মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিসহ ২৪ অবৈধ অভিবাসী গ্রেফতার
আহমাদুল কবির, কুয়ালালামপুর থেকে
প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০৯ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
‘বাবু,
দেশে ফেরার টাকাই নেই’ নরম স্বরে
এমন কথাই বলছিলেন ৪০
বছর বয়সী এক ইন্দোনেশীয়
নারী, যিনি কুয়ালালামপুরে অবৈধভাবে
বসবাসের অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন। অভিবাসন কর্মকর্তারা জিজ্ঞেস করেছিলেন কেন তিনি দেশে
ফিরে যাচ্ছেন না — উত্তরে এভাবেই
জানান তার অসহায়ত্বের কথা।
নারীটির
ভাষায়, ‘দেশে কাজ পাওয়া
কঠিন। তাই কয়েক বছর
আগে বৈধভাবে মালয়েশিয়ায় এসেছিলাম। পাসপোর্ট ছিল, কাজও পেয়েছিলাম
পরিচ্ছন্ন কর্মী হিসেবে। এখন মাসে প্রায়
১,৪০০ রিঙ্গিত আয়
করি, এর মধ্যে ৫০০
থেকে ৬০০ রিঙ্গিত দেশে
পাঠাতে পারি।’
কিন্তু
বৈধতার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও
দেশে না ফিরে রাজধানীর
উপকণ্ঠে এক চারতলা ভবনের
আড়ালে ছোট্ট কক্ষে লুকিয়ে বসবাস করছেন তিনি।
‘আমি
আরেকজন সহকর্মীর সঙ্গে থাকি, সেও ইন্দোনেশিয়া থেকে
এসেছে। আমরা একই গ্রামের
না, কিন্তু একই জায়গায় কাজ
করি,’ বলেন ওই নারী,
কণ্ঠে হতাশার ছোঁয়া।
শনিবার
(১১ অক্টোবর) ভোর রাতে উলু
ক্লাংয়ের জালান পেরমাতা এলাকায় একটি বাণিজ্যিক ভবনে
অভিযান চালায় মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগ। এ সময় ৩৯
জন বিদেশি ও স্থানীয় নাগরিককে
তল্লাশি করে ২৪ জন
অবৈধ অভিবাসীকে গ্রেফতার করা হয়।
কুয়ালালামপুর
ইমিগ্রেশন বিভাগের পরিচালক ওয়ান মোহাম্মদ সাউপি ওয়ান ইউসফ জানান, ‘জনগণের
অভিযোগের ভিত্তিতে রাত ১টার দিকে
অভিযান শুরু হয়। মোট
৩৯ জনকে যাচাই করা
হয়—এর মধ্যে ১০
জন স্থানীয়, ২৬ জন ইন্দোনেশীয়,
৩ জন বাংলাদেশি, ১
জন পাকিস্তানি ও ৫ জন
নেপালি।’
তিনি
আরও বলেন, ‘অবৈধভাবে বসবাসের অভিযোগে ২৪ জনকে গ্রেফতার
করা হয়েছে, যাদের মধ্যে ১৩ জন পুরুষ
ও ১১ জন নারী।
গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ১৮ জন ইন্দোনেশীয়,
৩ জন বাংলাদেশি ও
৫ জন নেপালি।’ ইমিগ্রেশন
আইন ১৯৫৯/৬৩-এর
১৫(১)(সি) ও
৬(১)(সি) ধারায়
গ্রেফতার করা হয়েছে বলে
জানিয়েছেন তিনি।
মালয়েশিয়ায়
হাজার হাজার নিম্ন আয়ের বিদেশি শ্রমিক
বৈধ ভিসার মেয়াদ শেষ হলেও অর্থের
অভাবে দেশে ফিরতে পারছেন
না। অনেকে স্থানীয়দের কাছ থেকে কাজ
পেয়ে অবৈধভাবে থেকেও সংসার চালানোর চেষ্টা করেন।
বিশেষজ্ঞরা
বলছেন, অবৈধ অবস্থায় থাকা
এসব অভিবাসী মানবিক ঝুঁকি, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা সমস্যায়
পড়ছেন। তাদের পুনর্বাসন বা দেশে ফেরাতে
সহানুভূতিশীল উদ্যোগ জরুরি।
এক ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা বলেন, ‘বেশিরভাগ অবৈধ অভিবাসী ফেরার
ইচ্ছে রাখেন, কিন্তু হাতে টাকা নেই।
এই দারিদ্র্যই তাদের অবৈধ অবস্থায় বেঁধে
রাখে।’
অভিযানে
আটক ওই ইন্দোনেশীয় নারীর
মুখের কথা যেন মালয়েশিয়ায়
অবৈধভাবে থাকা হাজারো বিদেশি
শ্রমিকের বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি—‘বাবু, দেশে ফিরতে টাকাই
নেই...’
