Logo
Logo
×

সাহিত্য সাময়িকী

বাংলা ভাষার অমরকাব্য

Icon

ড. নূর-ই আলম সিদ্দিকী

প্রকাশ: ০৩ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বাংলা ভাষার অমরকাব্য

কবিতা আদি শৈল্পিক সৃষ্টি এবং তা ব্যক্তির আবেগ ও কল্পনার মন্থনে মূর্ত। সমন্বিত এ রূপসৃষ্টির শরীর নিয়ে কালান্তরে হয়েছে ব্যাপক পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও অনুসন্ধান। ‘আবহমান জীবন সভ্যতার চলিষ্ণু সরণিতে কবিতার সৃজন ও রসসম্ভোগে পরিবর্তন-বিবর্তন’ হয় সময়ের দাবিতে। শাশ্বত এ সুধা আধুনিকতার শৃঙ্খলে না থেমে পথ চলছে অবিরাম। প্রাচীনকাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত বিষয়বৈচিত্র্য ও নির্মাণকলার বহুমাত্রিকতায় উজ্জ্বল হয়ে আছে কালজয়ী কাব্যের কবিতাগুলো। অবশ্য বিভিন্ন সময়ে প্রচলিত মতবাদ কবিদের কবিতায় কতটুকু প্রতিবিম্বিত হয়েছে, তা সব যুগে মুখ্য হয়ে ওঠেনি। বরং মানসলোকের গতি-প্রকৃতি সেখানে কতখানি গভীর চৈতন্যে ক্রিয়াশীল তাই গুরুত্ব পেয়েছে। আধুনিকতার মূলমন্ত্র প্রতিতুলনাজাত অলংকার ও বিসদৃশ উপমান-উপমেয়ের ব্যবহার বিধির বিতর্ক হলেও তা কবিতার ভূমিকে করেছে উর্বর।

কবিতা শুধু কথার গ্রন্থন কিংবা শব্দের মেলবন্ধন নয়। কবিতা এক ধরনের বাক্যালাপ। যেখানে কবি তার কবিতা সৃষ্টি আঙিনায় দুনিয়ার মানুষের সঙ্গে কথা বলেন। যৌক্তিক ব্যাখ্যায় কবিতা তাই বাক্যালাপের ভাষা। মানবসভ্যতার ইতিহাসে কবিতা শুধু রসের বাহন নয় বরং মানবের জীবন অভিজ্ঞতা, আনন্দ-বেদনা, দর্শন ও চেতনার এক অবিনশ্বর দলিল। মানব সম্পর্ক পরিবর্তনের প্রতিটি বাঁকে কবিরা মনের অপরিহার্য কথাকে শৈল্পিকরূপ দেওয়ার প্রয়াস পেয়েছেন। সে সূত্রে মহাকাব্য থেকে সনেট, আধুনিক মুক্তকবিতা থেকে গভীর আধ্যাত্মিক সুর, সব কাব্যিক প্রকরণই মানুষের হৃদয়কে উন্মনা করেছে। মানব ভাবনার ব্যাকুল আশংসন প্রস্বরিত হয়ে মহাকালের স্রোতে অসামান্য কাব্যগ্রন্থগুলো তার সাহিত্যরসের সীমা পেরিয়ে অসাধারণ শিল্পরূপ তথা দার্শনিক গভীরতা ও মানবিক আবেদন নিয়ে যুগের প্রবাহে সচেতন পাঠকের মনে অমরত্ব পেয়েছে।

‘ইউসুফ জুলেখা’ কাব্যটি বাংলা সাহিত্যের প্রথম মুসলিম কবি শাহ মুহম্মদ সগীর রচনা করেন। মহাকবি ফেরদৌসী ও সুফি কবি জামিরের মূল কাহিনির উপজীব্য পল্লবীত করেছেন। প্রথমজন রোমান্সধর্মী এবং দ্বিতীয়জন রূপকধর্মী কাব্য রচয়িতা। তবে কবি সগীর কারও অনুকরণ করেননি। তিনি প্রেমরসের মাধ্যমে ধর্ম প্রচার করতে গিয়ে এ কাব্যে মানবীয় প্রেম কাহিনি নির্মাণ করেছেন। জুলেখার প্রেমানুরাগ হাল সময়ের প্রেমের অনুভূতিকে দ্যুতিত করে। কবির কথায়, ‘পাষাণ ভাঙ্গিয়া আজি করিমু চৌখণ্ড, ব্যর্থ সেবা কৈলু তোক জানিলুঁতু ভণ্ড।’ কবির কাব্য কৃতিত্ব সম্পর্কে সমালোচক বলেন-‘অবলীলা ক্রমে গল্প লিখতে পেরেছেন এটাই সগীরের কৃতিত্ব। ইউসুফের বিপরীতে জুলেখা সজীবতায় ও বাস্তবতায় উজ্জ্বল। মানবিক কামনা ও বাসনা জুলেখার চরিত্রের ভেতর দিয়ে শাশ্বত প্রেম প্রবাহমান থেকেছে।’ স্রোতের প্রতিকূলে দাঁড়িয়ে সে সময় কবি বাংলা ভাষাকে প্রাণে ধারণ করে কাব্য রচনার যে স্পর্ধা দেখিয়েছেন, তা অমলিন থাকবে।

