হেলে পড়েছে রাবির শেরে বাংলা হল
ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রাজশাহীর বহু ভবন
রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশ: ২১ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:৪২ পিএম
রাজশাহী শহর। ফাইল ছবি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
রাজশাহীতে শত শত বহুতল ভবনকে ঘিরে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। শুক্রবার সকালে দেশজুড়ে অনুভূত ভূমিকম্পের পর নগরীর ভবনগুলোর নিরাপত্তা ঝুঁকি আবার সামনে এসেছে। শহরের বহু ভবন ‘বিল্ডিং কোড’ বা ইমারত বিধিমালা না মেনে নির্মাণ হওয়ায় বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরেই ঝুঁকির মুখে আছেন। অনেক ভবনে এখনো অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা নেই এবং ভবনগুলো একেবারে গা–ঘেঁষে তৈরি হয়েছে। ভবন নির্মাণ অনুমোদনকারী সংস্থা রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) ভূমিকা ও জবাবদিহি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বহু ভবন নকশা লঙ্ঘন করে তৈরি হলেও বছরের পর বছর কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এদিকে শুক্রবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শেরে বাংলা ফজলুল হক হল ভবন ভূমিকম্পে হেলে পড়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। হলের দেয়াল, করিডর, সিঁড়ি—বিভিন্ন স্থানে নতুন বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। এতে আতঙ্কিত শিক্ষার্থীরা দ্রুত অন্য হলে স্থানান্তর ও হলের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ পুনর্গঠনের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন।
শুক্রবার সকালে হলের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে জড়ো হন। পরে দুই উপ-উপাচার্য শিক্ষার্থীদের নিয়ে হল পরিদর্শনে যান। শিক্ষার্থীরা জানান, ভূমিকম্পে হলের পশ্চিমাংশ হেলে পড়েছে এবং পুরোনো ফাটলগুলো আরও বড় হয়েছে।
অন্যদিকে নগরবাসী মনে করছেন, আরডিএর অনুমোদন প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে শহরে নিরাপত্তাহীন বহুতল ভবনের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। আবাসিক এবং বাণিজ্যিক—উভয় ধরনের ভবনের ক্ষেত্রে আরডিএ নকশা অনুমোদন দিলেও অনেক ভবন ফায়ার সার্ভিসের নিরাপত্তা সনদ ছাড়াই নির্মাণ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত কয়েক বছরে রাজশাহী মহানগর এলাকায় প্রায় ১ হাজার ৩০০ নতুন ভবনের নকশা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১ হাজার ১০০ ভবন সাততলা পর্যন্ত এবং বাকি ২০০ ভবন ৮ থেকে ২০ তলা পর্যন্ত। অভিযোগ রয়েছে, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নকশা অনুমোদন নেওয়া হয়েছে; এমনকি যেসব ভবনের সামনে-পেছনে প্রয়োজনীয় রাস্তা নেই, সেগুলোরও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
ব্যক্তিগত, রাষ্ট্রীয় ও বাণিজ্যিক তিন ক্যাটাগরিতে ডেভেলপাররা কাজ করে থাকে। সূত্র জানায়, পূর্ববর্তী সরকার আমলে সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের ঘনিষ্ঠ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান অধিকাংশ প্রকল্প পেয়েছে এবং নিয়মবহির্ভূতভাবে কাজ করেছে—যা নগরীর বাসিন্দাদের জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করেছে।
ঝুঁকিপূর্ণ ভবন শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল। সুজন রাজশাহীর প্রধান আহমদ শফি উদ্দিন বলেন, এভাবে ভবন নির্মাণ মানুষের জীবনের জন্য ভয়াবহ হুমকি। রানা প্লাজার মতো ঘটনা ঘটলে কিছুই করার থাকবে না। তাই কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করে সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।
আরডিএ চেয়ারম্যান এসএম তুহিনুর রহমান বলেন, ঝুঁকি কমাতে আমরা বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। বহুতল ভবনে ফায়ার এক্সিট আছে কি না—তা যাচাই শুরু হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসকেও চিঠি দেওয়া হচ্ছে। ১০ তলার ওপর যে কোনো ভবনের জন্য গণপূর্ত অধিদফতর অনুমোদিত সয়েল টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
রাবির শেরে বাংলা হলের শিক্ষার্থীরা বলছেন, ভবনের ফাটল ভয়াবহ। আবাসিক ছাত্র ইমরান বলেন, ভূমিকম্পে পুরোনো ফাটলগুলোও আরও বড় হয়েছে। তিন শতাধিক শিক্ষার্থী জীবনঝুঁকিতে রয়েছেন। এই হল অনেক আগেই বসবাসের অযোগ্য হয়ে গেছে।
হল শাখা ছাত্রদলের সভাপতি মারুফ হাসান জেমস বলেন, রাতে ঘুমানোর সময় ছাদ থেকে পলেস্তারা পড়ার ঘটনা আগেও ঘটেছে। ভূমিকম্পের সময় আতঙ্কে অনেকে লাফ দেওয়ার কথা ভেবেছেন। আমরা দ্রুত নিরাপদ স্থানে যেতে চাই।
হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক শরিফুল ইসলাম বলেন, ভমিকম্পের পর গিয়ে আমরা অসংখ্য ফাটল দেখেছি। শিক্ষার্থীরা নিরাপদ নয়। দ্রুত তাদের স্থানান্তরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
রাবির উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, হলের অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ মনে হচ্ছে। বুয়েট বা রুয়েটের বিশেষজ্ঞ এনে ঝুঁকি মূল্যায়ন করা হবে। ঝুঁকি নিশ্চিত হলে হল রি-অ্যালোকেশন করা হবে।
