জাকসু নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগে ছাত্রদলের সংবাদ সম্মেলন
জাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:২৩ পিএম
ছবি: যুগান্তর
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করেছেন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরা।
মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়ার শিক্ষক লাউঞ্জে তারা এ সংবাদ সম্মেলন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরা দাবি করেন- জাকসু নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী ৮টি প্যানেলের মধ্যে ৫টি প্যানেল নির্বাচন বর্জন করে। দুইজন নির্বাচন কমিশনার পদত্যাগ করেছেন।
ভোট চলাকালে ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কারণে কয়েকজন স্বনামধন্য শিক্ষক নির্বাচনি প্রক্রিয়া থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
অব্যবস্থাপনা, কারচুপির সিস্টেম, সমন্বয়হীনতা, মিসইনফরমেশন ও ডিজইনফরমেশনের ছড়াছড়ি সর্বোপরি একটি প্যানেল ও কিছু ব্যক্তিবিশেষকে জেতানোর লক্ষ্যে বিষয়টি নির্বাচনি প্রহসনে পরিণত হয়েছে। বারংবার প্রশাসন ও দায়িত্বশীলদের অবহিত করেও আমাদের অভিযোগগুলোর কোনো সমাধান পাইনি।
ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের আনা অভিযোগগুলো হলো- ছবিসহ ভোটার তালিকা, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ও অমোচনীয় কালির ব্যবস্থা না থাকায় জালভোটের সুযোগ তৈরি; নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালট বাক্স পাঠানো, ভোটারের সংখ্যার চাইতে বেশি ব্যালট সরবরাহ এবং অতিরিক্ত ৩ হাজার ব্যালট ছাপানো; একটি নির্দিষ্ট দলের সমর্থক হিসেবে পরিচিত ব্যক্তির এক অখ্যাত প্রাইভেট কোম্পানি থেকে ব্যালট পেপার ও ওএমআর মেশিন কেনা; বিভিন্ন হলে জালভোট, ব্যালট পেপার নিচে পড়ে থাকা, প্রভোস্টদের সরাসরি হস্তক্ষেপ, এমনকি নারী সাংবাদিকদের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশে বাধা দেওয়া; নির্বাচনি আচরণ সম্পর্কে পোলিং অফিসারদের ধারণা কম থাকা; ভোটের সংখ্যা ও ঘোষিত ফলাফলের মধ্যে অসঙ্গতি; ব্যালটে অনেক প্রার্থীর নাম না থাকা, তাৎক্ষণিক নাম যোগ করা; বহিরাগতদের উপস্থিতি, প্রার্থীর এজেন্টদের হয়রানি এবং অধিকাংশ পোলিং অফিসারের অজ্ঞতা; নির্ধারিত সময় পেরিয়ে ভোটগ্রহণ, সিসিটিভি ফুটেজ ও ভোটারের তালিকা প্রকাশ না করাও ছাত্রদল প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদল মনোনীত ভিপি প্রার্থী শেখ সাদী হাসান বলেন, জাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক উত্তরণের শুভ সূচনার যে প্রত্যাশা, সার্বিকভাবে কারচুপি ও অব্যবস্থাপনার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সেই প্রত্যাশার অকাল মৃত্যু ঘটেছে।
ফ্যাসিস্টের সময়ের নির্বাচন নামের প্রহসনের প্রক্রিয়াকে বিলুপ্ত করে আমরা একটি পরিচ্ছন্ন নির্বাচনি ব্যবস্থার যে স্বপ্ন দেখেছিলাম, সেই স্বপ্নও ভেঙে গেছে।
তারপরও আমরা নির্বাচনি প্রক্রিয়ার সার্বিক অনিয়ম সম্পর্কে প্রশাসনকে লিখিতভাবে অবগত করেছি; কিন্তু তারা অভিযোগগুলোর বিষয়ে কালক্ষেপণ ও শৈথিল্য প্রদর্শন করছেন, দায় এড়ানোর মনোভাব দেখাচ্ছেন।
কী বলছে নির্বাচন কমিশন:
এদিকে ছাত্রদলের আনা অধিকাংশ অভিযোগই মীমাংসিত বলে দাবি করেছেন জাকসুর নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচন কমিশনের সদস্য সচিবের বরাতে জানা গেছে, প্রত্যেক হলেই ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার পূর্বে হল সংসদের প্রার্থী ও উপস্থিত ভোটারদের সামনে ব্যালট বক্স দেখানো হয়েছে; যার অসংখ্য প্রমাণ গণমাধ্যমে আছে।
এছাড়া যতজন ভোটার ঠিক ততটি ব্যালট ছাপানো যায় না। ছাপাতে হলে বান্ডিল অনুসারে ছাপাতে হয়। অর্থাৎ কোনো হলে ৩৮০ জন ভোটার থাকলে সেখানে ৩৮০টি ব্যালট ছাপানো যায় না। এখানে ৪০০টি ছাপিয়ে বান্ডিল পুরো করতে হয়।
প্রত্যেক হলের ভোট প্রদান কার্যক্রম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি স্থানে লাইভ টেলিকাস্ট করা হয়েছে। এখানে জালভোট প্রদানের সুযোগ নেই। এরপরেও স্পেসেফিক কোনো কেস থাকলে নির্বাচন কমিশন সেটি খতিয়ে দেখবে।
শহীদ রফিক-জব্বার হলের ভোটের সংখ্যা ও ফলাফলে অসঙ্গতির অভিযোগের বিষয়ে হল কর্তৃপক্ষ জানায়, ভোটের সংখ্যায় কোনো সমস্যা হয়নি। রিটানিং অফিসাররা ভোট গণনার সময় ভুলে ৪২ কে ৮২ উচ্চারণ করেন; যার কারণে সমস্যার সৃষ্টি হয়। পরে বিষয়টি সংশোধন করা হয়েছে।
নির্বাচনে দায়িত্বরত বিভিন্ন হলের রিটার্নিং কর্মকর্তারা জানান, ভোটের পূর্বে প্রত্যেক অফিসারকেই নির্বাচন বিধি নিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তাৎক্ষণিক ভোটার তালিকায় নাম যোগ করার কোনো স্পেসিফিক অভিযোগ কারও নামে আসেনি।
প্রার্থীর এজেন্টদের হয়রানির অভিযোগ মিথ্যা। ভোটারের উপস্থিতি বেশি থাকায় রীতি অনুসারে কয়েকটি হলে নির্ধারিত সময়ের পর ভোটগ্রহণ করা হয়েছে।
