আখতারুন নাহার আলো
প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
গম আমাদের প্রধান খাবারের মধ্যে পড়ে। এ গমের মধ্যে থাকে গ্লুটেনিন ও স্লাইয়াডিন। এর সমম্বয়ে গ্লুটেন তৈরি হয়। সিরিয়ালে যখনই পানিযুক্ত হয় তখনই গ্লুটেন উৎপন্ন হয়। যার বৈশিষ্ট্যের জন্যই রুটি, পরোটা বানানো সম্ভব। আবার গ্লুটেন না থাকলে পাউরুটি বানানো একেবারেই অসম্ভব। ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোমের (আইবিএস) ক্ষেত্রে গ্লুটেন ফ্রি খাবার বেশ কার্যকর। গ্লুটেন এক ধরনের প্রোটিন। এটি অদ্রবণীয়। ভেজা গ্লুটেন সংযোগশীল, স্থিতিস্থাপক, হালকা ছিদ্রযুক্ত। গ্লুটেনে থাকে ৮৫ শতাংশ প্রোটিন, ৮ শতাংশ চর্বি ও বাকি অংশ শর্করা। এটা এক ধরনের জটিল প্রোটিন ও গম, বার্লি, রাই ইত্যাদিতে এ গ্লুটেন পাওয়া যায়। যা চালের মধ্যে থাকে না। অনেকের শৈশব থেকেই গ্লুটেন সংবেদনশীলতা থাকে। এর বিশেষত্ব হলো আটা বা ময়দার খামির টানলে অনেকটা রাবারের মতো মনে হয়। এটি পাউরুটিকে আকার দেয় ও বড় করে। রোগের কারণে খাবার থেকে গ্লুটেন বাদ দিলে পুষ্টির ঘাটতি হতে পারে। কারণ, গমের পুষ্টি থেকে মানুষ বঞ্চিত হয়। এ জন্য ফরটিফায়েড রুটি খাওয়া উচিত। গ্লুটেনে থাকে দ্রবণীয় আঁশ। যারা এটা হজম করতে পারে, তাদের জন্য কোনো সমস্যা নয়। ময়দার ভেতর গ্লুটেন কম থাকলে বিস্কুট তৈরি করা যায়। কিন্তু পাউরুটি তৈরি করা যায় না। বেকিংয়ের গুণাগুণ নির্ভর করে গ্লুটেনের পরিমাণ প্রকারভেদের ওপর। গ্লুটেনের স্থিতিস্থাপকতার জন্য খামির ছিঁড়ে যায় না বলে রুটির জমিন মসৃণ হয়। সুজিতে গ্লুটেন থাকে ৭.৫ শতাংশ। তবে সুজিকে কয়েক ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রেখে পাতলা কাপড় দিয়ে ছেঁকে নিলে বিশুদ্ধ শ্বেতসার ও গ্লুটেন আলাদা হয়ে যায়। তবে খর পানিতে ক্যালসিয়াম লবণ থাকলে গ্লুটেনের স্থিতিস্থাপকতা বেড়ে যায়। সোডিয়াম ক্লোরাইড ও গ্লুটেনের ওপর প্রতিক্রিয়া করে। যাদের গ্লুটেন সংবেদনশীলতা আছে তাদের আটা-ময়দা খেলে বেশ কয়েকটি শারীরিক সমস্যা দেখা যায়। এতে অন্ত্রে প্রদাহ, ডায়রিয়া, পেটে ব্যথা, পেটফাঁপা ইত্যাদি হতে পারে। এ সমস্যা ২৪-৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত থাকতে পারে। এ সময় গ্লুটেনযুক্ত খাবার খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বিপর্যস্ত হয়। এ সময় শরীরকে হাইড্রেট রাখতে হবে। বিশ্রাম নিলে অস্বস্তির হাত থেকে বাঁচা যায়। কোনো সময় গ্লুটেনযুক্ত খাবার বেশি খেয়ে ফেললে প্রচুর পানি পান করতে হবে।
সিলিয়াক ডিজিজ : গ্লুটেন সংবেদনশীলতার জন্য যে রোগ হয়, তাকে বলে সিলিয়াক ডিজিজ। এ রোগে হজমের গোলমাল, তলপেটে ব্যথা, পেট ফুলে বড় হয়ে যায়, পেটে গ্যাস হয়, বমি ভাব, পাকস্থলীর অসুস্থতা ও পুষ্টি শোষণে বাঁধাপ্রাপ্ত হয়। কারও কারও ক্ষেত্রে বিষণ্নতা দেখা দেয়। মানুষের অন্ত্রে পাচক এনজাইম থাকে, যা খাবার খাওয়ার ফলে ভাঙতে সাহায্য করে। কিন্তু যাদের গ্লুটেন সংবেদনশীলতা আছে তাদের শরীরে খাবার সম্পূর্ণ ভাঙা যায় না বলে হজমে গোলমাল দেখা দেয়। সিলিয়াক রোগে আক্রান্তদের ক্ষুদ্রান্তের আস্তরণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে ডায়রিয়া, কোষ্টকাঠিন্য, চুলকানি, মাথাব্যথা হতে পারে। এ রোগে গ্লুটেনযুক্ত খাবার খেলে উপকার পাওয়া যায়। গ্লুটেনে থাকে আটা, ময়দা, পাউরুটি, বিস্কুট, বার্গার, সিরিয়ান, ওয়েফার, কেক, টোস্ট বিস্কুট, পাস্তা, পিৎজা, বার্লি, সুজি, সেমাই, বেকারি আইটেম।
গ্লুটেন নেই এমন খাবারগুলো হলো-ভাত, আলু, চিড়া, মুড়ি, আপেলের চিপস, ওটস, মিষ্টি আলু, বাদাম, ফল, শাকসবজি, ভুট্টা, এরারুট, সাগু, চালের গুঁড়া, ডাল, কর্নফ্লেক্স, দুধ, পপকর্ন, তেল-ঘি, মাছ-মাংস।
লেখক : চিফ নিউট্রিশন অফিসার ও বিভাগীয় প্রধান (অব.), বারডেম। সভাপতি, ডায়াবেটিস নিউট্রিশনিস্ট সোসাইটি অব বাংলাদেশ, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, শ্যামলী ও অ্যাডভান্স হাসপাতাল, ঢাকা