‘চণ্ডীমঙ্গল কাব্য’ রচনা করেন মধ্যযুগের কবি মুকুন্দরাম চক্রবর্তী। এ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র দেবী চণ্ডী। কিন্তু তার সঙ্গে এখানে তৎকালীন মানব জীবনের নানা সুখ-দুঃখ ও বাস্তব জীবন চিত্রিত হয়েছে। এ কাব্যটি মূলত লোকজ জীবন ও ধর্মভিত্তিক মঙ্গলকাব্যের পূর্ণাঙ্গ আখ্যান। সমাজ জীবনের পাদদেশের ওপর চরিত্রগুলো রূপায়ণ ঘটার কারণে, কাব্যের কাহিনি প্রাণবন্ত হয়েছে। যুগধর্মকে এড়িয়ে যাওয়ার কুশলতা ও কাব্যিক কৌশল পরিবেশনের সূক্ষ্ম শক্তি কবিকে অনন্যতা দিয়েছে। শাসকের অত্যাচার মানুষের কত বড় দুর্গতি সৃষ্টি করে, সেই করুণ অবস্থাকে মুকুন্দরাম চক্রবর্তী কাব্যের মধ্যে সহজ, সরলভাবে উপস্থাপন করেছেন। ব্যক্তিগত সুখ-দুঃখ সাহিত্যে তুলে ধরার অসামান্য দক্ষতা কবিকে আধুনিক সাহিত্যের অগ্রদূতের মর্যাদা দিয়েছে। ‘পদ্মাবতী’ মহাকবি আলাওল কাব্যটির অনুবাদক। কবি মালিক মুহম্মদ জায়সীর ‘পদুমাবত’ কাব্যের মূল উৎস। কবি আলাওল নিজস্ব প্রতিভায় এ গ্রন্থটিকে নন্দনশৈলী পূর্ণ কাব্যিক ব্যঞ্জনায় উদ্ভাসিত করেছেন। ঐতিহাসিক প্রেমমূলক কাব্য হলেও ইতিহাস এখানে গৌণ। কাহিনির মধ্যে সুফিবাদি দার্শনিক চিন্তার সঙ্গে জাগতিক প্রেম থেকে আধ্যাত্মিক প্রেমের উত্তরণের রূপক শিল্পায়ন কবিকে স্বতন্ত্র মর্যাদা দিয়েছে। লক্ষণীয় বিষয় কবি জায়সীর কাব্য অনুকৃত হলেও আলাওল বঙ্গীয় রীতিতে তার কাব্যটি রচনা করেছেন। সুফি ধর্মাদর্শের উদারতার প্রভাব এবং যুগে যুগে এ দেশের হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়ের সম্প্রীতির বন্ধন রূপটি পদ্মাবতী কাব্যে অনুভব করা যায়। কবির কাব্য অনুবাদের অসামান্য কৌশলে মানবিক মহিমা বর্ণনার অন্তরালে মরমিবাদের আভাস এনে কাব্যের রূপক ব্যঞ্জনাকে ঈর্ষণীয় করেছেন। ‘পদ্মাবতী’ কাব্যের উপমা, উৎপ্রেক্ষা ও ছন্দের ব্যবহার আধুনিক যুগের কবিদের কাব্য রচনার দিগন্ত প্রসারিত করেছে বর্ণাতীতভাবে।

‘ইউসুফ জুলেখা’ ও ‘নুরনামা’ মধ্যযুগের কবি আবদুল হাকিমের অনন্য সংযোজন। রোমান্টিক এ প্রণয়-উপখ্যানটি আবদুল হাকিমের অনূদিত কাব্যগ্রন্থ। কাব্যের মূল রচিয়তা কবি জামী ও অনুবাদক শাহ মুহম্মদ সগীর। কবিদ্বয়ের কাব্য প্রতিভার প্রভাব হাকিমের অনুবাদে দৃশ্যমান। কিন্তু অনূদিত এ গ্রন্থটি অনন্যতা পেয়েছে কবির স্বীয় প্রতিভায় প্রেমময়ী নারী জুলেখার দুঃসাহসিকতার চিত্রায়ণে। প্রেমের জন্য জুলেখা সবকিছু ছেড়ে তথা স্বদেশ ত্যাগ আখ্যানের শৈল্পিক বিন্যাসকে সমৃদ্ধ করেছে। মধ্যযুগের কাব্যরীতির কিছু অলৌকিকতা বাদ দিলে জুলেখার প্রেমের ত্যাগ পাঠককে বিস্মিত করে। কবি আবদুল হাকিমের কৃতিত্ব ‘নুরনামা’ কাব্যে। স্বদেশ প্রেমের অগ্নিশিখার সলতে তিনি এখানে প্রতিভাত করেছেন। মাতৃভাষার প্রতি মানুষের ভণ্ডামি লক্ষ করে তিনি বিক্ষুব্ধ চিত্তে বলেছেন, ‘যেসব বঙ্গেতে জন্মে হিংসে বঙ্গবাণী, সেসব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি।’ আজ থেকে চারশ বছর আগে মাতৃভাষার প্রতি কবির এমন অপ্রতিরোধ্য প্রেম বিস্ময় আনে আধুনিক মানুষের প্রাণে।

‘মেঘনাদবধ কাব্য’ মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের মেঘনাদবধ কাব্য বাংলা সাহিত্যের এক অসামান্য সৃষ্টি। নবজাগরণের চেতনা স্নাত এ কবি বাঙালি জাতিকে নতুন চিন্তায় জেগে উঠতে প্রাণিত করেন। নবযুগের বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে সার্থক শিল্পী হিসাবে তিনিই প্রথম মধ্যযুগের ওপর যবনিকাপাত করেন। উনিশ শতকের আধুনিকতার শক্তিকে বাংলা কাব্যে সঞ্চার করে মধ্যযুগের ধর্মীয় প্রভাবের স্থানে যুক্তিবাদকে প্রতিষ্ঠা দেন সাহিত্যে। তার সৃষ্টির অনন্য ফসল ‘মেঘনাদবধ কাব্য’। কাব্যের মূল কাহিনি নিয়েছেন রামায়ণ থেকে। কিন্তু কাহিনি বিন্যাস, চরিত্র পরিকল্পনাতে তিনি বাল্মীকিকে অনুকরণ করলেও তাতে পাশ্চাত্য প্রভাবকেই অনুসরণ করেছেন। উনিশ শতকের রেনেসাঁস চরিত্র রাবণ তার হাতে স্বদেশপ্রেম, মর্যাদাবোধ, জাতি অনুরাগ ও আত্মবিশ্বাসে প্রবল ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠে।

‘সারদা মঙ্গল’ ও ‘বঙ্গ সুন্দরী’ বাংলা সাহিত্যে গীতিকবিতার প্রবর্তক বিহারীলাল চক্রবর্তী এ কাব্যদ্বয়ের রচয়িতা। বাংলাকাব্যের ভূমিকে মধ্যযুগীয় বহির্বিশ্ব ও বহির্কেন্দ্রিকতা থেকে তিনি প্রথম মুক্তি দেন। প্রথম কাব্যে আত্মকেন্দ্রিকতা, অন্তর্মুখী ভাবতন্ময়কে সংযুক্ত করেন। গীতিকবির আত্মচেতন মনের আনন্দ-বেদনাকে তিনি প্রথম কাব্যে তুলে ধরেন। বাংলাকাব্য ধারায় গীতিকবিতার মৌলিক রূপকে তিনি প্রথম শনাক্ত করে, বৈষ্ণব কবিদের কবিতার অপূর্ণ দিকটি পূর্ণ করেন। তার কাব্যে এই প্রথম আমরা বেদনাবোধের গভীরতা লক্ষ করি, ‘সর্বদাই হুহু করে মন, বিশ্ব যেন মরুর মতন।’ ‘বঙ্গ সুন্দরী’ কাব্যে নারী সম্পর্কিত রোমান্টিক অনুভূতি প্রকাশ পেয়েছে। এ কাব্যের কলাবৃত্তির প্রকাশে তিনি উপমার ও রূপকের চমৎকার সন্নিবেশ করেছেন। রোমান্টিক অনুভূতি উন্মোচিত করে কাব্যের ভেতরের কল্পনা ও ছন্দে এনেছেন নতুনত্ব। সৌন্দর্য ও প্রেমের বান ডেকেছে তার কাব্যগুলোয়। প্রতিভাবান কবি হিসাবে এখানেই তার কৃতিত্ব।

‘অশ্রুমালা’ ‘মহাশ্মশান’ ‘অমিয়-ধারা’ কাব্যদ্বয়ের রচিয়তা কবি কায়কোবাদ। এ কবির আবির্ভাব গীতি কবি হিসাবে। বাঙালি মুসলমানের পুঁথি সাহিত্যকেন্দ্রিক সাহিত্যচর্চার সময় তার আগমন। বিহারীলাল চক্রবর্তীর ‘বঙ্গসুন্দরী’ প্রকাশের বছর কবির ‘বিরহ বিলাপ’ কাব্যটি প্রকাশিত হয়। মুসলমান সমাজে তিনি ‘ভোরের পাখি’ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত। পাঁচটি কবিতা সংকলনের মধ্যে ‘অশ্রুমালা’ তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ। হৃদয়ের বিচিত্র অনুভূতিকে কবিতার বিষয়বস্তু প্রতিস্থাপনে সমকালীন ও পরবর্তী কবি সাহিত্যিকের অনুপ্রেরণার উৎস তিনি। সমালোচক বলেন, ‘কায়কোবাদের মাধ্যমে মুসলমানদের আধুনিক বাংলা সাহিত্যের হাতে খড়ি হয়’। মুসলমানদের গৌরবময় ইতিহাস অবলম্বনে রচনা করেন ‘মহাশ্মশান’ মহাকাব্য। মুসলমান সমাজের হতাশা ও নৈরাশ্যের ভেতর আশাবাদ জাগানো এ কাব্যের মূল উদ্দেশ্য। বাঙালি মুসলমানের অধঃপতনের বিবর্ণ মুহূর্তকে টার্গেট করে অতীতের সোনালি দিন নিজেদের দোষে মলিন হওয়ায় ক্ষুব্ধ হন। মুসলমানদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘যারা ছিল ভৃত্য তোদের, তাদের ভৃত্য হলি, এ গোলামির আগ, তোরা কেন না রে মলি’। ‘মহাশ্মশান’ কাব্যের ভাব ও কাব্য পরিকল্পনা ব্যাপক বিস্তৃত। দেশের রাজনৈতিক সংঘাতের মধ্যে নর-নারী হৃদয়ের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও ব্যর্থতার ছবি এখানে চিত্রিত। নর-নারীর রক্তক্ষরণ এ মহাকাব্যের উজ্জ্বল প্রান্ত। কবির ‘অমিয়-ধারা’ কাব্যগ্রন্থে মাতৃভাষা বাংলার প্রতি তার প্রগাঢ় প্রেম পরিলক্ষিত হয়। কাব্যের ‘মায়ার ডালা’ কবিতায় তিনি বলেন, ‘বাঙালি জাতির আপনজন, বাঙ্গালা মোদের মাতৃভাষা, কি আছে আর তাহার মতো! শব্দে-ছন্দে মুক্তা ঝরে, জাগায় প্রাণে স্বপ্ন কত!

রবীন্দ্রনাথের ‘গীতাঞ্জলি’ একটি কালজয়ী গ্রন্থ। ১৯১২ সালে এ কাব্যের অধিকাংশ কবিতা লেখা শেষ হয়। ১৯১৩ সালে কবি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ পুরস্কার লাভ করেন। বাংলা ভাষায় আধ্যাত্মিক চেতনাযুক্ত এটি এমন একটি কাব্যগ্রন্থ যা বিশ্ব সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। এ কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলোতে কবি ঈশ্বরের কাছে নিজের হৃদয় সমর্পণ করেছেন। আবার মানবিক ভালোবাসার দোলায়ও দুলেছেন। প্রার্থনা, ভক্তি, প্রেম ও প্রকৃতির মেলবন্ধনে এখানে সৃষ্টি হয়েছে এক চিরন্তন সুর। রবীন্দ্রনাথের কণ্ঠে ঈশ্বর হয়ে উঠেছেন তার একান্ত নিকটজন, যার কাছে কবি নীরব ও গভীর প্রত্যয়ে বলেন-‘তুমি আছো তাই, জীবন আলোয় পূর্ণ।’

‘অনল প্রবাহ’ কাব্যগ্রন্থটির রচয়িতা সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী। মুসলিম অগ্রগণ্য সাহিত্যিক কবি ও সমাজ সংস্কারক তিনি। লেখনীর মাধ্যমে সাহিত্যে আবেগের সঙ্গে জাতীয় জাগরণ ও মুসলিম সমাজের সার্বিক আন্দোলনে প্রেরণা জুগিয়েছেন। ‘অনল প্রবাহ’ জাগরণমূলক কাব্যগ্রন্থ। ঔপনিবেশিক শাসনের বিপরীতে ভারতবাসীকে জাগাতে তার দীপ্ত আহ্বান। এখানে ‘অনল’ হলো মুক্তি। প্রতিবাদের প্রতীক। গ্রন্থের প্রতিটি কবিতায় বিদ্রোহী ভাষার উৎসরণ দেখা যায়-‘কোথারে তোদের বিদ্যা আলোচোনা? কোথারে তোদের উন্নত কামনা? কোথারে তোদের অদম্য বাসনা? কোথায় বুদ্ধির প্রবাহ?’ কাব্যটির ভাষা জাগ্রত, উদ্দীপক সরল ও শক্তিশালী। ফলে এতে শুধু কবিত্ব নয়, রাজনৈতিক সাহিত্য ও সমাজ সচেতনতার মিশ্রণের দীপায়ন ঘটেছে।

‘মাল্যদান’ কাব্যগ্রন্থটি কবি ফজলুল করিমের। তিনি বাংলা সাহিত্যের অগ্রগণ্য কবি প্রাবন্ধিক ও সমাজসেবক। মানুষের সামাজিক সাম্প্রদায়িক সংকীর্ণতা ও অজ্ঞতার বিরুদ্ধে নিয়ত প্রতিবাদ করেছেন এ কবি। তিনি মানুষের নিজের ভেতরের আলোর ওপর সর্বদা জোর দিয়েছেন। কেননা, সেখানেই তার শান্তির গুলবাগ। এ কাব্যের কবিতায় তিনি বলেছেন, ‘কোথায় স্বর্গ, কোথায় নরক কে বলে তা বহুদূর, মানুষের মাঝে স্বর্গ-নরক মানুষেতে সুরাসুর’। সমাজের বিবর্ণ ও হতশ্রী প্রতিবেশকে উত্তরণের জন্য শিক্ষার ওপর জোর দিয়েছেন তিনি। এজন্য কণ্টকময় পথ পাড়ি দিয়ে পত্রিকা সম্পাদনা ও লেখনী চালিয়ে গেছেন। দেশের মানুষের অগ্রগতি সাধনেই তার এ প্রচেষ্টা ভাস্বর হয়েছে।

‘রক্তরাগ’ কবি গোলাম মোস্তফা রচিত কাব্যগ্রন্থ। ইসলামি জীবনবোধ ও মানবজীবনের সুকুমার বৃত্তি তার কাব্যের অন্যতম বিষয়। এ কাব্যে তিনি মুসলিম জাতিকে উজ্জীবিত করার তেজদীপ্ত বর্ণনা দিয়েছেন। ‘পরিচয়’ কবিতায় তিনি লেখেন-‘শিল্পকলায় ধরা দিল যার স্বপন দেশের গান, শিল্পীর তাজ ধরণীর সাজ আমরা মুসলমান’। কিংবা ‘একতারে সবে বেঁধে দিব প্রাণ-একসুরে গাবো গান, মহামানবতা গড়িয়া তুলিব আমরা মুসলমান’। মুসলিম জাগরণে তার কাব্য বাংলাসাহিত্যে প্রত্যয়দীপ্ত।

‘অগ্নিবীণা’ কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধপরবর্তী অশান্ত, বিক্ষুব্ধ ও বিপর্যস্ত সময়ে নজরুলের আবির্ভাব। বিদ্রোহ, প্রেম ও প্রকৃতির কবি তিনি। কিন্তু তীব্র আবেগে উচ্চকিত ও প্রবল প্রাণচাঞ্চল্যে দুর্দান্ত এ কবি সব অন্যায়-অবিচারের প্রচণ্ড প্রতিপক্ষ। ‘অগ্নিবীণা’ কাব্যের মধ্যে তারই প্রতিফলন ঘটেছে। নিজে বলেছেন, ‘আমি হতে চাই তাজা রক্ত মাংসের হাড্ডিওয়ালা দানব-অসুর’। কিন্তু হয়েছেন রক্ত-মাংসের হৃদয়বান মানুষ। কাব্যে প্রতিটি কবিতা সব বৈষম্যের প্রতি কূলছাপানো হুংকার। ‘বিদ্রোহী’ কবিতার শেষেই তার বিদ্রোহের স্বরূপ স্পষ্টরূপে প্রতিপাদিত ‘মহাবিদ্রোহী রণ ক্লান্ত, আমি সেই দিন হব শান্ত, যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল আকাশে-বাতাসে ধ্বনিবে না’। মানুষের মুক্তিসংগ্রামের অন্তপ্রেরণায় তিনি সবার ভেতর সতত বিরাজমান। বাংলার মানুষের কাছে তিনি এই কাব্যের প্রতিটি কবিতার মধ্য দিয়ে জাাতিসত্তার সেতু নির্মাণ করেছেন। ফলে যুগ-যুগান্তরের ওপারে তার অধিষ্ঠান।

‘নকশী কাঁথার মাঠ’ ও ‘বনলতা সেন।’ বাংলা সাহিত্যে একই সময়ে কাব্য রচনায় ঝড় তোলেন কবি জসীমউদ্দীন ও জীবনানন্দ দাশ। রচনা প্রকরণ বৈশিষ্ট্যে দুজন দুই মেরুর হলেও তাদের উভয়ের কাব্য পৃথিবীখ্যাত হয়েছে। জীবনানন্দ দাশের ‘বনলতা সেন’ কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয় ১৯৪২ সালে। বাংলা আধুনিক কবিতায় এক অনন্য সৃষ্টি এ কবিতার বইটি। এখানে জীবন ভাবনার অনিবার্য বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে পরিযায়ী মনের বিক্ষিপ্ত চেতনাকে ভালোবাসার কোমল আলোয় স্নাত করার অভিলাষ প্রতিপাদিত। কবি এখানে ক্লান্ত এক অভিযাত্রী, যিনি মানুষের জীবনে এক নারীর অবগাহনকে শান্তি ও আশ্রয়ের প্রতীক করেছেন। এ কাব্যগ্রন্থের চিত্রকল্প, ভাষার জাদু এবং নস্টালজিয়ার আবহ জীবনানন্দকে রূপসী বাংলার কবি হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। বাংলা সাহিত্যে জসীমউদদীন নামটি অমল আলোর স্নিগ্ধ এক শুভ্রতা। যার চেতনার বেলাভূমিতে দিবানিশি চারিত হয়েছে আবহমান বাংলার সংবেদনশীল মানুষের অব্যক্ত অনুভূতির তীব্র যাতনা। আধুনিক কবিতার স্রোতকে পাশ কাটিয়ে স্বীয় ঐতিহ্যকে ধারণ করে নিজস্ব ভঙ্গিমায় কাব্যসৃষ্টিতে তিনি বিভোর থেকেছেন বীরদর্পে। প্রাতিস্বিক চেতনায় তিনি হৃদয়ের সব দরদ দিয়ে রচনা করেছেন ‘নকশী কাঁথার মাঠ’ কাব্যগ্রন্থটি। যার প্রতিটি ছত্রে উঠে এসেছে মানুষের ভেতরের মানবিক আবেদনের ব্যথাময় কলতানের বাস্তব অভিলাষ। এ কাব্যগ্রন্থটি বিশ্বের কাব্যজগতে এক অনন্য মর্যাদা পেয়েছে। এ কাব্যের ভাষা, উপমা, উৎপ্রেক্ষা এবং আলংকারিক অভিযোজনা এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। ফলে বিশ্বের মানবিক মানুষের কাছে এক অনবদ্য সৃষ্টির অঙ্গীকার হয়েছে ‘নকশী কাঁথার’ মাঠ কাব্যগ্রন্থটি। কবিতা সময়ের সীমানা মানে না। শব্দের ভেতরে অনন্তের ডাক লুকিয়ে থাকে শ্রেষ্ঠ কাব্যের মধ্যে। আর তাই কবির কাব্যগ্রন্থকে করে তোলে কালজয়ী সৃষ্টি। সংগত কারণেই উপরোক্ত কবিদের অনবদ্য সৃষ্টি, যুগ-যুগান্তরের প্রবাহে মানুষের মনে শাশ্বত চেতনার মশাল হয়ে জ্বলবে অনাগত দিনে।

‘সাত সাগরের মাঝি’ গ্রন্থের রচিয়তা ফররুখ আহমদ। বাংলা কাব্যে পুরোনো রূপকল্প ও ছন্দের মধ্য দিয়ে বিস্ময়কর উৎসারণ এ কবির। রোমান্টিকতা ও মানবতাবাদ তার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। দেশকাল ও ঐতিহ্যের সমন্বয় করেছেন কবিতার ভেতর। এ কাব্যে মুসলিম সমাজকে জেগে ওঠা ও হতাশা মুক্ত হয়ে অবারিত আলোয় আসার ইঙ্গিত রয়েছে প্রবলভাবে। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের ভূ-ভাগে কবিতার শিথিলতার বিরুদ্ধে তিনি একমাত্র প্রতিবাদী। কাব্য ও গানের মধ্যে ‘রূপকল্পের পর রূপকল্প’ সঞ্চার করার ক্ষেত্রে তার মতো শক্তিশালী খুব নজরে পড়ে না বললে অত্যুক্তি হয় না। ফররুখ আহমদকে মূল্যায়ন করতে গিয়ে কবি আবদুল হাই শিকদার বলেন, ‘ফররুখ আহমদ বাংলা কবিতার অবিচ্ছেদ্য অংশ। নতুন মাত্রা যোজনার কথাই বলি আর ধারা নির্মাণের টেকনিক প্রবর্তনের কথাই বলি মোটকথা আমাদের অন্বেষণ যদি হয় টোটালিটির, তাহলে সেখানে অবিনশ্বর ফররুখ আহমদ’।

‘প্রসন্ন প্রহর’ কাব্যগ্রন্থটি কবি সিকান্দার আবু জাফর রচিত। প্রকাশিত এ কাব্যের কবিতায় মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের সংগ্রামী আবেগ, দেশপ্রেম, বিদ্রোহ ও স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা প্রতিপালিত হয়েছে। স্বাধীনতাকামী মানুষের চেতনায় মুক্তির বার্তায় তার কবিতার প্রেরণা ছিল আকাশ স্পর্শী। ‘বাংলা ছাড়ো’ কবিতায় তিনি স্বাধীন দেশের আকাঙ্ক্ষায়, শত্রুদের এ দেশ ছাড়তে বাণীর যে হুংকার দিয়েছেন তা মানুষের মুখে মুখে আজও প্রবাহিত।

