হঠাৎ পঞ্চাশ বছর আগের দিনে ফিরে গেলাম
রহমান মৃধা, সুইডেন থেকে
০৯ জানুয়ারি ২০২১, ২২:০৩:২০ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বাবার মা মারা যান তার জন্মের পরপরই। বাবার শিশুকাল কেটেছে কঠিন অবস্থায়। বাবার আপন বলতে তখন ছিল তার বাবা এবং বড় ভাই যিনি ছিলেন বয়সে বাবার এক বছরের বড়। বাবার বাবারা ছিলেন দুই ভাই এবং বাবার চাচার তখন একটি মেয়ে যিনি ছিলেন বাবার কয়েক বছরের বড়। বাবার চাচি দায়িত্ব নিয়ে বাবাকে মাতৃত্বের স্নেহে দেখাশুনা করতে শুরু করেন। বাবা তার চাচিকে 'কাইমা' বলে ডাকতেন। বছর যেতেই বাবার চাচির ঘরে নতুন করে নিজ সন্তান আসে। এমতাবস্থায় বাবার বয়স বছর পেরিয়ে যায়। এইভাবে যৌথ পরিবারে আমার বাবা গড়ে উঠেন মা ছাড়া।
সময় পার হয়ে যায়। বাবার চাচাতো বোনের বিয়ে হয় এবং তার পরিবারে আসে তিন মেয়ে এক ছেলে। বাবারও সংসার হয়েছে। আমার বয়স তখন তিন বা চার হবে। একদিন বাবাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম কেন তিনি তার চাচিকে চাচি না বলে কাইমা বলে ডাকেন? বাবা তখন কারণ বলেছিলেন, সে বহু বছর আগের কথা। ১৯৭০ সাল। দেশে চলেছে গণ-হরতাল। কখন কী ঘটে যায় বলা মুশকিল। গ্রামে আমি এবং আমার ছোট যারা তারাই শুধু বাড়িতে মার সঙ্গে, বাবা তখন ফরিদপুরে চাকরিরত অবস্থায়।
হঠাৎ বাবা গভীর রাতে অস্ত্রসহ বাড়ি এসেছেন। কী ব্যাপার এর আগে এমনটি দেখিনি! সকাল হতেই আশপাশের অনেক লোক বাড়িতে জড় হয়েছে। ঘটনা কী? বাবা বললেন, বঙ্গবন্ধু যুদ্ধের জন্য সবাইকে প্রস্তুত হতে বলেছেন। বাবা অস্ত্রসহ পালিয়ে এসেছেন। বাবার দুই মামাতো ভাই নজরুল ইসলাম এবং একাকব মিয়া তখন নহাটার জাঁদরেল রাজনীতিবিদ। তারা তখন নির্ধারণ করেন কে মাগুরাবাসীর হয়ে কাজ করবেন।
যাইহোক আমাদের সবাইকে বাবা সকালে পাঠিয়ে দিলেন ডাঙ্গাপাড়া। এ গ্রামটি নহাটা থেকে কয়েক মাইল দূরে। ডাঙ্গাপাড়া বাবার চাচাতো বোনের মেয়েদের বাড়ি। প্রচুর বন্যা দেশে। পাকিস্তানি সৈন্যরা সেখানে যেতে পারবে না এমনটি সবার ধারণা। মজার ব্যাপার হলো বাবার চাচাতো বোনের তিন মেয়ে। বড় এবং ছোট মেয়ের বিয়ে হয় একই পরিবারে।
ডাঙ্গাপাড়ার সৈয়দ বংশের বেশ ঐতিহ্য রয়েছে শুনেছি কিন্তু এর আগে কখনও সেখানে যাবার সুযোগ হয়নি। দেশে চলছে যুদ্ধ। তা সত্ত্বেও কেন যেন সবার মনে আনন্দ। দেশ স্বাধীন করার জন্য সবাই এক সাথে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। সবাই যেন শুনতে পাচ্ছে বিজয়ের পদধ্বনি। ভয়কে জয় করার দৃঢ় সংকল্প। নিজ গ্রাম ছেড়ে এসেছি ভিন গ্রামে, মনে হচ্ছে সৃষ্টি সুখের উল্লাসে মোর মুখ হাসে আর প্রাণ হাসে। সমবয়সীদের অভাব নেই, হৈহুল্লোড়ের মধ্যদিয়ে ডাঙ্গাপাড়ায় সময় পার করছি।
মাসখানেক পরে রাজাকার সেখানেও ঢুকে পড়ে পাকবাহিনী নিয়ে। শেষে শরণার্থী হয়ে রাতের আঁধারে কেউ নৌকা, কেউ ডোংগা (তাল গাছ থেকে তৈরি এক ধরনের নৌকা), কেউ বা কলাগাছের ভেলায় করে ইছামতির বিল পাড়ি দিয়ে প্রথমে নখখালি, পরে ডুমুরতলা গ্রামে এসে হাজির হই। ডুমুরতলায় রয়েছে আমার মার একমাত্র ফুফু। শেষে উঠলাম মার সেই ফুপুর বাড়িতে।
যাইহোক ডাঙ্গাপাড়া ছেড়ে আসার সময় কেঁদে ছিলাম খুব। কারণ খেলার সাথীদের সঙ্গে ভালোবাসার বিনিময় হয়েছিল। তাদের ফেলে আসতে বুক ভেঙ্গে যাচ্ছিল। লেখাপড়া করা লাগেনি সারাদিন পুকুরে সাঁতার কাটা, খেলাধুলা করা ছিল জীবনের বিনোদন। সে আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগের কথা। তারপর প্রায় চল্লিশ বছর দেশের বাইরে বলতে গেলে ভুলেই গিয়েছি সেসব দিনের কথা।
গত দুই তিন সপ্তাহ আগে একটি ছেলে আমাকে ফেসবুকের ম্যাসেঞ্জারে নক করে জানতে চায় আমার পরিচয়। পরে সে তার পরিচয় তুলে ধরে। আশ্চর্য! সে আর কেউ নয়, আমার সেই ছোটবেলার স্মৃতিজড়িত ডাঙ্গাপাড়ার সৈয়দ বংশেরই ছেলে। আমি তাকে চোখে দেখিনি, এমন কি তার নামও শুনিনি। পরিচয় পর্ব শেষ হলো, হলো কিছু স্মৃতিচারণ। তার সঙ্গে জানলাম আমার ফুফাতো বোনদের কুশালাদি। হঠাৎ দুইদিন আগে সে ফেসবুকের ম্যাসেঞ্জারে ফোন করেছে। আমি বাইরে থাকার কারণে ফোন ধরা সম্ভব হয়নি।
ছেলেটি টেক্সট করে মেসেজ রেখেছে, আপনার বোন কথা বলবে তাই ফোন করেছিলাম। হঠাৎ পঞ্চাশ বছর আগের দিনে ফিরে গেলাম। আমার এই ফুফাতো বোনের নাম ফেলোন। বুবুকে এই নামেই জানি। গতকাল বললেন তার ভালো নাম মনোয়ারা বেগম। বুবু বললেন, নানি তার নাম ফেলোন রেখেছিলেন, কারণ মার প্রথম তিনটি সন্তান মারা যায়। তখন কী করা! নানি আগের কালের মানুষ তাই আমিও যেন না মরি তাই ফেলোন নামে ডাকতেন যাতে করে নজর না লাগে। ইত্যাদি বলতে বলতে হাসতে লাগলেন।
কী চমৎকার এবং সহজে সত্যকথাগুলো একের পর এক বলতে বলতে কত কথাই না বলে গেলেন। কথার শেষ নেই, দশবার খোদা হাফেজ বলেছি, টেলিফোন রাখবো বলে। ঠিক তখন আবার নতুন করে ধুঁকছে আরেক প্রসঙ্গ। গল্পের যেন শেষ নেই। পঞ্চাশ বছর ধরে কত কথা মনে গাঁথা হয়ে আছে। বলছি ঠিক আছে বুবু আবার কথা হবে, বুবু আবার শুরু করলেন- যেমন তার ছেলে অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসে কর্মরত, তার দেবরের সাত ছেলে-মেয়ে এবং সবাই মাস্টার ডিগ্রী ইত্যাদি।
কোনো এক সময় জিজ্ঞেস করলাম, বুবু দেশ স্বাধীন হয়ে কী লাভ হয়েছে? বুবু বললেন, কিছু সমস্যা আছে তবুও নিজেদের দেশ তোরা তোদের মতো করে গড়ছিস, এর চেয়ে বড় আর কী হতে পারে। তবে সম্পত্তির কারণে ভাইয়ে ভাইয়ে মনোমালিন্যটা দেখে মনটা ভালো লাগে নারে। তখন বললেন, সম্পত্তির জন্য কখনো ভাই-বোনদের সাথে সম্পর্ক নষ্ট করো না। কারণ ভাই-বোনদের সম্পর্কের চেয়ে সম্পত্তি কখনো বড় হতে পারে না। এটা জানা সত্ত্বেও যখন আমরা কাজটি করি তখন সেটা ভুল নয়; সেটা জেনেশুনেই করি।
এমতাবস্থায় নিজের ভালোমন্দের জন্য অন্য কাউকে দোষারোপ করা ঠিক হবে না। যাইহোক অনেক কথা বলার ফাঁকে বুবু জিজ্ঞেস করলেন, পান্নুরে (আমার ডাক নাম) তোর কি আমার কথা মনে আছে? বুবুকে বললাম, হ্যাঁ বুবু সব মনে আছে, সব। রবি ঠাকুরের কথা মনে পড়ে গেল, পুরোনো সেই দিনের কথা ভুলবি কি রে হায়, ও সেই চোখে দেখা, প্রাণের কথা, সে কি ভোলা যায়!
লেখক: রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক (প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট), ফাইজার, সুইডেন থেকে, rahman.mridha@gmail.com
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৪০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
হঠাৎ পঞ্চাশ বছর আগের দিনে ফিরে গেলাম
আমার বাবার মা মারা যান তার জন্মের পরপরই। বাবার শিশুকাল কেটেছে কঠিন অবস্থায়। বাবার আপন বলতে তখন ছিল তার বাবা এবং বড় ভাই যিনি ছিলেন বয়সে বাবার এক বছরের বড়। বাবার বাবারা ছিলেন দুই ভাই এবং বাবার চাচার তখন একটি মেয়ে যিনি ছিলেন বাবার কয়েক বছরের বড়। বাবার চাচি দায়িত্ব নিয়ে বাবাকে মাতৃত্বের স্নেহে দেখাশুনা করতে শুরু করেন। বাবা তার চাচিকে 'কাইমা' বলে ডাকতেন। বছর যেতেই বাবার চাচির ঘরে নতুন করে নিজ সন্তান আসে। এমতাবস্থায় বাবার বয়স বছর পেরিয়ে যায়। এইভাবে যৌথ পরিবারে আমার বাবা গড়ে উঠেন মা ছাড়া।
সময় পার হয়ে যায়। বাবার চাচাতো বোনের বিয়ে হয় এবং তার পরিবারে আসে তিন মেয়ে এক ছেলে। বাবারও সংসার হয়েছে। আমার বয়স তখন তিন বা চার হবে। একদিন বাবাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম কেন তিনি তার চাচিকে চাচি না বলে কাইমা বলে ডাকেন? বাবা তখন কারণ বলেছিলেন, সে বহু বছর আগের কথা। ১৯৭০ সাল। দেশে চলেছে গণ-হরতাল। কখন কী ঘটে যায় বলা মুশকিল। গ্রামে আমি এবং আমার ছোট যারা তারাই শুধু বাড়িতে মার সঙ্গে, বাবা তখন ফরিদপুরে চাকরিরত অবস্থায়।
হঠাৎ বাবা গভীর রাতে অস্ত্রসহ বাড়ি এসেছেন। কী ব্যাপার এর আগে এমনটি দেখিনি! সকাল হতেই আশপাশের অনেক লোক বাড়িতে জড় হয়েছে। ঘটনা কী? বাবা বললেন, বঙ্গবন্ধু যুদ্ধের জন্য সবাইকে প্রস্তুত হতে বলেছেন। বাবা অস্ত্রসহ পালিয়ে এসেছেন। বাবার দুই মামাতো ভাই নজরুল ইসলাম এবং একাকব মিয়া তখন নহাটার জাঁদরেল রাজনীতিবিদ। তারা তখন নির্ধারণ করেন কে মাগুরাবাসীর হয়ে কাজ করবেন।
যাইহোক আমাদের সবাইকে বাবা সকালে পাঠিয়ে দিলেন ডাঙ্গাপাড়া। এ গ্রামটি নহাটা থেকে কয়েক মাইল দূরে। ডাঙ্গাপাড়া বাবার চাচাতো বোনের মেয়েদের বাড়ি। প্রচুর বন্যা দেশে। পাকিস্তানি সৈন্যরা সেখানে যেতে পারবে না এমনটি সবার ধারণা। মজার ব্যাপার হলো বাবার চাচাতো বোনের তিন মেয়ে। বড় এবং ছোট মেয়ের বিয়ে হয় একই পরিবারে।
ডাঙ্গাপাড়ার সৈয়দ বংশের বেশ ঐতিহ্য রয়েছে শুনেছি কিন্তু এর আগে কখনও সেখানে যাবার সুযোগ হয়নি। দেশে চলছে যুদ্ধ। তা সত্ত্বেও কেন যেন সবার মনে আনন্দ। দেশ স্বাধীন করার জন্য সবাই এক সাথে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। সবাই যেন শুনতে পাচ্ছে বিজয়ের পদধ্বনি। ভয়কে জয় করার দৃঢ় সংকল্প। নিজ গ্রাম ছেড়ে এসেছি ভিন গ্রামে, মনে হচ্ছে সৃষ্টি সুখের উল্লাসে মোর মুখ হাসে আর প্রাণ হাসে। সমবয়সীদের অভাব নেই, হৈহুল্লোড়ের মধ্যদিয়ে ডাঙ্গাপাড়ায় সময় পার করছি।
মাসখানেক পরে রাজাকার সেখানেও ঢুকে পড়ে পাকবাহিনী নিয়ে। শেষে শরণার্থী হয়ে রাতের আঁধারে কেউ নৌকা, কেউ ডোংগা (তাল গাছ থেকে তৈরি এক ধরনের নৌকা), কেউ বা কলাগাছের ভেলায় করে ইছামতির বিল পাড়ি দিয়ে প্রথমে নখখালি, পরে ডুমুরতলা গ্রামে এসে হাজির হই। ডুমুরতলায় রয়েছে আমার মার একমাত্র ফুফু। শেষে উঠলাম মার সেই ফুপুর বাড়িতে।
যাইহোক ডাঙ্গাপাড়া ছেড়ে আসার সময় কেঁদে ছিলাম খুব। কারণ খেলার সাথীদের সঙ্গে ভালোবাসার বিনিময় হয়েছিল। তাদের ফেলে আসতে বুক ভেঙ্গে যাচ্ছিল। লেখাপড়া করা লাগেনি সারাদিন পুকুরে সাঁতার কাটা, খেলাধুলা করা ছিল জীবনের বিনোদন। সে আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগের কথা। তারপর প্রায় চল্লিশ বছর দেশের বাইরে বলতে গেলে ভুলেই গিয়েছি সেসব দিনের কথা।
গত দুই তিন সপ্তাহ আগে একটি ছেলে আমাকে ফেসবুকের ম্যাসেঞ্জারে নক করে জানতে চায় আমার পরিচয়। পরে সে তার পরিচয় তুলে ধরে। আশ্চর্য! সে আর কেউ নয়, আমার সেই ছোটবেলার স্মৃতিজড়িত ডাঙ্গাপাড়ার সৈয়দ বংশেরই ছেলে। আমি তাকে চোখে দেখিনি, এমন কি তার নামও শুনিনি। পরিচয় পর্ব শেষ হলো, হলো কিছু স্মৃতিচারণ। তার সঙ্গে জানলাম আমার ফুফাতো বোনদের কুশালাদি। হঠাৎ দুইদিন আগে সে ফেসবুকের ম্যাসেঞ্জারে ফোন করেছে। আমি বাইরে থাকার কারণে ফোন ধরা সম্ভব হয়নি।
ছেলেটি টেক্সট করে মেসেজ রেখেছে, আপনার বোন কথা বলবে তাই ফোন করেছিলাম। হঠাৎ পঞ্চাশ বছর আগের দিনে ফিরে গেলাম। আমার এই ফুফাতো বোনের নাম ফেলোন। বুবুকে এই নামেই জানি। গতকাল বললেন তার ভালো নাম মনোয়ারা বেগম। বুবু বললেন, নানি তার নাম ফেলোন রেখেছিলেন, কারণ মার প্রথম তিনটি সন্তান মারা যায়। তখন কী করা! নানি আগের কালের মানুষ তাই আমিও যেন না মরি তাই ফেলোন নামে ডাকতেন যাতে করে নজর না লাগে। ইত্যাদি বলতে বলতে হাসতে লাগলেন।
কী চমৎকার এবং সহজে সত্যকথাগুলো একের পর এক বলতে বলতে কত কথাই না বলে গেলেন। কথার শেষ নেই, দশবার খোদা হাফেজ বলেছি, টেলিফোন রাখবো বলে। ঠিক তখন আবার নতুন করে ধুঁকছে আরেক প্রসঙ্গ। গল্পের যেন শেষ নেই। পঞ্চাশ বছর ধরে কত কথা মনে গাঁথা হয়ে আছে। বলছি ঠিক আছে বুবু আবার কথা হবে, বুবু আবার শুরু করলেন- যেমন তার ছেলে অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসে কর্মরত, তার দেবরের সাত ছেলে-মেয়ে এবং সবাই মাস্টার ডিগ্রী ইত্যাদি।
কোনো এক সময় জিজ্ঞেস করলাম, বুবু দেশ স্বাধীন হয়ে কী লাভ হয়েছে? বুবু বললেন, কিছু সমস্যা আছে তবুও নিজেদের দেশ তোরা তোদের মতো করে গড়ছিস, এর চেয়ে বড় আর কী হতে পারে। তবে সম্পত্তির কারণে ভাইয়ে ভাইয়ে মনোমালিন্যটা দেখে মনটা ভালো লাগে নারে। তখন বললেন, সম্পত্তির জন্য কখনো ভাই-বোনদের সাথে সম্পর্ক নষ্ট করো না। কারণ ভাই-বোনদের সম্পর্কের চেয়ে সম্পত্তি কখনো বড় হতে পারে না। এটা জানা সত্ত্বেও যখন আমরা কাজটি করি তখন সেটা ভুল নয়; সেটা জেনেশুনেই করি।
এমতাবস্থায় নিজের ভালোমন্দের জন্য অন্য কাউকে দোষারোপ করা ঠিক হবে না। যাইহোক অনেক কথা বলার ফাঁকে বুবু জিজ্ঞেস করলেন, পান্নুরে (আমার ডাক নাম) তোর কি আমার কথা মনে আছে? বুবুকে বললাম, হ্যাঁ বুবু সব মনে আছে, সব। রবি ঠাকুরের কথা মনে পড়ে গেল, পুরোনো সেই দিনের কথা ভুলবি কি রে হায়, ও সেই চোখে দেখা, প্রাণের কথা, সে কি ভোলা যায়!
লেখক: রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক (প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট), ফাইজার, সুইডেন থেকে, rahman.mridha@gmail.com