ফ্রান্সের নিভৃত পল্লীতে চিরনিদ্রায় অভিমানী নভেরা
কাজী এনায়েত উল্লাহ, ফ্রান্স থেকে
২৪ মার্চ ২০২৩, ০৯:১৮:৪৬ | অনলাইন সংস্করণ
২০১৫ সালের ৬ মে ছিল নভেরা আহমেদের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী। বাংলাদেশের গুণী এ ভাস্কর্যশিল্লী অনেক অভিমান করে দেশ ছেড়ে ফ্রান্সে দীর্ঘদিন বাস করলেও আমরা অনেকেই ব্যাপারটা জানতাম না।
তার মৃত্যুর পরও খবরটা গুটিকয়েক মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। বাংলাদেশে ইতিহাসের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা কতটুকু তার মূল্যায়ন করা অনেকের পক্ষেই সম্ভব নয়, কিন্তু বাংলাদেশের জাতীয় শহিদ মিনারে নকশা তৈরির সেই ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালনের কথা উঠলে অনেকেরই আশ্চর্য হওয়ার কথা।
হ্যাঁ, তিনিই সেই শিল্পী যিনি আমাদের ভাষা আন্দোলনের শহিদদের স্মরণে ওই স্মৃতিসৌধের স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং তা বাস্তবায়ন করেছিলেন।
তার জন্ম ১৯৩৯ সালের ২৯ মার্চ এবং মৃত্যু ৬ মে ২০১৫। শিক্ষাজীবনে যুক্তরাজ্য, ইতালি ও অস্ট্রিয়ায় অবস্থান করেন এবং ১৯৭১ সাল থেকে ফ্রান্সে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। অতিঅভিমানী নভেরা আর কোনো দিন বাংলাদেশে ফিরে যাননি।
১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ সরকার উনাকে ২১শে পদকে ভূষিত করলেও তিনি এতে কোনো আগ্রহ দেখাননি। প্যারিস থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে এক গ্রামে তিনি তার ফরাসি স্বামীর সঙ্গে বসবাস করতেন, সেখানকার পারিবারিক ও সামাজিক জীবন নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে।
ধারণা করা হচ্ছে, সেখানে উনি একটা বিশেষ সম্প্রদায়ের সঙ্গে ছিলেন, যারা কখনো চায়নি নভেরা আহমেদ তার দেশের সঙ্গে বা ফ্রান্সে বাংলাদেশি কমিউনিটির সঙ্গে যোগাযোগ রাখুক। মুসলমান ধর্মাবলম্বী হলেও মৃত্যুর পর তার মরদেহ একটা কাঠের কফিনে করে সমাহিত করা হয়, যার ওপর খচিত ছিল মুসলমান, খ্রিস্টান এবং অন্য আরও ধর্মীয় চিহ্ন।
২০১৫ সালের ১ জুন সংগীতশিল্পী ফকির আলমগীরের প্যারিস ভ্রমণের সময় আমরা নভেরা আহমেদকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য তার গ্রামে গিয়েছিলাম, উনার স্বামী প্রথমে একটু ইতঃস্তত করলেও পরে আমাদের তার বাড়িতে ঢোকার অনুমতি দেন।
আমরা অনেক চেষ্টা করে কিছু তথ্য নিতে সক্ষম হয়েছিলাম এবং সুযোগ হয়েছিল এই মহান শিল্পীর কিছু কাজ দেখার। আবেগ-অনুভূতির মধ্যেই আমরা তার কবরে অর্পণ করেছিলাম আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।
অনেক ভারাক্রান্ত হৃদয়ে প্যারিস ফেরার পথে ভাবলাম— আমরা তো এ দেশেই ছিলাম। আমাদের কি কিছুই করার ছিল না? শুধু না জানার কারণে আমরা হারালাম একজন গুণী শিল্পীকে, আর জাতি হারালো তার এক অভিমানী সন্তানকে। বিনম্র শ্রদ্ধা হে নভেরা আহমেদ, আপনার আত্মার শাান্তি কামনা করছি।
সম্পাদক : সাইফুল আলম, প্রকাশক : সালমা ইসলাম
প্রকাশক কর্তৃক ক-২৪৪ প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড), বারিধারা, ঢাকা-১২২৯ থেকে প্রকাশিত এবং যমুনা প্রিন্টিং এন্ড পাবলিশিং লিঃ থেকে মুদ্রিত।
পিএবিএক্স : ৯৮২৪০৫৪-৬১, রিপোর্টিং : ৯৮২৩০৭৩, বিজ্ঞাপন : ৯৮২৪০৬২, ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৩, সার্কুলেশন : ৯৮২৪০৭২। ফ্যাক্স : ৯৮২৪০৬৬
E-mail: jugantor.mail@gmail.com
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
ফ্রান্সের নিভৃত পল্লীতে চিরনিদ্রায় অভিমানী নভেরা
২০১৫ সালের ৬ মে ছিল নভেরা আহমেদের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী। বাংলাদেশের গুণী এ ভাস্কর্যশিল্লী অনেক অভিমান করে দেশ ছেড়ে ফ্রান্সে দীর্ঘদিন বাস করলেও আমরা অনেকেই ব্যাপারটা জানতাম না।
তার মৃত্যুর পরও খবরটা গুটিকয়েক মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। বাংলাদেশে ইতিহাসের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা কতটুকু তার মূল্যায়ন করা অনেকের পক্ষেই সম্ভব নয়, কিন্তু বাংলাদেশের জাতীয় শহিদ মিনারে নকশা তৈরির সেই ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালনের কথা উঠলে অনেকেরই আশ্চর্য হওয়ার কথা।
হ্যাঁ, তিনিই সেই শিল্পী যিনি আমাদের ভাষা আন্দোলনের শহিদদের স্মরণে ওই স্মৃতিসৌধের স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং তা বাস্তবায়ন করেছিলেন।
তার জন্ম ১৯৩৯ সালের ২৯ মার্চ এবং মৃত্যু ৬ মে ২০১৫। শিক্ষাজীবনে যুক্তরাজ্য, ইতালি ও অস্ট্রিয়ায় অবস্থান করেন এবং ১৯৭১ সাল থেকে ফ্রান্সে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। অতিঅভিমানী নভেরা আর কোনো দিন বাংলাদেশে ফিরে যাননি।
১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ সরকার উনাকে ২১শে পদকে ভূষিত করলেও তিনি এতে কোনো আগ্রহ দেখাননি। প্যারিস থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে এক গ্রামে তিনি তার ফরাসি স্বামীর সঙ্গে বসবাস করতেন, সেখানকার পারিবারিক ও সামাজিক জীবন নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে।
ধারণা করা হচ্ছে, সেখানে উনি একটা বিশেষ সম্প্রদায়ের সঙ্গে ছিলেন, যারা কখনো চায়নি নভেরা আহমেদ তার দেশের সঙ্গে বা ফ্রান্সে বাংলাদেশি কমিউনিটির সঙ্গে যোগাযোগ রাখুক। মুসলমান ধর্মাবলম্বী হলেও মৃত্যুর পর তার মরদেহ একটা কাঠের কফিনে করে সমাহিত করা হয়, যার ওপর খচিত ছিল মুসলমান, খ্রিস্টান এবং অন্য আরও ধর্মীয় চিহ্ন।
২০১৫ সালের ১ জুন সংগীতশিল্পী ফকির আলমগীরের প্যারিস ভ্রমণের সময় আমরা নভেরা আহমেদকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য তার গ্রামে গিয়েছিলাম, উনার স্বামী প্রথমে একটু ইতঃস্তত করলেও পরে আমাদের তার বাড়িতে ঢোকার অনুমতি দেন।
আমরা অনেক চেষ্টা করে কিছু তথ্য নিতে সক্ষম হয়েছিলাম এবং সুযোগ হয়েছিল এই মহান শিল্পীর কিছু কাজ দেখার। আবেগ-অনুভূতির মধ্যেই আমরা তার কবরে অর্পণ করেছিলাম আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।
অনেক ভারাক্রান্ত হৃদয়ে প্যারিস ফেরার পথে ভাবলাম— আমরা তো এ দেশেই ছিলাম। আমাদের কি কিছুই করার ছিল না? শুধু না জানার কারণে আমরা হারালাম একজন গুণী শিল্পীকে, আর জাতি হারালো তার এক অভিমানী সন্তানকে। বিনম্র শ্রদ্ধা হে নভেরা আহমেদ, আপনার আত্মার শাান্তি কামনা করছি।