‘একক সন্ধ্যায় বসন্ত’ কাব্যগ্রন্থটি সৈয়দ আলী আহসানের কবিসত্তার এক উজ্জ্বল নিদর্শন। এ গ্রন্থে মানবজীবন, প্রকৃতি, দেশপ্রেম এবং একইসঙ্গে ব্যক্তি অনুভূতির সূক্ষ্ম চিত্রায়ণ ঘটেছে এ কাব্যের প্রতিটি কবিতায়। কবির প্রেম, গর্ব ও আত্মপরিচয়ের চেতনা প্রকাশ পেয়েছে ‘আমার পূর্ব বাংলা’ কবিতাটিতে। শুধু ভৌগোলিক সীমানা নয় বরং তাকে মাতৃরূপে আপন সত্তার অংশ হিসাবে অনুভব করেছেন কবি। কবিকে মূল্যায়ন করতে গিয়ে কবি হাসান হাফিজুর রহমান বলেন, ‘সৈয়দ আলী আহসান যদিও তার আলোচনা সীমাবদ্ধ রেখেছেন কবিতার একটি বিশেষ উপকরণ অর্থাৎ শব্দ চেতনার ওপর, তবুও তিনি এ বাংলার আধুনিকতার প্রথম শিক্ষক’।

‘ছাড়পত্র’ গ্রন্থে বিপ্লবী চেতনাকে উপস্থাপন করেছেন কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য। তার কবি মানস আলোড়িত ত্রিশ ও চল্লিশ দশকের যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ ও সামাজিক অবক্ষয় দেখে। মার্কসবাদী চেতনায় রাঙিয়েছেন শ্রমজীবী মানুষের ছবি। এ গ্রন্থে রয়েছে বিপ্লবের ডাক এবং মানুষের ক্ষুধা, দারিদ্র্য, দুর্ভিক্ষ ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী অনুভব। কাব্যের প্রতিটি কবিতা অধিকার আদায়ের শানিত অস্ত্র। যা একইসঙ্গে শৈল্পিক দক্ষতায় কেবল সৌন্দর্য নয় বরং সামাজিক দায়বদ্ধতার আলোকিত সম্ভার।

‘লোক-লোকান্তর’, ‘কালের কলস’, ‘সোনালী কাবিন’ কবি আল মাহমুদের কাব্যগ্রন্থ। কবিতার ভেতর গ্রামের মানুষের জীবন দর্শন সামাজিক মানসিক জটিলতা ক্ষণস্থায়ী মানব জীবনের ইতিহাস-সংস্কৃতি গ্রামীণ জীবনের প্রেম বিবাহ ও সামাজিক সম্পর্ক নান্দনিক আল্পনায় চিত্রায়িত হয়েছে কাব্যগ্রন্থগুলোতে গ্রামীণ জীবনের লোকায়ত বিশ্বাস ও তাদের অনিবার্য অনুসঙ্গ আধুনিক মাত্রায় কাব্য ভাষা পেয়েছে আল মাহমুদের কবিতায়। গবেষক বলেন, ‘পূর্ণ মুসলিম দৃষ্টি আর সুজলা-সুফলা গ্রামীণ পটচিত্র আল মাহমুদের জিনে প্রোথিত থাকে। যা মারফতি লোকজ সুরে নতুন ছন্দের সামর্থ্যে হয়ে ওঠে প্রত্নশীল। এখানেই তার কবি সত্তার প্রসিদ্ধিজ্ঞাপকতার পরিচায়ক।’ আল মাহমুদ প্রতিভার প্রদীপ্ত আলোর দীপায়নে কবিতার প্রান্তরে সফল ও অনিবার্য।

‘শ্যামল রঙ রমণীর সুনাম শুনেছি’ সালে প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ। মাটিগন্ধি কবি ওমর আলী একটি উজ্জ্বল নাম। অসাধারণ শক্তিধর তার লেখনী। ‘লোকায়েত পরিকাঠামোকে তিনি এক ধরনের নতুন নন্দনে চিহ্নিত করেছেন।’ গ্রামীণ জীবন, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে তিনি রোমান্টিক লাবণ্যে স্নাত করেছেন। ‘এদেশের শ্যামল রঙ রমণীর সুনাম শুনেছি’ গ্রন্থের একদিকে জাতির সংস্কৃতি ও মাটির টান এবং নারীর সৌন্দর্য ও সংগ্রামের বহুমুখী প্রেক্ষিত অভিযোজিত হয়েছে। ইতিহাস, ভূগোল, প্রেম, প্রকৃতি ও সমাজ বাস্তবতার অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছে এ কাব্যগ্রন্থে। নারী, প্রকৃতি আর দেশপ্রেম সব মিলিয়ে এক ধরনের ‘মেটাফোরিক ফিউশন’ অনিবার্য নন্দনশৈলী নির্মাণ করেছে এখানে।

