বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তীতে লন্ডন টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের অসাধারণ উদ্যোগ
মুহাম্মদ শাহেদ রাহমান, লন্ডন থেকে
২৫ জানুয়ারি ২০২২, ২৩:৪৮:২৫ | অনলাইন সংস্করণ
যুক্তরাজ্যের লন্ডন বারা অব টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের উদ্যোগে ৫ জন বিশিষ্ট বাঙালির নামে পাঁচটি নতুন ভবনের নামকরণের ঘোষণা করা হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন মেয়র জন বিগস।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ব্রিটেনে বাংলাদেশি-অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল পাঁচজন বিশিষ্ট বাঙালির নামে পাঁচটি নতুন ভবনের নামকরণের ঘোষণা করা হয়েছে। তারা হলেন- সমাজসেবক তাসাদ্দুক আহমেদ এমবিই, আলতাব আলী, লন্ডনের প্রয়াত সাংবাদিক শাহাবউদ্দিন আহমেদ বেলাল, কবি বেগম সুফিয়া কামাল ও আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।
মেয়র জন বিগস জানান, কমিউনিটির এই পাঁচ ব্যক্তিত্বকে সম্মাননা জানানোর মধ্য দিয়ে সেই ইতিহাস এবং পূর্ব লন্ডনে বাংলাদেশি অভিবাসীদের সার্বিক অবদানকেই স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। আমরা এটা করছি যাতে বহু জাতিসত্তার এই সমাজে মানুষ তার শেকড়কে ভুলে না যায়।
যে পাঁচজনকে এই সম্মাননা দেওয়া হয়েছে তাদের অবদানের কথা তুলে ধরা হয় এই সংবাদ সম্মেলনে।
তাসাদ্দুক আহমেদ এমবিই: তাসাদ্দুক আহমদ এমবিইকে, পূর্ব লল্ডনের ব্রিটিশ বাংলাদেশিদের গৌরবময় ইতিহাসের সাথে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। তাসাদ্দুক আহমেদ ছিলেন ব্রিটেনের বাঙালি কমিউনিটির এক অনন্য ব্যক্তিত্ব। এই কমিউনিটির অগ্রযাত্রায় তিনি বিশেষ ভূমিকা পালন করেন এবং তার হাত ধরে বহু সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের জন্ম হয়। তিনি দেশের ডাক এবং ইন্টার্ন নিউজ নামে দুটি সংবাদপত্র তিনি প্রকাশ করেন।
সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনে বিশেষ ভূমিকার স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৮৯ সালে তাকে রানির সম্মাননাসূচক খেতাব এমবিই প্রদান করা হয়। এছাড়া ২০০০ সালে তিনি টাওয়ার হ্যামলেটসের ফ্রিডম অফ দ্য বারা সম্মান অর্জন করেন।
আলতাব আলী: একজন সাধারণ অভিবাসী শ্রমিক আলতাব আলী তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে পূর্ব লন্ডনে বর্ণবাদ ও ফ্যাসিবাদ-বিরোধী আন্দোলনের প্রতীকে পরিণত হন। মি. আলী ১৯৭৮ সালে এক বর্ণবাদী হামলায় প্রাণ হারান। তার মৃত্যুর পর প্রায় সাত হাজার মানুষ তার কফিন বহন করে যান মধ্য লন্ডনে। হাইড পার্ক, ট্রাফালগার স্কোয়ার এবং প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ডাউনিং স্ট্রিটের সামনে তারা বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। লন্ডনের শ্বেতাঙ্গ, ভারতীয়, পাকিস্তানি ও ক্যারিবীয় অভিবাসী আন্দোলনকারীরাও এ আন্দোলনে যোগ দেন।
সাংবাদিক শাহাবউদ্দিন আহমেদ বেলাল: সাংবাদিকতায় তার অবদান অপরিসীম। পাশাপাশি শাহাবউদ্দিন আহমেদ বেলাল ব্রিটেনে বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনে ভূমিকা রাখেন। তিনি শিক্ষা ও সামাজিক উন্নয়নে কমিউনিটিতে অনন্য ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি এক সময় স্টেপনি গ্রিন এলাকার ওয়ার্ড কাউন্সিলার হিসেবেও মানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন।
বেগম সুফিয়া কামাল : বাংলাদেশের একজন প্রথিতযশা কবি, লেখিকা, নারীবাদী ও আধুনিক বাংলাদেশের নারী প্রগতি আন্দোলনের একজন পুরোধা ব্যক্তিত্ব। বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে দিশারির ভূমিকা পালন ছাড়াও কবি সুফিয়া কামাল নারী প্রগতি আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধেও ছিল তার অসামান্য ভূমিকা। ১৯৯১ সালে তিনি মারা যান। তিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী, যাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়।
সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম: তিনি ছিলেন একজন বাংলাদেশি রাজনীতিবিদ ও মন্ত্রী। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ষষ্ঠ সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি ২০১৫ সাল থেকে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন। এর পূর্বে তিনি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের নামটি অপরিচিত নয়; কিন্তু বিলেতের বাঙালি কমিউনিটির সেবায়ও তিনি বিশেষ ভূমিকা রাখেন বলে জানায় টাওয়ার হ্যামলেটস কর্তৃপক্ষ। এক সময় তিনি টাওয়ার হ্যামলেটসের শিক্ষা বিভাগে কাজ করেছেন এবং কমিউনিটিতে বিশেষ অবদান রেখেছেন। তার এ বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি জানাল লন্ডন বারা অব টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তীতে লন্ডন টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের অসাধারণ উদ্যোগ
যুক্তরাজ্যের লন্ডন বারা অব টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের উদ্যোগে ৫ জন বিশিষ্ট বাঙালির নামে পাঁচটি নতুন ভবনের নামকরণের ঘোষণা করা হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন মেয়র জন বিগস।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ব্রিটেনে বাংলাদেশি-অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল পাঁচজন বিশিষ্ট বাঙালির নামে পাঁচটি নতুন ভবনের নামকরণের ঘোষণা করা হয়েছে। তারা হলেন- সমাজসেবক তাসাদ্দুক আহমেদ এমবিই, আলতাব আলী, লন্ডনের প্রয়াত সাংবাদিক শাহাবউদ্দিন আহমেদ বেলাল, কবি বেগম সুফিয়া কামাল ও আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।
মেয়র জন বিগস জানান, কমিউনিটির এই পাঁচ ব্যক্তিত্বকে সম্মাননা জানানোর মধ্য দিয়ে সেই ইতিহাস এবং পূর্ব লন্ডনে বাংলাদেশি অভিবাসীদের সার্বিক অবদানকেই স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। আমরা এটা করছি যাতে বহু জাতিসত্তার এই সমাজে মানুষ তার শেকড়কে ভুলে না যায়।
যে পাঁচজনকে এই সম্মাননা দেওয়া হয়েছে তাদের অবদানের কথা তুলে ধরা হয় এই সংবাদ সম্মেলনে।
তাসাদ্দুক আহমেদ এমবিই: তাসাদ্দুক আহমদ এমবিইকে, পূর্ব লল্ডনের ব্রিটিশ বাংলাদেশিদের গৌরবময় ইতিহাসের সাথে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। তাসাদ্দুক আহমেদ ছিলেন ব্রিটেনের বাঙালি কমিউনিটির এক অনন্য ব্যক্তিত্ব। এই কমিউনিটির অগ্রযাত্রায় তিনি বিশেষ ভূমিকা পালন করেন এবং তার হাত ধরে বহু সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের জন্ম হয়। তিনি দেশের ডাক এবং ইন্টার্ন নিউজ নামে দুটি সংবাদপত্র তিনি প্রকাশ করেন।
সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনে বিশেষ ভূমিকার স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৮৯ সালে তাকে রানির সম্মাননাসূচক খেতাব এমবিই প্রদান করা হয়। এছাড়া ২০০০ সালে তিনি টাওয়ার হ্যামলেটসের ফ্রিডম অফ দ্য বারা সম্মান অর্জন করেন।
আলতাব আলী: একজন সাধারণ অভিবাসী শ্রমিক আলতাব আলী তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে পূর্ব লন্ডনে বর্ণবাদ ও ফ্যাসিবাদ-বিরোধী আন্দোলনের প্রতীকে পরিণত হন। মি. আলী ১৯৭৮ সালে এক বর্ণবাদী হামলায় প্রাণ হারান। তার মৃত্যুর পর প্রায় সাত হাজার মানুষ তার কফিন বহন করে যান মধ্য লন্ডনে। হাইড পার্ক, ট্রাফালগার স্কোয়ার এবং প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ডাউনিং স্ট্রিটের সামনে তারা বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। লন্ডনের শ্বেতাঙ্গ, ভারতীয়, পাকিস্তানি ও ক্যারিবীয় অভিবাসী আন্দোলনকারীরাও এ আন্দোলনে যোগ দেন।
সাংবাদিক শাহাবউদ্দিন আহমেদ বেলাল: সাংবাদিকতায় তার অবদান অপরিসীম। পাশাপাশি শাহাবউদ্দিন আহমেদ বেলাল ব্রিটেনে বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনে ভূমিকা রাখেন। তিনি শিক্ষা ও সামাজিক উন্নয়নে কমিউনিটিতে অনন্য ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি এক সময় স্টেপনি গ্রিন এলাকার ওয়ার্ড কাউন্সিলার হিসেবেও মানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন।
বেগম সুফিয়া কামাল : বাংলাদেশের একজন প্রথিতযশা কবি, লেখিকা, নারীবাদী ও আধুনিক বাংলাদেশের নারী প্রগতি আন্দোলনের একজন পুরোধা ব্যক্তিত্ব। বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে দিশারির ভূমিকা পালন ছাড়াও কবি সুফিয়া কামাল নারী প্রগতি আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধেও ছিল তার অসামান্য ভূমিকা। ১৯৯১ সালে তিনি মারা যান। তিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী, যাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়।
সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম: তিনি ছিলেন একজন বাংলাদেশি রাজনীতিবিদ ও মন্ত্রী। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ষষ্ঠ সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি ২০১৫ সাল থেকে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন। এর পূর্বে তিনি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের নামটি অপরিচিত নয়; কিন্তু বিলেতের বাঙালি কমিউনিটির সেবায়ও তিনি বিশেষ ভূমিকা রাখেন বলে জানায় টাওয়ার হ্যামলেটস কর্তৃপক্ষ। এক সময় তিনি টাওয়ার হ্যামলেটসের শিক্ষা বিভাগে কাজ করেছেন এবং কমিউনিটিতে বিশেষ অবদান রেখেছেন। তার এ বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি জানাল লন্ডন বারা অব টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল।