সাক্ষাৎকার
ইবিএলের বায়োমেট্রিক মেটাল কার্ডে ফিঙ্গারপ্রিন্টভিত্তিক নিরাপত্তা
আলী রেজা ইফতেখার, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ইস্টার্ন ব্যাংক পিএলসি
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ৩০ নভেম্বর ২০২৫, ০৩:১৭ এএম
আলী রেজা ইফতেখার।
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
যুগান্তর : দেশে ক্যাশলেস লেনদেন বাস্তবায়নে কী কী উদ্যোগ নিচ্ছেন?
আলী রেজা ইফতেখার : বাংলাদেশ দ্রুতই একটি ক্যাশলেস ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, যেখানে দৈনন্দিন লেনদেন আরও সুবিধাজনক এবং নিরাপদ হয়ে উঠছে। দেশের এই ডিজিটাল রূপান্তরের লক্ষ্য পূরণে ইস্টার্ন ব্যাংক পিএলসি (ইবিএল) অঙ্গীকারবদ্ধ। এই ভিশনের অংশ হিসাবে ইস্টার্ন ব্যাংক ২০২৩ সালে চালু করেছে WEAREBL, দেশের প্রথম ওয়্যারেবল পেমেন্ট ডিভাইস, যা দৈনন্দিন লেনদেনে এনে দিয়েছে কন্ট্যাক্টলেস পেমেন্টের স্মার্ট অভিজ্ঞতা। ২০২৫ সালে ইবিএল বিশ্বে প্রথমবারের মতো নিয়ে এসেছে বায়োমেট্রিক মেটাল কার্ড—যেখানে ফিঙ্গারপ্রিন্টভিত্তিক নিরাপত্তা থাকছে কার্ড পেমেন্টের সঙ্গে।
ইবিএল স্কাই ব্যাংকিং অ্যাপ এখন আরও উন্নত, সহজবোধ্য ও ব্যবহারবান্ধব। এই অ্যাপের মাধ্যমে ফান্ড ট্রান্সফার, বিল পেমেন্ট, মোবাইল রিচার্জ, কার্ড পেমেন্ট, সার্টিফিকেটস ও স্টেটমেন্টস ডাউনলোড সুবিধাসহ সব সুবিধা গ্রাহক এখন পাচ্ছেন হাতের মুঠোয়।
এছাড়া ইবিএল বাজারে এনেছে ভার্চুয়াল কার্ড, যা Visa, Mastercard, UnionPay International (UPI) Ges Diners Club International (DCI) এই চারটি প্রধান ডিজিটাল পেমেন্ট নেটওয়ার্ককে একসঙ্গে সাপোর্ট করে। অনলাইন ও অফলাইন পেমেন্টে এই ভার্চুয়াল কার্ড নিরাপদ এবং ফিজিক্যাল কার্ডের প্রয়োজনীয়তা দূর করে।
ইবিএলের কন্ট্যাক্টলেস কার্ডগুলো ডেবিট, ক্রেডিট ও প্রিপেইড এনএফসি প্রযুক্তির মাধ্যমে দ্রুত ও নিরাপদ লেনদেন নিশ্চিত করছে। এছাড়া গ্রিন অ্যাকাউন্ট ও দেশের প্রথম ১০০% রিসাইকেলড ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে ইবিএল তার সামাজিক উন্নয়নের প্রতিশ্র“তি আরও শক্তিশালী করছে।
ইস্টার্ন ব্যাংক এমএফএস প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে ইন্টারঅপারেবিলিটি নিশ্চিত করেছে, যা ডিজিটাল লেনদেনকে আরও সহজ করেছে। এম-কমার্স ও ই-কমার্স ইন্টিগ্রেশন লেনদেনকে করেছে নির্বিঘ্ন। একই সঙ্গে, বাংলা ছজ পেমেন্ট সিস্টেম হাজারো মার্চেন্টে তাৎক্ষণিক ও নিরাপদ লেনদেনের সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
শক্তিশালী সাইবার নিরাপত্তা, ডিজিটাল লিটারেসি প্রোগ্রাম এবং প্ল্যাটফর্ম ইন্টারঅপারেবিলিটির মাধ্যমে ইস্টার্ন ব্যাংক পিএলসি, ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ে তৈরি করছে আস্থা-যা বাংলাদেশকে একটি সত্যিকারের ক্যাশলেস ভবিষ্যতের আরও কাছে নিয়ে যাচ্ছে।
যুগান্তর : ভারত, শ্রীলংকা ও পাকিস্তানের মতো বিদেশি অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো হচ্ছে কিনা?
আলী রেজা ইফতেখার : ইবিএলে আমরা দক্ষিণ এশিয়ার সফল উদাহরণগুলো নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করি এবং অভিজ্ঞতা থেকে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা নেওয়ার চেষ্টা করি। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের ইউপিআইর আদলে ইবিএল ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ বাংলাদেশ (NPSB) প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে সংযুক্ত। এটি ইবিএল এবং মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (MFS) অপারেটর এবং পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডারদের (পিএসপি) মধ্যে তাৎক্ষণিক ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার সুবিধা প্রদান করছে।
এছাড়াও বাংলা কিউআরের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আমরা আন্তঃব্যাংক লেনদেন সহজ করেছি। পাশাপাশি, শ্রীলংকার মতো এআই ব্যবহারের দিকেও নজর দিচ্ছি, যাতে গ্রাহককেন্দ্রিক আরও স্মার্ট ব্যাংকিং পরিষেবা আনা যায়।
এসব দেশ কীভাবে রিয়েল-টাইম পেমেন্ট, সিস্টেম সিকিউরিটি, কম খরচে ফান্ড ট্রান্সফার মডেল, মার্চেন্ট অনবোর্ডিং এবং ডিজিটাল লোন সেবা দিয়ে থাকে, এসব অভিজ্ঞতা আমরা আমাদের ডিজিটাল পরিকল্পনা তৈরিতে কাজে লাগাচ্ছি। অবশ্যই, বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা ও স্থানীয় গ্রাহকের ব্যবহারের ধরন অনুসারে এসব অভিজ্ঞতা আমরা ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করছি।
যুগান্তর : ভারতে ক্যাশলেস পেমেন্ট সফল হওয়ার অন্যতম কারণ হলো সেখানে পিটুপি ট্রান্সফার ও অধিকাংশ কিউআর লেনদেনে কোনো চার্জ নেই। পাকিস্তানে পিটুপি ট্রান্সফারে কোনো খরচ নেই। এসব ফলো করা হচ্ছে কিনা?
আলী রেজা ইফতেখার : বাংলাদেশে ডিজিটাল লেনদেনের চার্জ অনেকটাই বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালাভিত্তিক, তাই সরাসরি ভারত বা পাকিস্তানের ফ্রি মডেল অনুসরণ করা সম্ভব নয়। তবে আমাদের লক্ষ্য স্পষ্ট—ডিজিটাল লেনদেনকে যতটা সম্ভব জনপ্রিয় করা।
আমরা তাই নিচের বিষয়গুলো কার্যকর করেছি :
> ইবিএল স্কাই ব্যাংকিং অ্যাপ এবং অন্যান্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ক্যাশলেস লেনদেন আরও সহজ ও নিরাপদ করা।
> P2P ট্রান্সফারকে সাশ্রয়ী ও ব্যবহারবান্ধব রাখা।
> মার্চেন্টদের জন্য উপযোগী চার্জ মডেল তৈরি করা।
> ভবিষ্যতে আরও কম খরচের ট্রান্সফার মডেল আনার পরিকল্পনা।
ইকোসিস্টেম যত বড় হবে এবং প্রযুক্তির খরচ যত কমবে, ফ্রি বা লো-কস্ট মডেল বাস্তবায়নের সুযোগ তত বাড়বে।
যুগান্তর : সেবার মান ও নিরবচ্ছিন্ন কার্যকারিতার জন্য কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে?
আলী রেজা ইফতেখার : নিরবচ্ছিন্ন এবং নিরাপদ ডিজিটাল ব্যাংকিং নিশ্চিত করতে আমরা নানাবিধ উদ্যোগ নিয়েছি। আমাদের রিয়েল টাইম ট্রানজেকশন মনিটরিং, নেটওয়ার্ক এবং ফ্রড ডিটেকশন সিস্টেম রয়েছে যা আমরা ২৪/৭ পর্যবেক্ষণ করে থাকি।
অ্যাডভান্সড সাইবার সিকিউরিটি ব্যবস্থার মাধ্যমে মালটি-লেয়ার ফায়ারওয়াল, এআইভিত্তিক ফ্রড বিশ্লেষণ, ডার্কওয়েব মনিটরিং এবং বায়োমেট্রিক নিরাপত্তা ব্যবহার করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার সঙ্গে মিল রেখে আমরা পিরিয়ডিক অডিট, ভিএপিটি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় কমপ্লায়েন্স বিষয়গুলো নিশ্চিত করি। পাশাপাশি, গ্রাহক সেবায় দ্রুত সমাধান দিতে আমাদের ২৪ ঘণ্টা কন্ট্যাক্ট সেন্টার, ইন-অ্যাপ সাপোর্ট এবং ইবিএল স্মার্ট আইভিআর সেবা রয়েছে। মূলত আমাদের ফোকাস সব সময় নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা এবং গ্রাহক সুবিধা নিশ্চিত করার দিকে।
যুগান্তর : মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস), ইন্টারনেট ব্যাংকিং, কার্ড পেমেন্ট ও অন্যান্য ডিজিটাল চ্যানেলের কী কী চ্যালেঞ্জ রয়েছে?
আলী রেজা ইফতেখার : মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস, ইন্টারনেট ব্যাংকিং এবং কার্ড পেমেন্টের ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জ এখনো বিদ্যমান। এসব ক্ষেত্রে ফ্রড এবং সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বড় একটি চ্যালেঞ্জ। SIM swap এবং OTP সংক্রান্ত ঝুঁকি এখনো আছে এবং গ্রামাঞ্চলের গ্রাহকরা ডিজিটাল লেনদেনে পুরোপুরি অভ্যস্ত নন।
তাই আমাদের জন্য গ্রাহককে সচেতন করা এবং নিরাপদ ডিজিটাল লেনদেনের বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সব সময় গ্রাহককে ফ্রড এবং নিরাপত্তা ঝুঁকি থেকে সচেতন করতে এবং নিরাপদ ডিজিটাল অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছি।
