সাক্ষাৎকার
তিন লাখের বেশি গ্রাহক ‘মাইপ্রাইম’ অ্যাপ ব্যবহার করছেন
এম নাজিম এ চৌধুরী, ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর, প্রাইম ব্যাংক পিএলসি
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ৩০ নভেম্বর ২০২৫, ০৩:৪২ এএম
এম নাজিম এ চৌধুরী।
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
যুগান্তর : দেশের ব্যাংকগুলো অ্যাপ লেনদেনের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে—এতে সুফল কতটা মিলেছে?
এম নাজিম এ চৌধুরী : বর্তমানে বাংলাদেশে ক্যাশলেস লেনদেন বাড়ছে। যার প্রভাব ব্যাংকিং খাতেও আছে। ক্যাশলেস লেনদেনের জন্য দেশের প্রায় সব ব্যাংক অ্যাপভিত্তিক লেনদেনের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। ফলে গ্রাহক ও ব্যাংক উভয়ই অনেক সুফল পাচ্ছে। প্রায় সব ব্যাংক এখন নিজস্ব মোবাইল অ্যাপ চালু করেছে। প্রাইম ব্যাংক পিএলসি ২০২২ সালে চালু করে ‘মাইপ্রাইম’ অ্যাপ। এই অ্যাপ চালু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ২৫,০০০ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে, যা ১ কোটি ১২ লক্ষাধিক লেনদেনের সমান। বর্তমানে প্রায় ৩ লাখের বেশি গ্রাহক ‘মাইপ্রাইম’ অ্যাপ ব্যবহার করছেন। ঘরে বসেই টাকা পাঠানো, বিল পরিশোধ, অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স দেখা কিংবা ক্রেডিট কার্ড বিল মেটানো—সবই এখন মুহূর্তেই করা সম্ভব। ফলে সময় ও শ্রম সাশ্রয় হচ্ছে এবং ব্যাংকে গিয়ে লাইনে দাঁড়ানোর প্রয়োজনীয়তা কমেছে। পাশাপাশি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীও কিউআর কোড ও ইনস্ট্যান্ট পেমেন্ট সুবিধা কাজে লাগাচ্ছেন। বলা যায়, এটি একটি ইতিবাচক পরিবর্তন, যা দেশের ব্যাংকিং খাতকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছে।
যুগান্তর : মানুষ সেলফ-সার্ভিস ব্যাংক সেবায় আগ্রহী হয়ে উঠছেন, ঘরে বসে সব ব্যাংকিং করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। অ্যাপ লেনদেন তারই প্রমাণ। এই সেবার ভবিষ্যৎ কী?
এম নাজিম এ চৌধুরী : সেলফ-সার্ভিস ব্যাংকিং সেবার প্রতি মানুষের আগ্রহ ব্যাপকভাবে বাড়ছে, আর ‘মাইপ্রাইম’-এর জনপ্রিয়তা তার স্পষ্ট উদাহরণ। মাত্র তিন বছরের মধ্যে এ প্ল্যাটফর্মের লেনদেনের সংখ্যা ও পরিমাণ প্রতিবছর গড়ে ১৫০ শতাংশের বেশি হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। গ্রাহকরা নিজেরাই ব্যাংকিং নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন। গ্রাহকরা যখন যেমন প্রয়োজন সেভাবেই ব্যাংকিং সেবা নিতে পারছেন। বিশেষ করে—ব্যালেন্স চেক, বিল পরিশোধ, ঋণ আবেদন, এমনকি অ্যাকাউন্ট খোলার মতো সেবা অ্যাপেই সম্পন্ন করছেন। ভবিষ্যতে এ সেবা আরও উন্নত হবে, যেখানে থাকবে এআই-ভিত্তিক কাস্টমার সাপোর্ট, স্বয়ংক্রিয় ব্যয় বিশ্লেষণ এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে লোন অনুমোদন। ক্যাশলেস বাংলাদেশ গড়ার পথে ব্যাংকগুলোর এসব সেবা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
যুগান্তর : অ্যাপের মাধ্যমে লেনদেনে কোনো ঝুঁকি আছে কী? নিরাপত্তা নিয়ে গ্রাহকরা কতটা সচেতন?
এম নাজিম এ চৌধুরী : অ্যাপভিত্তিক লেনদেন জনপ্রিয় হলেও এর সঙ্গে কিছু ঝুঁকি থেকেই যায়, যেমন ফিশিং, হ্যাকিং, ভুয়া অ্যাপ ইত্যাদি। তবে এক্ষেত্রে গ্রাহকরা সচেতন থাকলে এসব ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো সম্ভব। অনেক গ্রাহক এখনো ভুল লিংকে ক্লিক করে বা দুর্বল পাসওয়ার্ড ব্যবহারের কারণে প্রতারণার শিকার হন। তবে ব্যাংকগুলো এই ঝুঁকি মোকাবিলায় বহুমাত্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা (টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন, এনক্রিপশন, রিয়েল-টাইম ফ্রড মনিটরিং) গ্রহণ করছে। পাশাপাশি গ্রাহকদের সচেতন করার জন্য নিয়মিত প্রচারণা চলছে। ‘মাইপ্রাইম’ ব্যবহারকারীর সংখ্যা যেহেতু দ্রুত বাড়ছে, তাই গ্রাহকদের নিরাপদ লেনদেনে অভ্যস্ত করতে প্রাইম ব্যাংক ডিজিটাল শিক্ষার প্রচারণা আরও জোরদার করেছে।
যুগান্তর : ভবিষ্যতে অ্যাপের মাধ্যমে দিনে লেনদেন কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে?
এম নাজিম এ চৌধুরী : বাংলাদেশে অ্যাপভিত্তিক লেনদেন প্রতিদিনই দ্রুত বাড়ছে। মাইপ্রাইম চালুর মাত্র তিন বছরে ২৫,০০০ কোটি টাকার লেনদেনের মাইলফলক অতিক্রম করেছে। বর্তমান প্রবণতা অব্যাহত থাকলে আগামী কয়েক বছরে দৈনিক লেনদেনের পরিমাণ সহজেই কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেতে পারে। বিশেষ করে ই-কমার্স, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ইউটিলিটি বিল ও খুচরা ব্যবসায় কিউআর পেমেন্টের ব্যবহার বাড়লে ডিজিটাল লেনদেন দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হয়ে উঠবে। এর সঙ্গে যুক্ত হবে ক্যাশলেস সমাজের স্বপ্ন পূরণের বাস্তবতা।
যুগান্তর : অ্যাপের মাধ্যমে গ্রাহকরা কী কী সেবা গ্রহণ করছেন?
এম নাজিম এ চৌধুরী : অ্যাপভিত্তিক ব্যাংকিং এখন অনেক বিস্তৃত। প্রাইম ব্যাংকের ‘মাইপ্রাইম’ ব্যবহার করে গ্রাহকরা টাকা পাঠানো, অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স দেখা, স্টেটমেন্ট ডাউনলোড, চেক অনুরোধ, ক্রেডিট কার্ড বিল ও ইউটিলিটি বিল পরিশোধ, মোবাইল রিচার্জ এবং কিউআর স্ক্যান করে সরাসরি পেমেন্ট করার মতো বিভিন্ন সেবা গ্রহণ করতে পারছেন। পাশাপাশি অ্যাপ থেকেই নতুন অ্যাকাউন্ট খোলার সুবিধাও চালু হয়েছে। উন্নত লাইভ চ্যাট সাপোর্ট, লোন আবেদন, ইনভেস্টমেন্ট ইনসাইটসসহ নানা ধরনের ফিচার গ্রাহকের অভিজ্ঞতাকে আরও সমৃদ্ধ করছে। সব মিলিয়ে, এটি গ্রাহকদের সময়, খরচ এবং ঝামেলা অনেকাংশে কমিয়ে দিয়েছে।
যুগান্তর : অ্যাপভিত্তিক লেনদেন নিয়ে আপনাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
এম নাজিম এ চৌধুরী : ভবিষ্যতে ‘মাইপ্রাইম’-কে আরও উন্নত, নিরাপদ এবং গ্রাহকবান্ধব করতে নতুন অনেক ফিচার আনার পরিকল্পনা রয়েছে। গ্রাহকের ব্যয় প্যাটার্ন বিশ্লেষণ, সঞ্চয় পরিকল্পনা এবং ঋণগ্রহণের যোগ্যতা নির্ধারণে এআই ও মেশিন লার্নিং ব্যবহার করা হবে। এছাড়া এই প্ল্যাটফর্মে ব্রাঞ্চলেস ব্যাংকিং, আন্তর্জাতিক লেনদেন ও ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্ট সেবা যুক্ত করার চেষ্টা চলছে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য আরও সহজ ভাষায় অ্যাপ ইন্টারফেস তৈরি করার উদ্যোগ চলমান, যাতে তাদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি আরও বাড়ে। ‘মাইপ্রাইম’-এর মাধ্যমে একটি আধুনিক, নিরাপদ ও সর্বজনীন ব্যাংকিং অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য।
