শেষ পাতা

নির্বাচন কমিশনের পরিপত্র

খেলাপিমুক্ত হতে হবে মনোনয়ন জমার আগে

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

খেলাপিমুক্ত হতে হবে মনোনয়ন জমার আগে

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঋণখেলাপি ও বিল খেলাপিদের প্রার্থী হওয়া ঠেকাতে কঠোর নির্বাচন কমিশন। সম্ভাব্য প্রার্থীর মনোনয়নপত্র দাখিলের আগে ঋণখেলাপির দুর্নামমুক্ত না হলে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া যাবে না। নির্বাচনে প্রার্থী হতে হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে তিনি যেদিন মনোনয়নপত্র দাখিল করবেন কমপক্ষে তার আগের দিন কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নেওয়া ঋণে খেলাপিমুক্ত হতে হবে। তবে শুধু ব্যাংক থেকে কৃষি কাজের জন্য নেওয়া ক্ষুদ্রঋণ খেলাপি হলেও তিনি প্রার্থী হতে পারবেন। এছাড়া মনোনয়নপত্র দাখিলের দিনের আগে সরকারি সেবা সংস্থার টেলিফোন, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি বা অন্যান্য কোনো সেবা প্রদানকারী সংস্থার বিল খেলাপিমুক্ত না হলেও নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া যাবে না। কোনো আদালত দেউলিয়া ঘোষণা করলে ওই দায় পরিশোধ না করা পর্যন্ত তিনি খেলাপি চিহ্নিত হবেন। এক্ষেত্রে ওই দায় পরিশোধ না করা পর্যন্ত নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না।

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিধিবিধান সংবলিত নির্বাচন কমিশনের জারি করা পরিপত্র থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। পরিপত্রটি নির্বাচন কমিশন থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে পাঠানো হয়েছে। ওই পরিপত্রের আলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণখেলাপিদের নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া ঠেকাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।

সূত্র জানায়, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২-এর ১২ অনুচ্ছেদের বিধান অনুসারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঘোষিত কোনো ঋণখেলাপি ব্যক্তি জাতীয় সংসদ বা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন না। বাণিজ্যিক ব্যাংক, বিশেষায়িত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে ঋণ নিয়ে খেলাপি হলে তিনি ঋণখেলাপি মুক্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত আর নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না।

পরিপত্র অনুযায়ী, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য মনোনয়নপত্র দাখিলের দিনের আগে সম্ভাব্য প্রার্থীকে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নেওয়া ঋণ বা ঋণের কোনো কিস্তি খেলাপি হয়ে থাকলে তা পরিশোধ করতে হবে। অর্থাৎ মনোনয়নপত্র দাখিলের কমপক্ষে আগের দিন থেকে তাকে খেলাপি মুক্ত হতে হবে। এর আগে পরিশোধ করলেও কোনো সমস্যা নেই। নির্বাচনি তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন হচ্ছে ২৯ ডিসেম্বর। ফলে যেসব প্রার্থী ২৯ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র জমা দেবেন তাকে কমপক্ষে ২৮ ডিসেম্বর ঋণখেলাপি মুক্ত হতে হবে।

এছাড়াও প্রার্থী হতে হলে সর্বশেষ কর বছরের আয়কর রিটার্ন দাখিলের কপি জমা নিতে হবে। সরকারি সংস্থার লাভজনক পদে থাকলেও তিনি প্রার্থী হতে পারবেন না। সরকারি লাভজনক পদ বলতে পরিপত্রে যে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে, তা হলো কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠান বা সরকারের ৫০ শতাংশের বেশি শেয়ার রয়েছে এমন প্রতিষ্ঠানে সার্বক্ষণিক কোনো পদ বা সমমর্যাদার কোনো পদে অধিষ্ঠিত থাকা ব্যক্তিও নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না।

সূত্রমতে, ব্যাংকগুলোকে কাল থেকে ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তার অফিসে যোগাযোগ রাখতে বলা হবে। ওই সময়ের মধ্যে যারা যেদিন মনোনয়নপত্র জমা দেবে তাদের নাম তালিকা বিশুদ্ধভাবে সংগ্রহ করে প্রতিটি ব্যাংকে মিলিয়ে দেখতে হবে প্রার্থীর নামে কোনো খেলাপি ঋণ আছে কিনা। খেলাপি ঋণ থাকলে তার বিস্তারিত তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানাতে হবে। এবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সিআইবি অনলাইনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে যুক্ত। ফলে মনোনয়পত্র জমা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের তথ্য সংগ্রহ করে ঋণখেলাপি প্রার্থীদের নির্ভূল তালিকা করা হবে। ওই তালিকা মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সময় উপস্থাপন করা হবে। ৩০ ডিসেম্বর থেকে ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত মনোনয়নপত্র বাছাই করবেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। ওই সময়ে ব্যাংক থেকে ঋণখেলাপি প্রার্থীর ব্যাপারে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে আপত্তি তোলা হবে। এতে কোনো ঋণখেলাপি পার পেয়ে গেলে রিটানিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিলের তারিখে ব্যাংকগুলো সেখানে আপিল করবে। ৫ থেকে ১১ জানুয়ারি রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে। নির্বাচন কমিশন আপিল নিষ্পত্তি করবে ১২ থেকে ১৮ জানুয়ারি। ওই সময়ে কমিশনে আপিল শুনানিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত থেকে আপিল শুনানি করবেন।