আবারও বহিরাগতদের হামলার শিকার বাকৃবির দুই শিক্ষার্থী
বাকৃবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:১১ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
আবারও বহিরাগতদের হামলার শিকার হয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) নারীসহ ২ শিক্ষার্থী। রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ ফাস্ট গেট এলাকায় ক্যাম্পাসে প্রবেশের সময় এলাকাবাসীর সঙ্গে এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী দুজন হলেন- কৃষি অনুষদের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী রাশিদুল আলম রিফাত ও নাহার। এতে মাথায় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলথ কেয়ার সেন্টারে চিকিৎসা নেন এক শিক্ষার্থী।
এর পূর্বে গত ৩১ আগস্ট শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে বহিরাগতদের হামলার ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (কেবি) কলেজের খেলার মাঠ জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করার দাবিতে রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) এলাকাবাসী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরের রাস্তা ব্যারিকেড দিয়ে অবরোধ ও মানববন্ধন করছিল। এ সময় দুই শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে চাইলে তাদের বাধা দেওয়া হয়। পরে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে এলাকাবাসীরা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। এতে রাশিদুল মাথায় গুরুতর আঘাত পান এবং বিশ্ববিদ্যালয় হেলথ কেয়ার সেন্টারে চিকিৎসা নেন। নারী শিক্ষার্থী নাহারকেও বেল্ট দিয়ে পেটানো হয়।
এ বিষয়ে আহত শিক্ষার্থী রাশিদুল আলম রিফাত বলেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার সময় দেখি তারা রাস্তা আটকে আন্দোলন করছে। আন্দোলনকারীদের বললাম—আমরা তো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে চাই। আপনারা রাস্তা ব্লক করে আন্দোলন করছেন। আন্দোলন করুন, কিন্তু কারো অসুবিধা না হলে ভালো হয়। আপনারা আপনাদের দাবিতে আন্দোলন করবেন, আমরা তো বাধা দেব না। এ কথা বলতেই তারা বলে, আমি নাকি বেয়াদবি করেছি। এরপর তারা আমাকে মারতে আসে। তখন আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি কার্ড দেখাই, তবুও ৬–৭ জন মিলে আমাকে মারধর করে।
মারধরের শিকার নারী শিক্ষার্থী নাহার বলেন, আমরা এক সঙ্গে ছিলাম। তারা রাস্তা আটকে আন্দোলন করলে আমরা খুলে দিতে বলি। তখন তার ওপর হামলা চালানো হয়। এ সময় অনেকে মিলে বেল্ট দিয়ে মারতে থাকে। আমি ঠেকাতে গেলে তারা আমাকেও মারে।
জানা যায়, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (কেবি) কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে বহিরাগত এলাকাবাসী দীর্ঘদিন ধরে কলেজের খেলার মাঠ দখল করে রেখেছে। এতে চুরি ও বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটছে। এ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বহিরাগতদের প্রবেশ বন্ধে নির্দেশ দেওয়ায় এলাকাবাসী বোমা মেরে কলেজ উড়িয়ে দেওয়া ও শিক্ষকদের হাত-পা ভেঙে ফেলার হুমকি দেয়। প্রতিবাদে গত শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) কলেজের অধ্যক্ষসহ শিক্ষক-কর্মচারীরা আমরণ অনশনে বসেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আশ্বাসে তারা অনশন ভঙ্গ করেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. আবদুল আলীম বলেন, আমরা দোষীদের চিহ্নিত করতে এলাকাবাসীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গায়ে হাত দেওয়া আমরা গুরুতরভাবে দেখছি।
তিনি আরও বলেন, যে বিষয় নিয়ে বহিরাগত এলাকাবাসী মানববন্ধন করছে, সেটা গ্রহণযোগ্য নয়। গতকাল আমরা কলেজ কর্তৃপক্ষ ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে আলোচনার মাধ্যমে একটি সমঝোতায় আসার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করে সুষ্ঠু সমাধানে আসার চেষ্টা করছি। কিন্তু আজকে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার কথা শুনতে পেলাম।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বরত এসআই মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, ঘটনার পর থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় থানা থেকে আসা পুলিশ চলে গেছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুলিশ এখনো ঘটনাস্থলে রয়েছে। এই ঘটনায় দোষীদের আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, এর আগে গত ৩১ আগস্ট রাত পৌনে ৮টায় কম্বাইন্ড ডিগ্রির দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করে বহিরাগত দুষ্কৃতকারীরা।
এ সময় বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের শব্দও শোনা যায়। এই ঘটনার রেশ না কাটতেই আবারও বাকৃবির দুই শিক্ষার্থীর উপর বহিরাগতদের হামলায় এই ঘটনা ঘটে।
