকার ধারণ করে আর সিনেমাজগতটা নির্মাতার হাতছাড়া হয়ে প্রযোজকদের হাতে চলে যায়, তখন আর অভিনয় চালিয়ে যেতে পারছিলাম না। আমাকে অশ্লীল দৃশ্যে অভিনয়ের জন্য চাপ দেওয়া হতো। আমি রাজি না হলে পরে দেখতাম কাটপিস জুড়ে দেওয়া হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আমার বড়ভাই হজ পালন করে এসে আমাকে অনুরোধ করেন, সিনেমাজগত ছেড়ে দিতে। আমিও পরে উপলব্ধি করি আর কতো। সিনেমা থেকে নিজেকে গুটিয়ে পারিবারিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানটি দেখাশোনা শুরু করি।
শাহীন আলমের রূপালি পর্দাকে আর না বলার পেছনে আরও একটি ঘটনা জড়িয়ে আছে।
সেটা হলো, তার প্রাণের চেয়ে প্রিয় মেয়ের আত্মহত্যার ঘটনা।
এসএসসি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল না করলে শাহীন আলমের একমাত্র মেয়ে আত্মহত্যা করে। ওই ঘটনার পর পরই বদলে যেতে থাকেন তিনি। নামাজ আদায়ে মনোযোগী হন। আমূল পরিবর্তন ঘটে তার।
উল্লেখ্য, মঞ্চনাটকের মাধ্যমে অভিনয়ের শুরু করেন শাহীন আলম। ১৯৮৬ সালের এফডিসির নতুন মুখের সন্ধানের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পান। তার প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ‘মায়ের কান্না’, যেটি ১৯৯১ সালে মুক্তি পেয়েছিল। যদিও গোয়েন্দা কাহিনি 'মাসুদ রানা' দিয়ে অভিনয় জগতে পা রাখার কথা ছিল তার। অর্থ সংকটে পড়ে বিগবাজেটের ছবিটি ৩০ শতাংশ কাজ হওয়ার পর বন্ধ হয়ে যায়। তবে 'নয়া বাইদানি' ছবিতে অভিনয়ের পর শাহীন আলমকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
তবে 'স্বপ্নের নায়ক’ ছবিতে অমর নায়ক সালমান শাহর সঙ্গে অভিনয় করে বেশি আলোচনায় আসেন এ চিত্রনায়ক।
ক্যারিয়ারে দেড়শোর বেশি ছবিতে অভিনয় করা এ চিত্রনায়কের অন্যতম ছবিগুলো হচ্ছে - অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে- ঘাটের মাঝি, এক পলকে, গরিবের সংসার, তেজী, চাঁদাবাজ, প্রেম প্রতিশোধ, টাইগার, রাগ-অনুরাগ, দাগী সন্তান, বাঘা-বাঘিনী, আলিফ লায়লা, স্বপ্নের নায়ক, আঞ্জুমান, অজানা শত্রু, দেশদ্রোহী, প্রেম দিওয়ানা, আমার মা, পাগলা বাবুল, শক্তির লড়াই, দলপতি, পাপী সন্তান, ঢাকাইয়া মাস্তান, বিগবস, বাবা ও বাঘের বাচ্চা।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৪০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
ইসলামের টানে অভিনয় ছেড়েছিলেন প্রয়াত নায়ক শাহীন আলম
ইসলাম ধর্মের অনুশাসন পুরোপুরি পালন করতে হঠাৎ চলচ্চিত্রে অভিনয়কে বিদায় জানিয়েছিলেন সদ্য প্রয়াত অভিনেতা শাহীন আলম।
মৃত্যুর কয়েকমাস আগে একটি ইউটিউব চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানিয়েছিলেন এ চিত্রনায়ক।
বেশ কয়েকবছর কিডনি জটিলতায় ভুগে সোমবার রাতে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান এই অভিনেতা।
করোনাকালীন সময়ে কঠিন অর্থ সংকটে পড়েছিলেন তিনি। উপার্জনের একমাত্র পথ কাপড়ের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানটি বন্ধ থাকায় সংসারের সদস্যদের খাবার জোগাড় করতেই অসমর্থ হয়ে পড়েন। এর সঙ্গে যুক্ত হয় সপ্তাহে একদিন ডায়ালোসিসসহ ওষুধপত্রের খরচ।
অথচ ঢাকাই সিনেমায় বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার ছিল তার। অভিনয় করে দুহাতে কামিয়েছেন টাকা। ২৭ বছরের অভিনয়ের ক্যারিয়ারে দেড়শোর বেশি সিনেমায় অভিনয় করেছেন।
রূপালি জগতের বিত্তবৈভব ছেড়ে হঠাৎ ধর্মে কেন ও কীভাবে মনোযোগী হলেন শাহীন আলম?
