ইসির পরিপত্র
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ফাইল ছবি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
আদালত যেসব ব্যক্তিকে ফেরারি বা পলাতক আসামি হিসাবে ঘোষণা করেছেন, তারা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না। এমনকি পদে থেকে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার মেয়র এবং উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরাও প্রার্থী হতে পারবেন না। এমনকি প্রজাতন্ত্রের বা কোনো সংবিধিবদ্ধ সরকারি প্রতিষ্ঠানের লাভজনক পদে থাকা ব্যক্তিরাও ভোট করতে পারবেন না। তবে তারা নিজ পদ থেকে পদত্যাগ করলে প্রার্থী হতে পারবেন। নির্বাচন কমিশনের জারি করা প্রথম পরিপত্রে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
পরিপত্রে বলা হয়েছে, একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ তিনটি আসনে প্রার্থী হতে পারবেন। কেউ তিনটির বেশি আসনে প্রার্থী হলে তার সবকটি মনোনয়নপত্র বাতিল হবে। এ নির্বাচনে যারা প্রার্থী হবেন, তারা নিজে অথবা তার প্রস্তাবক বা সমর্থক সশরীরে রিটার্নিং বা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে সশরীরে মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে।
জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, তফসিল ঘোষণার নিয়ম অনুযায়ী পরিপত্র জারি করা হয়। এর মধ্য দিয়ে রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের আইনের বিধান স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়, যাতে নির্বাচনি কার্যক্রম পরিচালনা সহজ হয়।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ২৯ ডিসেম্বর। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই হবে ৩০ ডিসেম্বর থেকে ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত। একাধিক রিটার্নিং কর্মকর্তা জানান, শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত তারা মনোনয়নপত্র পাননি। তাদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে মনোনয়নপত্র সরবরাহ করা হবে বলে ইসি জানিয়েছে। পরিপত্রে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগের বিষয়ে ইসির সিদ্ধান্ত রিটার্নিং কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, ভোটগ্রহণ প্যানেল অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্রীয় ব্যাংক, বিমা ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা-কর্মচারী পাওয়া না গেলে বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসাবে নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে।
কারা প্রার্থী হতে পারবেন : পরিপত্রে কারা প্রার্থী হতে পারবেন, তাদের যোগ্যতাই বা কী হবে, তা উল্লেখ করা হয়েছে। একইভাবে কারা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য, তার বিবরণও দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে সংবিধানের ৬৬(১)(২) ও আরপিওর ১২(১) অনুচ্ছেদ উল্লেখ করা হয়েছে পরিপত্রে। এতে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি বাংলাদেশের নাগরিক হলে এবং তার বয়স ২৫ বৎসর পূর্ণ হলে তিনি প্রার্থী হতে পারবেন। তবে কোনো আদালত কর্তৃক ফেরারি বা পলাতক ঘোষিত ব্যক্তিরা প্রার্থী হতে পারবেন না। এর ফলে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাসহ দলটির কয়েকজন নেতা প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা হারিয়েছেন।
যারা প্রার্থী হওয়ার যোগ্য নন, তাদের মধ্যে রয়েছে উপযুক্ত আদালত তাকে অপ্রকৃতিস্থ ঘোষিত ব্যক্তি; দেউলিয়া ঘোষিত হওয়ার পর দায় হইতে অব্যাহতি লাভ না করে থাকলে; কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব অর্জন বা আনুগত্য ঘোষণা বা স্বীকার করলে; নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় অন্তত দুই বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং তার মুক্তিলাভের পর পাঁচ বছর পার না হয়ে থাকলে।
১৯৭২ সালের বাংলাদেশ যোগসাজশকারী (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল) আদেশের অধীন কোনো অপরাধের জন্য দণ্ডিত ব্যক্তিরাও প্রার্থী হতে পারবেন না। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অবসরে যাওয়ার তিন বছর পার না হলে তিনিও প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য হবেন। এছাড়া দুর্নীতির কারণে প্রজাতন্ত্রের বা কোনো সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষের চাকরি থেকে বরখাস্ত বা অপসারিত বা বাধ্যতামূলক অবসরপ্রাপ্ত হওয়ার পর পাঁচ বছর পার না হলে এবং ঋণখেলাপি ও টেলিফোন, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানিসহ সরকারের বিভিন্ন সেবার বিল খেলাপিরাও প্রার্থী হতে পারবেন না।