শিক্ষকদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’
অনেক বিদ্যালয়ে হয়নি বার্ষিক পরীক্ষা
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
সারা দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বুধবার ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালন করেছেন আন্দোলনরত সহকারী শিক্ষকরা। তারা বিদ্যালয়ের ফটকে তালা ঝুলিয়ে এই কর্মসূচি পালন করেন। এতে অনেক বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। পাশাপাশি সহকারী শিক্ষকরা নিজ নিজ উপজেলা বা থানা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার (এটিইও) কার্যালয়ের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশও করেছেন। তিন দফা দাবিতে ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’-এর ডাকে এই কর্মসূচি পালিত হয়।
এদিকে লাগাতার কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে অবিলম্বে পরীক্ষা নেওয়ার কাজে অংশ নিতে বুধবার শিক্ষকদের নির্দেশ দিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এরপরও কেউ পরীক্ষা না নিয়ে এসব কর্মসূচি চালিয়ে গেলে তার বিরুদ্ধে সরকারি চাকরি আইন, আচরণ বিধিমালা ও ফৌজদারি আইনের আওতায় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে মন্ত্রণালয়। এর আগের দিন আন্দোলনের চার শিক্ষক নেতাকে শোকজ করেছে মন্ত্রণালয়।
তবে এদিন কর্মবিরতির মধ্যেও ঢাকাসহ বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে কিছু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। আবার কোথাও কোথাও শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে এসে ফিরে গেছে। কোনো কোনো স্কুলে শিক্ষকদের সঙ্গে অভিভাবকদের কথা কাটাকাটি হয়। পরে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে।
শিক্ষাবর্ষের শেষ সময়ে এসে শিক্ষকদের এই ধরনের আন্দোলন মেনে নিতে পারছে না অভিভাবকরা। তারা বলছেন, শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে এই আন্দোলন গ্রহণযোগ্য নয়। এতে শিক্ষার্থীরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাদের মধ্যে শিখন ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। পাশাপাশি তারা মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
পরিষদের আহ্বায়ক মু. মাহবুবর রহমান বলেন, শিক্ষকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি পালন করছেন। দেশের সব বিদ্যালয় বন্ধ। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলমান থাকবে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্র জানায়, সারাদেশে বর্তমানে ৬৫ হাজার ৫৬৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ে তিন লাখ ৮৪ হাজারের বেশি শিক্ষক কর্মরত। তাদের মধ্যে বেশির ভাগই সহকারী শিক্ষক।
বুধবার বিকালে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ শিবলী সাদিকের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার পরেও দেখা যাচ্ছে সহকারী শিক্ষকদের কয়েকটি সংগঠন চলমান বার্ষিক পরীক্ষা না নিয়ে বিভিন্নভাবে পরীক্ষা গ্রহণে বাধা সৃষ্টি করেছেন এবং কোথাও কোথাও পরীক্ষা গ্রহণে ইচ্ছুক শিক্ষকদের ওপর হামলা ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছেন। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিয়ে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত কর্মসূচি গ্রহণ সরকারি চাকরি আইন, আচরণ বিধিমালার পরিপন্থি এবং ফৌজদারি আইনেও বিবেচ্য।
এ পরিস্থিতিতে দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের অবিলম্বে কাজে যোগদান করে শিক্ষার্থীদের তৃতীয় প্রান্তিকের পরীক্ষা গ্রহণ-সংক্রান্ত বিদ্যালয়ের যাবতীয় কার্যক্রম যথাযথভাবে সম্পন্নের নির্দেশনা দেওয়া যাচ্ছে। অন্যথায় এ ধরনের শৃঙ্খলাবিরোধী কার্যক্রমে সম্পৃক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে সরকারি চাকরি আইন, আচরণ বিধিমালা ও ফৌজদারি আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বর্তমানে দশম গ্রেডে উন্নীত হয়েছেন। তবে সহকারী শিক্ষকরা ১৩তম গ্রেডে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। তারা এ নিয়ে অসন্তুষ্ট। গ্রেড উন্নীতকরণের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে তারা আন্দোলন করে আসছেন। সহকারী শিক্ষকদের দাবিগুলো হলো-দশম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ, ১০ বছর ও ১৬ বছরপূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড সমস্যার সমাধান ও শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি। তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় দশম গ্রেড দিতে সরাসরি অস্বীকৃতি জানিয়ে আপাতত ১১তম গ্রেডের সুপারিশ করেছে। শিক্ষকরাও সেই প্রতিশ্রুতির (১১তম গ্রেড) বাস্তবায়ন দাবি জানিয়ে আসছেন।
