লেনদেনে শূন্য চার্জ নিশ্চিতের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৫:০৬ পিএম
এম শামসুল আরেফিন। সংগৃহীত ছবি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
যুগান্তর : দেশে ক্যাশলেস লেনদেন বাস্তবায়নে কী কী উদ্যোগ নিচ্ছেন?
এম শামসুল আরেফিন : দেশে ক্যাশলেস লেনদেনকে ত্বরান্বিত করতে এনসিসি ব্যাংক বেশ কিছু কেৌশলগত উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে। আমরা এমএফএস ও ব্যাংক এর মধ্যে আন্তঃসংযোগ আরও শক্তিশালী করেছি, যার ফলে গ্রাহকরা সহজেই ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে মোবাইল ওয়ালেটে এবং পুনরায় ওয়ালেট থেকে ব্যাংকে লেনদেন করতে পারছেন।
একই সঙ্গে বাংলা কিউআর ভিত্তিক পেমেন্ট ব্যবস্থার সম্প্রসারণের কাজ চলছে, যা ক্ষুদ্র ব্যবসা ও খুচরা পর্যায়ে কম খরচে নিরাপদ লেনদেন নিশ্চিত করবে। আমরা শিগগিরই ডিজিটাল অ্যাকাউন্ট রেজিস্ট্রেশন, ডিজিটাল ন্যানো লোন, বাই নাউ পে লেটার সেবা এবং কিউআর ভিত্তিক ক্যাশ উত্তোলন চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছি।
ব্যক্তি শ্রেণীর গ্রাহকদের জন্য এনসিসি অলওয়েজ অ্যাপ ভিত্তিক সার্ভিস যেমন রয়েছে তেমনি করপোরেট গ্রাহকদের জন্য এনসিসি আইকন নামে একটি পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল করপোরেট ব্যাংকিং প্ল্যাটফর্ম চালু করা হয়েছে। এইসব উদ্যোগ গ্রাহকদের ২৪/৭ অনলাইন ট্রানজেকশন সুবিধা দিচ্ছে এবং ডিজিটাল লেনদেনকে আরও সহজ, নিরাপদ ও গ্রাহকবান্ধব করেছে যা ক্যাশলেস বা লেসক্যাশ লেনদেন বাস্তবায়নের জন্য উদ্যোগ।
যুগান্তর : ভারত, শ্রীলঙ্কা ও পাকিসত্মানের মতো বিদেশি অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো হচ্ছে কিনা?
এম শামসুল আরেফিন : ডিজিটাল পেমেন্ট ইকোসিস্টেম শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সবসময় প্রতিবেশী দেশের অভিজ্ঞতা পর্যালোচনা করে থাকে। ভারত, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান ডিজিটাল লেনদেনের ক্ষেত্রে উলে্লখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে, বিশেষত UPI-ভিত্তিক পেমেন্ট, কিউআর কোড ইকোসিস্টেম এবং ইন্টার-অপারেবিলিটি মডেল- এ।
আমরা বিশেষভাবে ভারতের UPI মডেল, পাকিস্তানের Raast সিস্টেম এবং শ্রীলঙ্কার জাতীয় কিউআর ব্যবস্থা থেকে শিক্ষাগ্রহণ করছি— যেখানে গ্রাহকবান্ধব সেবা, দ্রুত লেনদেন, কম খরচ এবং বিস্তৃত জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এনপিএসবি-এর সক্ষমতা বৃদ্ধি, বাংলা কিউআর ইন্টারঅপারেবিলিটি এবং ডিজিটাল ফাইন্যান্সের জন্য দৃঢ় সাইবার নিরাপত্তা কাঠামো তৈরি করেছে। ফলে দক্ষিণ এশিয়ার সফল উদাহরণগুলো আমাদের ডিজিটাল জার্নিকে আরও গতিশীল করছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এ-ব্যাপারে আরও উদ্যোগ নিচ্ছে। যেমন : শিগগিরই দেশে Instant & Inclusive Payment Systems (IIPS) এ Instant Payment Platform (IPP) চালু হবে এবং এর ফলে দেশের সব ব্যাংক, এমএফএস ও এনজিও গুলো ইন্টারঅপারেবিলিটি সিস্টেমে ইন্টিগ্রেটেড থাকবে।
যুগান্তর : ভারতে ক্যাশলেস পেমেন্ট সফল হওয়ার অন্যতম কারণ হলো পিটুপি ট্রান্সফার ও অধিকাংশ কিউআর লেনদেনে কোনো চার্জ নেই। পাকিসত্মানে পিটুপি ট্রান্সফারে কোনো খরচ নেই। এসব ফলো করা হচ্ছে কিনা?
এম শামসুল আরেফিন : ভারত ও পাকিস্তানের মতো দেশে পিটুপি (ব্যক্তি-টু-ব্যক্তি) লেনদেনে শূন্য বা নূ্যনতম চার্জ থাকায় ডিজিটাল পেমেন্ট দ্রুত জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বাংলাদেশও একই ধরনের সুবিধা প্রদান করার দিকেই অগ্রসর হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে এনপিএসবি–এর মাধ্যমে স্বল্পমূল্যে ইন্টার-ব্যাংক লেনদেন নিশ্চিত করছে, এবং কিউআর-ভিত্তিক অনেক লেনদেনে ইতোমধ্যে কোনো চার্জ নেই বা খুবই কম চার্জ রাখা হচ্ছে। বাংলা কিউআর চালুর মাধ্যমে কম খরচে পেমেন্টের সুযোগ আরও বিস্তৃত হবে, যা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সাধারণ গ্রাহক পর্যন্ত সবার জন্যই উপকারী হবে।
ভবিষ্যতে ডিজিটাল লেনদেনকে আরও সাশ্রয়ী করতে∏বিশেষ করে ছোট অংকের লেনদেনে∏শূন্য বা নূ্যনতম চার্জ নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার, ব্যাংক ও এমএফএস সেক্টরের মধ্যে চার্জ কাঠামো আরও যেৌক্তিক করার বিষয়ে আলোচনা চলমান আছে এবং Instant & Inclusive Payment Systems (IIPS) এ Instant Payment Platform (IPP) চালু হলে এটা বাস্তবায়ন সহজ হবে।
যুগান্তর : সেবার মান ও নিরবচ্ছিন্ন কার্যকারিতার জন্য কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে?
এম শামসুল আরেফিন: গ্রাহকদের জন্য দ্রুত, নিরাপদ ও নিরবচ্ছিন্ন সেবা নিশ্চিত করতে ব্যাংকের পুরো ডিজিটাল অবকাঠামোকে আধুনিকায়ন করা হয়েছে। মূল পদক্ষেপগুলো হলো—
• ব্যাংকের ডেটা সেন্টার ও ডিজাস্টার রিকভারি সাইট (ডিআরএস) আন্তর্জাতিক মানে উন্নিত করা হয়েছে। ২৪/৭ মনিটরিং ব্যবস্থার মাধ্যমে ডিজিটাল সেবার ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করা হচ্ছে।
• বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী সাইবার সিকিউরিটি ফ্রেমওয়ার্ক আপডেট করা হয়েছে। ফায়ারওয়াল, অ্যান্টি-ম্যালওয়্যার, এআই-ভিত্তিক থ্রেট ডিটেকশন সিস্টেমসহ উন্নত সিকিউরিটি টুল ব্যবহূত হচ্ছে।
• ডিজিটাল ব্যাংকিং, সাইবার নিরাপত্তা ও গ্রাহকসেবা বিষয়ে ব্যাংক কর্মকর্তাদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে।
এই উদ্যোগগুলো সম্মিলিতভাবে গ্রাহকের নিরাপদ ও নিরবচ্ছিন্ন ডিজিটাল ব্যাংকিং অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করছে।
যুগান্তর : মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস), ইন্টারনেট ব্যাংকিং, কার্ড পেমেন্ট ও অন্যান্য ডিজিটাল চ্যানেলের কী কী চ্যালেঞ্জ রয়েছে?
এম শামসুল আরেফিন : বাংলাদেশের ডিজিটাল পেমেন্ট ইকোসিস্টেম সম্প্রসারিত হলেও কিছু মেৌলিক চ্যালেঞ্জ এখনো বিদ্যমান। যেমন:
• ব্যাংক এমএফএস সম্পূর্ণ ইন্টার অপারেবিলিটি না থাকা, প্রতারণা ও ফিশিং ঝুঁকি এবং ব্যাপক পর্যায়ে ডিজিটাল সচেতনতার ঘাটতি।
• সাইবার থ্রেট বৃদ্ধি, অনলাইন লেনদেনে গ্রাহকের আস্থা কম এবং স্মার্ট ফোনের উচ্চ মূল্যের জন্য সীমিত ব্যবহারসহ ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের নেটওয়ার্কের সীমাবদ্ধতা।
• উচ্চ ইন্টারনেট চার্জ, পয়েন্ট অব সার্ভিস (পিওএস)– নেটওয়ার্ক বিস্তারে ধীরগতি এবং বাধ্যতামূলক ডকুমেন্টেশন এর কারণে কার্ড গ্রহণযোগ্যতা কম।
• এছাড়াও ডিজিটাল সাক্ষরতার অভাব, নিরাপত্তা সচেতনতার ঘাটতি এবং গ্রাহকদের নগদ লেনদেনের প্রবণতা।
এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ব্যাংকসমূহ, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সরকারের সমন্বিত প্রচষ্টো জরুরি।
এম শামসুল আরেফিন
ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এনসিসি ব্যাংক পিএলসি
