Logo
Logo
×

শিক্ষাঙ্গন

আরবি বিভাগের শিক্ষক নিয়োগে স্বজনপ্রীতিসহ একাধিক অভিযোগ

Icon

রাবি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:৫২ পিএম

আরবি বিভাগের শিক্ষক নিয়োগে স্বজনপ্রীতিসহ একাধিক অভিযোগ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় স্বজনপ্রীতি, আঞ্চলিকতা ও অর্থনৈতিক প্রভাবসহ বেশকিছু অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন নিয়োগপ্রত্যাশী চার প্রার্থী।

মঙ্গলবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহণ মার্কেটে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তারা এসব অভিযোগ করেন। এ সময় নিয়োগ বাতিল করে নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠনসহ ৫ দফা দাবি জানিয়েছেন। এর আগে তারা উপাচার্য, দুই সহ-উপাচার্য এবং রেজিস্ট্রার বরাবর স্মারকলিপি জমা দেন। 

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানা যায়, গত শনিবার আরবি বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা ও ভাইভা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষার তিন দিনের মাথায় উপাচার্যের বাসভবনে সিন্ডিকেটে আরবি বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টি এজেন্ডা হিসেবে পাশ করার কথা রয়েছে। এদিকে নিয়োগপ্রত্যাশী চার প্রার্থী সন্ধ্যা ৬টা থেকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন শুরু করেছেন।  

তাদের বাকি চার দাবি হচ্ছে—তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট নিয়োগ বা সুপারিশসমূহ সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা হোক; তদন্ত কমিটিতে যেন অরাজনৈতিক, নীতিসংগত ও অভিজ্ঞ শিক্ষক প্রতিনিধিরা অন্তর্ভুক্ত থাকেন; আঞ্চলিকতা, রাজনৈতিক পরিচয়, অর্থনৈতিক লেনদেন বা ব্যক্তিগত সম্পর্কের ভিত্তিতে প্রার্থীকে অগ্রাধিকার দেওয়া হলে তা যেন শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয় এবং ভবিষ্যতে যেকোনো নিয়োগে স্বচ্ছতার নিশ্চয়তা দিতে একটি ট্রান্সপারেন্ট রিক্রুটমেন্ট প্রটোকল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হোক।

সংবাদ সম্মেলন ও স্মারকলিপি দেওয়া চার নিয়োগ প্রার্থী হলেন- মো. হাবিবুল্লাহ, আবু ইউসুফ আলী, সাদিয়া খাতুন এবং ড. নুরুল ইসলাম।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মো. হাবিবুল্লাহ বলেন, সম্প্রতি আরবি ভাষা বিভাগে নিয়োগ-সংক্রান্ত একাধিক গুরুতর অভিযোগ উঠেছে, যা বিশ্ববিদ্যালয়, বিভাগের সুনাম, একাডেমিক পরিবেশ ও ন্যায়ভিত্তিক নিয়োগ নীতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। 

তিনি অভিযোগ তুলে বলেন, বিভিন্ন সূত্র ও প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতায় দেখা যাচ্ছে যে, কিছু প্রার্থীকে আঞ্চলিকতা, ব্যক্তিগত ঘনিষ্ঠতা, রাজনৈতিক পরিচয়, অর্থনৈতিক লেনদেন, এমনকি অনৈতিক আচরণের পরও প্রশাসনিক সহানুভূতির সুযোগ নিয়ে বিভাগে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে প্রভাবশালী ব্যক্তি, অতীত প্রশাসনের নির্দিষ্ট অংশ এবং রাজনৈতিক পরিচয়ধারীরা নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অযাচিত হস্তক্ষেপ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনকি তাদের কারো দ্বারা অর্থের বিনিময়ে বিভাগীয় শিক্ষককে প্রভাবিত করার চেষ্টার অডিও ফাঁস হওয়ার মতো ঘটনাও ইতোপূর্বে ঘটেছে। 

ক্যাম্পাসের শান্তিপূর্ণ পরিবেশের পরিপন্থি ব্যক্তিদেরও বিশেষ পরিচয়ের ভিত্তিতে নিয়োগে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ক্যাম্পাসের আদর্শিক ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশের পরিপন্থি মিছিল-মিটিং, নিপীড়ন, নিষিদ্ধ গোষ্ঠীর হয়ে সক্রিয় তৎপরতা অথবা কোনো গোষ্ঠীর তল্পিবাহক হিসেবে পরিচিত ব্যক্তিদেরও বিশেষ পরিচয়ের ভিত্তিতে নিয়োগে অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা গেছে। কিছু প্রার্থীকে ব্যক্তিগত নৈতিক স্খলন বা শৃঙ্খলাভঙ্গের ইতিহাস থাকা সত্ত্বেও বিভাগে নেওয়ার প্রক্রিয়ায় প্রভাব খাটানোর অভিযোগও পাওয়া গেছে। এ ধরনের ঘটনাগুলো শুধু নিয়োগ ব্যবস্থাসহ পরবর্তী প্রজন্মের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের ওপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আবু ইউসুফ আলী নামে আরেক চাকরি প্রার্থী বলেন, বৃহত্তর বরিশাল অঞ্চল, বিশেষ করে পিরোজপুর থেকে অধিকাংশ শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। কারণ আরবি বিভাগের চেয়ারম্যান ও পরীক্ষা কমিটির এক সদস্যের বাড়ি পিরোজপুরে। ফলে স্পষ্ট স্বজনপ্রীতির চিত্র দেখা যাচ্ছে; যা বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যায়ভিত্তিক নিয়োগনীতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বিকালে গণমাধ্যমকে বলেন, তার দপ্তরে একটা স্মারকলিপি এসেছে। তবে তিনি বাইরে থাকায় এখনো পড়ে দেখতে পারেননি। সেটা পড়ে তারপর সিদ্ধান্ত নেবেন। যে সিন্ডিকেট সভা বসবে সেটার এজেন্ডা তৈরি হচ্ছে। তাই এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেন না।

পরে এ ব্যাপারে জানতে সন্ধ্যায় উপাচার্যকে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম