Logo
Logo
×

পরবাস

তুরস্কে বিভিন্ন শহরে বাংলাদেশিদের ঈদুল আজহা উদযাপন

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৯ জুন ২০২৫, ০৯:৩৭ পিএম

তুরস্কে বিভিন্ন শহরে বাংলাদেশিদের ঈদুল আজহা উদযাপন

প্রবাসে ঈদের আনন্দ মানেই নিজ দেশের সংস্কৃতি ও আবেগকে ভাগ করে নেওয়া, একে অপরের খোঁজখবর নেওয়া এবং প্রবাসজীবনের একঘেয়েমিকে দূরে ঠেলে সবাইকে একত্রিত করা। সেই ভাবনাকেই বাস্তবে রূপ দিয়ে তুরস্কের ইস্তান্বুল, আঙ্কারা ও কোনিয়াসহ বিভিন্ন শহরে প্রবাসী বাংলাদেশিদের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয়েছে বর্ণিল ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান।

ইস্তান্বুলে ঈদের মিলনমেলা

বাংলাদেশ শিক্ষা ও সংস্কৃতি সংস্থা (বেকদের) এবং বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন তুর্কিয়ে (বিসিটি)-এর যৌথ আয়োজনে ইস্তান্বুলে অনুষ্ঠিত হয় ঈদের প্রাণবন্ত পুনর্মিলনী, যা পরিণত হয় ভালোবাসা ও সম্প্রীতির এক অনন্য উৎসবে। বিখ্যাত সাহাবী হযরত আবু আইয়ুব আল-আনসারী (রাঃ)-এর স্মৃতিবিজড়িত এলাকায় ঐতিহাসিক গোল্ডেন হর্ণের পাড়ে আয়োজন করা হয় এ অনুষ্ঠান।

দুই শতাধিক প্রবাসী বাংলাদেশির অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি এক হৃদয়গ্রাহী পারিবারিক আবহ সৃষ্টি করে। ছোটদের জন্য ছিল বিভিন্ন খেলা যেমন বিস্কুট দৌড় ও বল নিক্ষেপ, তরুণদের জন্য ফুটবল, গুপ্তধন খোঁজা, মোরগ লড়াই, বেলুন ফাটানোসহ নানা আয়োজন। নারীদের জন্য ছিল বালিশ খেলা এবং সবার মাঝে জনপ্রিয় ছিল বিবাহিত বনাম অবিবাহিতদের দড়ি টানাটানি প্রতিযোগিতা।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বেকদের চেয়ারম্যান ড. হাফিজুর রহমান এবং প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি বক্তব্য রাখেন তুরস্কে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম. আমানুল হক। স্বাগত বক্তব্য দেন বিসিটির আহ্বায়ক ড. শাহেন শাহ। অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বেকদেরের কার্যকরী কমিটির সদস্য ড. রহমতউল্লাহ, নেয়ামতউল্লাহ মাসউদ, ড. আব্দল্লাহ আল মামুন, ড. নুরুদ্দিন হামীম। অনুষ্ঠানে কমিউনিটির বিশিষ্ট নেতৃত্ববৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন যাকির হোসেন, ইঞ্জিনিয়ার নিজাম উদ্দিন, ইঞ্জিনিয়ার তারেক হাসান, ডা. সিরাজুল ইসলাম, মোহাম্মদ রেজাউল কারিম, ইঞ্জিনিয়ার সিফাত পাটোয়ারী এবং মো. শাহিনুর আলম। পুরো অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বেকদের ইস্তান্বুল ছাত্র শাখার সভাপতি মিনহাজুল আবেদীন ও শহীদুল ইসলাম।

আঙ্কারায় উৎসবমুখর ঈদ পুনর্মিলনী

বরাবরের মতোই তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় বসবাসরত বাংলাদেশিদের মাঝে ঈদুল আজহা উদযাপন ছিল এক আবেগঘন, প্রাণবন্ত এবং স্মরণীয় মিলনমেলা। আঙ্কারা বাংলাদেশ কমিউনিটির উদ্যোগে রাজধানীর অন্যতম আলতিনদা পার্কের সবুজেঘেরা খোলা প্রাকৃতিক পরিবেশে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন শতাধিক প্রবাসী বাংলাদেশি। বেকদের আঙ্কারা শাখার সভাপতি সাইফুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে রাষ্ট্রদূত এম. আমানুল হক সপরিবারে উপস্থিত থেকে প্রবাসীদের উৎসাহিত করেন। রাষ্ট্রদূত তার বক্তব্যে তুরস্কে বসবাসরত বাংলাদেশিদের ঐক্য, পারস্পরিক সহযোগিতা ও সাংস্কৃতিক পরিচয় ধরে রাখার উপর গুরুত্বারোপ করেন এবং ভবিষ্যতে দূতাবাসের পক্ষ থেকে কমিউনিটির কল্যাণে আরও সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

অন্যান্য সম্মানিত অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দূতাবাসের সামরিক উপদেষ্টা ইফতেকুর রহমান, কাউন্সেলর শাহনুর আলম, ফার্স্ট সেক্রেটারি শফিক উদ্দিন, প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ প্রফেসর সাইফুল ইসলাম, বিশিষ্ট কমিউনিটি সংগঠক মাহফুজুর রহমান রানা, সহকারী অধ্যাপক সাইয়্যেদ রাশেদ হাসান চৌধুরী, বেকদের-এর এইচআরডি সেক্রেটারি মুহাম্মদ মুহিবুল্লাহ, এবং আঙ্কারা শাখার সেক্রেটারি মোস্তাফিজুর রহমান, যারা প্রত্যেকেই নিজেদের মূল্যবান উপস্থিতি ও বক্তব্যের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের মর্যাদা বাড়িয়ে তোলেন।

আয়োজনের মূল আকর্ষণ ছিল শিশু-কিশোর ও বড়দের জন্য নানা প্রতিযোগিতা, যেমন দড়ি টানাটানি, বেলুন খেলা, পাশাপাশি পরিবেশিত হয় দেশীয় খাবার। এই আয়োজন প্রবাসে ঈদ উদযাপনকে শুধুমাত্র উৎসবে সীমাবদ্ধ না রেখে একটি সামাজিক বন্ধন ও জাতিগত পরিচয়ের শক্ত ভিত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। অংশগ্রহণকারীরা প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন, এমন উৎসব আরও বড় পরিসরে, নিয়মিতভাবে অনুষ্ঠিত হবে এবং এতে নতুন প্রজন্ম বাংলাদেশি সংস্কৃতির সঙ্গে আরও নিবিড়ভাবে পরিচিত হবে।

কোনিয়ায় ঐতিহ্য আর সম্প্রীতির ঈদ উদযাপন

মাওলানা জালালুদ্দিন রুমির স্মৃতিবিজড়িত তুরস্কের ঐতিহাসিক শহর কোনিয়ায়, বাংলাদেশি কমিউনিটির উদ্যোগে আয়োজিত হয় এক চমৎকার ঈদ পুনর্মিলনী, যা প্রবাসজীবনের একঘেয়েমিকে ভুলিয়ে দেয় হৃদয়ছোঁয়া আনন্দ-উৎসবে। ঈদের দিন সকালে সকলের অংশগ্রহণে খাসি জবাইয়ের মাধ্যমে কুরবানির আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। একত্রে জবাই, গোশত প্রস্তুত ও রান্নার কাজে সকলে হাত লাগিয়ে প্রবাসেও তৈরি করেন এক সম্প্রীতি ও পারিবারিক আবহ। দিনব্যাপী আয়োজনটি হয়ে ওঠে ভ্রাতৃত্ব, ভালোবাসা ও ঐক্যের এক উজ্জ্বল নিদর্শন।

বিকালে আয়োজন করা হয় পুনর্মিলনী, যেখানে সবাই অংশ নেয় বিভিন্ন খেলাধুলা ও আনন্দঘন আড্ডায়। পরিবেশিত হয় ঐতিহ্যবাহী দেশীয় খাবার ও ভোজনপর্ব, যা সবাইকে মনে করিয়ে দেয় প্রিয় স্বদেশের সেই চিরচেনা ঈদের আনন্দ। এ আয়োজন ছিল শুধুমাত্র একটি অনুষ্ঠান নয়, বরং প্রবাসে বসবাসরত বাংলাদেশিদের মাঝে আত্মিক সম্পর্ক ও পারস্পরিক সহানুভূতির এক উজ্জ্বল প্রতীক।

এছাড়াও গাজিয়ানতেপ, কায়সেরী, বুরসা, সাকারিয়া ও তোকাতসহ বিভিন্ন শহরের বাংলাদেশিরা নানা আয়োজনে ঈদ উদযাপন করেছেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম