মার্কিন নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত গণতন্ত্রের জয় হবে
রহমান মৃধা, সুইডেন থেকে
০৭ নভেম্বর ২০২০, ১২:১৭:৫৭ | অনলাইন সংস্করণ
আমেরিকা একটি মজার দেশ। সেখানে চলছে জাতীয় নির্বাচন। দেশটি আমার কাছে হাইটেক লো টাচ আবার লোটেক হাই টাচ। সেটা আবার কী? আমেরিকা রকেট পাঠিয়ে দিতে পারে মহাশূন্যে অথচ জনগণ ভোট দিতে গিয়ে হিমসিম খায় বার বার।
সেখানে পোস্টাল ভোটের ব্যবস্থা থাকা সত্বেও বর্তমান প্রেসিডেন্ট এই ব্যবস্থার ওপর আস্থা হারিয়েছে। গোটা বিশ্ব অস্থির হয়ে আছে কে জিতবে। গণতন্ত্রের ব্যাখ্যা যতটা সহজ বলে মনে হয় আসলে তা নয়। কারণ এটা সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে অনেক তন্ত্র-মন্ত্রের প্রয়োজন হয়।
ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আমি বিশ বছর আগে থেকে ফলো করে আসছি বিশেষ করে তার ম্যানেজমেন্ট স্টাইল। তিনি অন্যান্য রাজনীতিবিদদের মত নয়, এসেছেন ইন্ডাস্ট্রিয়াল ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে। মিডিয়ার খবর দেখলে মনে হয় কেউ তাকে পছন্দ করে না। রিপাবলিকানরা প্রথমবার না হয় ভুল করে তাকে পার্টি থেকে নমিনেশন দিয়েছিল, কিন্তু এবার?
এবারের নির্বাচন প্রমাণ করবে দেশটির রাজনৈতিক ব্যবস্থার শক্তিমত্তা। এর থেকে শিক্ষণীয় বিষয় হবে যদি কোন দেশে প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী থাকে, ব্যবস্থা যথাযথভাবে কাজ করে এবং জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যায়, কোন অশুভ শক্তিই সেখানে স্থায়ী হতে পারে না।
এই নির্বাচন আশা জাগাবে গোটা পৃথিবীজুড়ে। পৃথিবীর মানুষ স্বাধীনতা, মানবাধিকার, আইনের শাসন আর গণতান্ত্রিক ধারার পক্ষে নতুন করে সোচ্চার হবে। আমেরিকার নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত জনগণ এবং গণতন্ত্রের জয় হবে।
আমার কাছে বিষয়টি পরিষ্কার তা হলো, একটি দেশের জনপ্রতিনিধিরাই সে দেশের জনগণের প্রতিচ্ছবি। বিশ্বের অনেককেই আমরা পছন্দ করি না, কিন্তু তাদের নিজ দেশে তাদের জনপ্রিয়তার অভাব নেই। আমাদের ব্যক্তিগত জীবনেও প্রতিদিন বিভিন্ন পছন্দ এবং অপছন্দের ওপর ঘটনা প্রবাহ বয়ে চলছে।
হয়ত চুপচাপ বসে ভাবছেন। এমন সময় আপনার পরিচিত এক হিতাকাঙ্খী এসে বলবে সমস্যায় পড়েছেন? মন খারাপ? চিন্তা করবেন না, সব ঠিক হয়ে যাবে ইত্যাদি। এ কথাগুলো বলা সত্বেও ঠিক সেটাই আমরা সবাই করি। কেউ মারা গেছে শতভাগ মন খারাপ বা চিন্তা করেও কোন লাভ হবে না সত্বেও আমরা মন খারাপ করি।
ছোটবেলা আমি বেশ মন খারাপ করতাম মার কাছ থেকে আদর বা কিছু পেতে। না পেলে খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিতাম। মা অনেক অনুরোধ করতেন কিন্তু কিছুতেই খাইনি। কারণ যে বায়না ধরেছি সেটা তখনও পূরণ হয়নি। অনেক সময় দেখা গেছে মা খেতে আর ডাকছেন না। তার জন্য রাগের মাত্রা আরও বেড়ে যেত। পরে কাগজে বড় অক্ষরে লিখে দরজায় টানিয়ে রেখেছি ‘আরেকবার সাধিলেই খাইব।’
এই মূহুর্তে ছোটবেলার বিষয়গুলো নিয়ে ভাবছি কারণ তখন মন খারাপ হয়েছে যেমনটি এখনও হয়। আমরা কখনও বলি না মন খারাপ কর বা কান্না এলে কাঁদো ইত্যাদি। আমরা বরং বলি কাঁদবে না বা মন খারাপ করবে না। তাতে কি মন খারাপ বা কান্না থেকে আমরা বিরত থেকেছি?
একটি জিনিস ভালোভাবে শিখতে হবে সেটা হচ্ছে যখন মন খারাপ হয় কী করণীয় হতে পারে তখন। প্রথমে যে কাজটি করতে হবে তা হলো ভাবা। মন খারাপ করলে সমস্যার সমাধান হবে কি? অনেকেই বলবে মনের ওপর আমাদের কোন দখল নেই সেক্ষেত্রে কীভাবে সম্ভব তাকে নিয়ন্ত্রণ করা?
যুগে যুগে যারা নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছে তারাই জয়ী হয়েছে। প্রত্যেকটি পরাজয়কে শিক্ষণীয় হিসাবে মেনে নিতে হবে। স্রোত বিহীন নদী বিলীন হয়ে যায়। শরীরে যখন ফ্যাট জমে রক্তের গতি কমিয়ে দেয় যার ফলে স্ট্রোক করে এবং শেষে মৃত্যু হয়। প্রতিনিয়ত খারাপ চিন্তা আমাদের মনের ওপর নেগেটিভ প্রভাব ফেলে। শেষে মানসিক অসুস্থতার সৃষ্টি করে। এটা আমাদের জীবনকে তিলে তিলে ধ্বংস করে দেয়।
সমস্যা ছাড়া জীবন থাকতে পারে না। জীবনে ব্যর্থতা বলে কিছু নেই এটা যদি কেউ মনে করে সেটা ভুল। বরং মনে করতে হবে সমস্যা, বিপদ-আপদ এসব বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে ভালোমন্দ যাই ঘটুক না কেন তাকে অ্যাডজাস্ট করে চলতে হবে। অনেক সমস্যা সমাধান করার চেয়ে তা কাটিয়ে ওঠা বেশ কঠিন। আমাদের কঠিন সময় পার করাকে সাফল্য হিসাবে মনের মধ্যে ধরে রাখার সাহস এবং দক্ষতা অর্জন করা শিখতে হবে।
বিপদ, পরাজয় এসব মনকে খারাপ করে। যা পাই তা চাই না, যা চাই তা পাই না। এ চিন্তা মন থেকে দূর করতে হবে। অন্ধকার আছে বলেই আমরা আলো দেখি। সাফল্য মনকে ভালো করে।
মনে রাখতে হবে প্রতিদিন যা ঘটে এসব বেঁচে থাকার চাবিকাঠি, হোক না তা পজিটিভ বা নেগেটিভ। জীবনের গতিকে থামানো যাবে না, তা নিয়ন্ত্রণ করা শিখতে হবে। আমাদের ইচ্ছাশক্তির চেয়ে বড় কিছু নেই। সেটা যদি মজবুত থাকে তবে শেষ পর্যন্ত মানবতার জয় আর দানবের পরাজয় হবেই।
লেখক: রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক (প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট), ফাইজার, সুইডেন থেকে, [email protected]
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৪০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
মার্কিন নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত গণতন্ত্রের জয় হবে
আমেরিকা একটি মজার দেশ। সেখানে চলছে জাতীয় নির্বাচন। দেশটি আমার কাছে হাইটেক লো টাচ আবার লোটেক হাই টাচ। সেটা আবার কী? আমেরিকা রকেট পাঠিয়ে দিতে পারে মহাশূন্যে অথচ জনগণ ভোট দিতে গিয়ে হিমসিম খায় বার বার।
সেখানে পোস্টাল ভোটের ব্যবস্থা থাকা সত্বেও বর্তমান প্রেসিডেন্ট এই ব্যবস্থার ওপর আস্থা হারিয়েছে। গোটা বিশ্ব অস্থির হয়ে আছে কে জিতবে। গণতন্ত্রের ব্যাখ্যা যতটা সহজ বলে মনে হয় আসলে তা নয়। কারণ এটা সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে অনেক তন্ত্র-মন্ত্রের প্রয়োজন হয়।
ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আমি বিশ বছর আগে থেকে ফলো করে আসছি বিশেষ করে তার ম্যানেজমেন্ট স্টাইল। তিনি অন্যান্য রাজনীতিবিদদের মত নয়, এসেছেন ইন্ডাস্ট্রিয়াল ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে। মিডিয়ার খবর দেখলে মনে হয় কেউ তাকে পছন্দ করে না। রিপাবলিকানরা প্রথমবার না হয় ভুল করে তাকে পার্টি থেকে নমিনেশন দিয়েছিল, কিন্তু এবার?
এবারের নির্বাচন প্রমাণ করবে দেশটির রাজনৈতিক ব্যবস্থার শক্তিমত্তা। এর থেকে শিক্ষণীয় বিষয় হবে যদি কোন দেশে প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী থাকে, ব্যবস্থা যথাযথভাবে কাজ করে এবং জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যায়, কোন অশুভ শক্তিই সেখানে স্থায়ী হতে পারে না।
এই নির্বাচন আশা জাগাবে গোটা পৃথিবীজুড়ে। পৃথিবীর মানুষ স্বাধীনতা, মানবাধিকার, আইনের শাসন আর গণতান্ত্রিক ধারার পক্ষে নতুন করে সোচ্চার হবে। আমেরিকার নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত জনগণ এবং গণতন্ত্রের জয় হবে।
আমার কাছে বিষয়টি পরিষ্কার তা হলো, একটি দেশের জনপ্রতিনিধিরাই সে দেশের জনগণের প্রতিচ্ছবি। বিশ্বের অনেককেই আমরা পছন্দ করি না, কিন্তু তাদের নিজ দেশে তাদের জনপ্রিয়তার অভাব নেই। আমাদের ব্যক্তিগত জীবনেও প্রতিদিন বিভিন্ন পছন্দ এবং অপছন্দের ওপর ঘটনা প্রবাহ বয়ে চলছে।
হয়ত চুপচাপ বসে ভাবছেন। এমন সময় আপনার পরিচিত এক হিতাকাঙ্খী এসে বলবে সমস্যায় পড়েছেন? মন খারাপ? চিন্তা করবেন না, সব ঠিক হয়ে যাবে ইত্যাদি। এ কথাগুলো বলা সত্বেও ঠিক সেটাই আমরা সবাই করি। কেউ মারা গেছে শতভাগ মন খারাপ বা চিন্তা করেও কোন লাভ হবে না সত্বেও আমরা মন খারাপ করি।
ছোটবেলা আমি বেশ মন খারাপ করতাম মার কাছ থেকে আদর বা কিছু পেতে। না পেলে খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিতাম। মা অনেক অনুরোধ করতেন কিন্তু কিছুতেই খাইনি। কারণ যে বায়না ধরেছি সেটা তখনও পূরণ হয়নি। অনেক সময় দেখা গেছে মা খেতে আর ডাকছেন না। তার জন্য রাগের মাত্রা আরও বেড়ে যেত। পরে কাগজে বড় অক্ষরে লিখে দরজায় টানিয়ে রেখেছি ‘আরেকবার সাধিলেই খাইব।’
এই মূহুর্তে ছোটবেলার বিষয়গুলো নিয়ে ভাবছি কারণ তখন মন খারাপ হয়েছে যেমনটি এখনও হয়। আমরা কখনও বলি না মন খারাপ কর বা কান্না এলে কাঁদো ইত্যাদি। আমরা বরং বলি কাঁদবে না বা মন খারাপ করবে না। তাতে কি মন খারাপ বা কান্না থেকে আমরা বিরত থেকেছি?
একটি জিনিস ভালোভাবে শিখতে হবে সেটা হচ্ছে যখন মন খারাপ হয় কী করণীয় হতে পারে তখন। প্রথমে যে কাজটি করতে হবে তা হলো ভাবা। মন খারাপ করলে সমস্যার সমাধান হবে কি? অনেকেই বলবে মনের ওপর আমাদের কোন দখল নেই সেক্ষেত্রে কীভাবে সম্ভব তাকে নিয়ন্ত্রণ করা?
যুগে যুগে যারা নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছে তারাই জয়ী হয়েছে। প্রত্যেকটি পরাজয়কে শিক্ষণীয় হিসাবে মেনে নিতে হবে। স্রোত বিহীন নদী বিলীন হয়ে যায়। শরীরে যখন ফ্যাট জমে রক্তের গতি কমিয়ে দেয় যার ফলে স্ট্রোক করে এবং শেষে মৃত্যু হয়। প্রতিনিয়ত খারাপ চিন্তা আমাদের মনের ওপর নেগেটিভ প্রভাব ফেলে। শেষে মানসিক অসুস্থতার সৃষ্টি করে। এটা আমাদের জীবনকে তিলে তিলে ধ্বংস করে দেয়।
সমস্যা ছাড়া জীবন থাকতে পারে না। জীবনে ব্যর্থতা বলে কিছু নেই এটা যদি কেউ মনে করে সেটা ভুল। বরং মনে করতে হবে সমস্যা, বিপদ-আপদ এসব বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে ভালোমন্দ যাই ঘটুক না কেন তাকে অ্যাডজাস্ট করে চলতে হবে। অনেক সমস্যা সমাধান করার চেয়ে তা কাটিয়ে ওঠা বেশ কঠিন। আমাদের কঠিন সময় পার করাকে সাফল্য হিসাবে মনের মধ্যে ধরে রাখার সাহস এবং দক্ষতা অর্জন করা শিখতে হবে।
বিপদ, পরাজয় এসব মনকে খারাপ করে। যা পাই তা চাই না, যা চাই তা পাই না। এ চিন্তা মন থেকে দূর করতে হবে। অন্ধকার আছে বলেই আমরা আলো দেখি। সাফল্য মনকে ভালো করে।
মনে রাখতে হবে প্রতিদিন যা ঘটে এসব বেঁচে থাকার চাবিকাঠি, হোক না তা পজিটিভ বা নেগেটিভ। জীবনের গতিকে থামানো যাবে না, তা নিয়ন্ত্রণ করা শিখতে হবে। আমাদের ইচ্ছাশক্তির চেয়ে বড় কিছু নেই। সেটা যদি মজবুত থাকে তবে শেষ পর্যন্ত মানবতার জয় আর দানবের পরাজয় হবেই।
লেখক: রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক (প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট), ফাইজার, সুইডেন থেকে, [email protected]