ইউটিউব চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শাহীন আলম বলেন, আমি তো মুসলমান। পরকালে বিশ্বাসী। আমাকে একদিন না একদিন ওই সর্বশক্তিমানের কাছে ফিরতেই হবে। তখন কী জবাব দেব? একটা মানুষ কত দিন বাঁচে? ধরুন খুব বেশি হলে ১০০ বছর বাঁচব। এরপর তো আল্লাহর কাছে গিয়ে জবাবদিহি করতে হবে। তাই আমি বলব, আগে পরকালের হিসাবের খাতাটা ঠিক রাখতে হবে। এসব বিবেচনা করেই সিনেমা থেকে সরে এসেছি। আস্তে আস্তে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছি।
অথচ এক সময় এই শাহীন আলমের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বয়েছিল অভিনয়ের নেশা।
সিনেমাজগত থেকে সরে আসার আরো তিনটি কারণ জানিয়েছিলেন শাহীন আলম।
বলেছিলেন, ঢাকাই ছবিতে যখন অশ্লীলতা মহামারী আকার ধারণ করে আর সিনেমাজগতটা নির্মাতার হাতছাড়া হয়ে প্রযোজকদের হাতে চলে যায়, তখন আর অভিনয় চালিয়ে যেতে পারছিলাম না। আমাকে অশ্লীল দৃশ্যে অভিনয়ের জন্য চাপ দেওয়া হতো। আমি রাজি না হলে পরে দেখতাম কাটপিস জুড়ে দেওয়া হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আমার বড়ভাই হজ পালন করে এসে আমাকে অনুরোধ করেন, সিনেমাজগত ছেড়ে দিতে। আমিও পরে উপলব্ধি করি আর কতো। সিনেমা থেকে নিজেকে গুটিয়ে পারিবারিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানটি দেখাশোনা শুরু করি।
শাহীন আলমের রূপালি পর্দাকে আর না বলার পেছনে আরও একটি ঘটনা জড়িয়ে আছে।
সেটা হলো, তার প্রাণের চেয়ে প্রিয় মেয়ের আত্মহত্যার ঘটনা।
এসএসসি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল না করলে শাহীন আলমের একমাত্র মেয়ে আত্মহত্যা করে। ওই ঘটনার পর পরই বদলে যেতে থাকেন তিনি। নামাজ আদায়ে মনোযোগী হন। আমূল পরিবর্তন ঘটে তার।
উল্লেখ্য, মঞ্চনাটকের মাধ্যমে অভিনয়ের শুরু করেন শাহীন আলম। ১৯৮৬ সালের এফডিসির নতুন মুখের সন্ধানের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পান। তার প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ‘মায়ের কান্না’, যেটি ১৯৯১ সালে মুক্তি পেয়েছিল। যদিও গোয়েন্দা কাহিনি 'মাসুদ রানা' দিয়ে অভিনয় জগতে পা রাখার কথা ছিল তার। অর্থ সংকটে পড়ে বিগবাজেটের ছবিটি ৩০ শতাংশ কাজ হওয়ার পর বন্ধ হয়ে যায়। তবে 'নয়া বাইদানি' ছবিতে অভিনয়ের পর শাহীন আলমকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
তবে 'স্বপ্নের নায়ক’ ছবিতে অমর নায়ক সালমান শাহর সঙ্গে অভিনয় করে বেশি আলোচনায় আসেন এ চিত্রনায়ক।
ক্যারিয়ারে দেড়শোর বেশি ছবিতে অভিনয় করা এ চিত্রনায়কের অন্যতম ছবিগুলো হচ্ছে - অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে- ঘাটের মাঝি, এক পলকে, গরিবের সংসার, তেজী, চাঁদাবাজ, প্রেম প্রতিশোধ, টাইগার, রাগ-অনুরাগ, দাগী সন্তান, বাঘা-বাঘিনী, আলিফ লায়লা, স্বপ্নের নায়ক, আঞ্জুমান, অজানা শত্রু, দেশদ্রোহী, প্রেম দিওয়ানা, আমার মা, পাগলা বাবুল, শক্তির লড়াই, দলপতি, পাপী সন্তান, ঢাকাইয়া মাস্তান, বিগবস, বাবা ও বাঘের বাচ্চা।