আ.লীগও এখন চায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার!
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২১ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
অন্যায়ভাবে ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ ব্যবস্থা বাতিল করে পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়া ধ্বংস করেছিল আওয়ামী লীগ।
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
অন্যায়ভাবে ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ ব্যবস্থা বাতিল করে পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়া ধ্বংস করেছিল আওয়ামী লীগ। এরপর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একতরফাভাবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার নির্বাচন, দিনের ভোট রাতে করা এবং ‘আমি-ডামি’র তিনটি নির্বাচন করে অবৈধভাবে ক্ষমতায় টিকে ছিল দলটি। সে সময় বিরোধী রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, আইন ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ কিংবা আন্তর্জাতিক মহলের বারণের পরেও চরম একগুঁয়ে অবস্থায় ছিল দলটি। তবে চব্বিশের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে পতনের পর দেশের রাজনীতিতে যে বাঁক পরিবর্তন হয়েছে, এই বাঁক পরিবর্তনে বিএনপিসহ বিরোধীদের দাবিটিই এখন আওয়ামী লীগ করছে। দলটির নেতারাও বলছেন, তারাও নাকি এখন ‘নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ ব্যবস্থার অধীনেই নির্বাচন করতে চান।
এক সময় এই দাবি ছিল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ ২০ দলীয় জোটের। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ এবং তাদের মিত্র ১৪ দল ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের পক্ষে।
কিন্তু ইতিহাসের কী নির্মম পরিণতি আজ বিএনপি এবং জামায়াতের সমর্থকরা ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা আপিল ও আপিলের রিভিউয়ের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে এনেছে। ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনে ক্ষমতা হারানো আওয়ামী লীগও বলছে, তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়। অথচ তারা শুধু তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিলই করেনি, তখন যারা এই দাবি জানিয়েছিলেন তাদের নানা ভাবে তুচ্ছতাচ্ছিল্যও করতে ছাড়েননি। তখন তাদের ভাষায় তত্ত্ববধায়ক সরকার ছিল ‘মরা ইস্যু’।
কিন্তু এখন নিজেরাই সেই দাবি জানাচ্ছেন! এর পক্ষে আবার যুক্তি তুলে ধরার চেষ্টাও করছেন। খোদ শেখ হাসিনা নিজেও এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে! ১৮ আগস্ট এক অডিও বক্তব্যে তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনের আগে ইউনূসকে সরে যেতে হবে। একই সঙ্গে একটি নিরপেক্ষ সরকার করে তার অধীনে নির্বাচন দেওয়ার কথাও বলেন তিনি। ওই বক্তব্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের কথাও বলেছিলেন শেখ হাসিনা। তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ও তার একাধিক বক্তব্যে ‘নিরপেক্ষ’ সরকারের অধীনে নির্বাচনে কথা বলেছেন।
এছাড়া আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য এবং সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত জানুয়ারিতে তার ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘একটি নতুন (তত্ত্বাবধায়ক) সরকারের অধীনে হতে হবে পরবর্তী নির্বাচন। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সব দল এবং ব্যক্তির জন্য যেন সমান সুযোগ থাকে সেই পরিবেশ তৈরি করতে হবে। আওয়ামী লীগের সব নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে দেওয়া মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। রাজবন্দিদের মুক্তি দিতে হবে এবং জঙ্গি এবং শীর্ষ সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করতে হবে।’ এরপর আরেক ফেসবুক পোস্টে অডিও বার্তায় কেন তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার চান তার ব্যাখ্যাও দেন।
আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাদের অনেকেও এখন একই দাবি জানাচ্ছেন। ২২ অক্টোবর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ভাই এবং নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বসুরহাট পৌরসভার সাবেক মেয়র আব্দুল কাদের মির্জা পুনরায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা গঠনের কথা বলেছিলেন। তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে কাদের মির্জা লিখেছিলেন, ‘সব দল আলাপ-আলোচনা করে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। তাহলে দেশে সত্যিকার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে।