‘চুনিয়া আমার আর্কেডিয়া’ রফিক আজাদের বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ। এ কবির লেখার প্রধান অনুষঙ্গ মানুষ ও মানবিকতা। শিল্প সৌন্দর্যের আপসহীন রফিকের মর্মে ‘বিষাদ-নৈরাশ্য-ক্ষোভ ও ক্রোধ। ভাতদে হারামজাদা-তা-না হ’লে মানচিত্র খাবো-এক দানব-দুঃস্বাপ্নিকের হাহাকার।’ ‘চুনিয়া আমার আর্কিডিয়া’ পাশ্চাত্য ভাবনার অনুচিত্তন। স্বার্থপর নাগরিক জীবনে নির্ভরতা খুঁজেছেন সবুজ বাংলায়। শব্দ শিল্পী রফিক আজাদের নেতি ও ইতিবাচকতার রসায়নে নির্মিত কবিতার প্রাণপাখি। যার কলতানে মুখরিত বাংলা কবিতার আকাশ।

‘রাজা যায় রাজা আসে’ অবারিত আলো ও সমাজবাস্তবতার উজ্জ্বল কবি আবুল হাসানের বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ। পারিপার্শ্বিক দহন, রাজনীতি ও সামাজিক বন্ধুরতা তার কবিতার প্রাণ। জীবন সমগ্রতাবোধই কবিতার মৌলিকত্ব। কবি কিটসের বেদনাবোধ, র্যাঁবোর নিদারুণ যন্ত্রণা আবুল হাসানের কবিতার অন্তর্কথা। নতুনত্ব প্রয়াসী এ কবির ‘রাজা যায় রাজা আসে’ গ্রন্থটি বাংলা কাব্য ধারায় একটি অনবদ্য সংযোজন। কবিতার মধ্যে শব্দ প্রতীক ও উপমার শুদ্ধ প্রয়োগে সম্পন্নতার পরিচয় দিয়েছেন কবি।

‘যে জলে আগুন জ্বলে’ ‘বেদনাকে বলেছি কেঁদনা’ কাব্যগ্রন্থগুলো কবি হেলাল হাফিজের। ৬০ দশকের কবিতায় বিজয় মিছিলের পরীক্ষা ও পরিমিতবোধের কবি হেলাল হাফিজ। মানুষের মৌলিক অধঃপতন ও তার অধিকার অনুসন্ধান তার অনুধ্যানের অন্যতম দিক। রাজনীতি ও প্রেমের মধ্যেই তার কবিতার ভেতর অপরিহার্য অনুগমন। মানুষের অধিকার ফিরে পেতেই দৃঢ় কণ্ঠে উচ্চারণ করেন, ‘এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়, এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার শ্রেষ্ঠ সময়।’ মানুষকে সতর্কতা অশ্লীল কবিতায় মানুষকে সতর্ক করে বলেন, ‘নিউট্রন বোমা বোঝো, মানুষ বুঝনা।’ আবার সংগ্রামে যাওয়ার তাগিদ দিয়ে বলেন, ‘মানব জন্মের নামে হবে কলঙ্ক হবে, এরকম সময় আমি যদি মিছিলে না যাই।’ তার কবিতায় বিষয় আছে, চিত্র আছে। বিষয় উপযোগী ভাষা ও শব্দচয়ন দিয়ে তিনি মানুষকে শ্রেষ্ঠতার দিকে নিয়ে গেছেন এখানেই তার অনন্যতা।

‘আশি লক্ষ ভোর’ কবি আবদুল হাই শিকদার রচিত কাব্যগ্রন্থ। কবিতা গ্রন্থে কবি বাঙালি জাতির সংগ্রাম স্বাধীনতা ও আত্মপরিচয় তুলে ধরেছেন। স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে মানুষের সাহসী চেতনা ও দীর্ঘ সংগ্রামের দহনকে তিনি জাতির সংগ্রাম ও আত্মবিশ্বাসের প্রতীক হিসাবে এ কাব্যে চিত্রিত করেছেন। তার কাব্যে প্রাধান্য পায় রাজনৈতিক দায়, জাতীয় চেতনা এবং সামাজিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে তীব্র উচ্চারণ। কবি একদিকে যেমন ঐতিহ্য সচেতন প্রতিবাদী তেমনি কবিতাকে কেবল শিল্প নয় বরং রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করতে উদ্যত। ফলে তার কবিতা হয়ে ওঠে প্রচণ্ড প্রতিবাদের শানিত অস্ত্র। তিনি বলেন, ‘তুমি যাকে ইতিহাস বল, আমি তাকে বলি বিকৃত মুখোশ।’ ‘এই দেশ তোমার নয়, যারা বৃষ্টিতে ভিজে ঘরে ফিরে, যাদের কণ্ঠে স্লোগান জমে, তাদের, ঘাম-রক্ত-স্বপ্নের এই দেশ।’

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম