শাটডাউন স্থগিত, রোববার থেকে পরীক্ষা
শিক্ষকদের আন্দোলনে চরম ক্ষতির শিকার শিশুরা
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
সারা দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত করেছেন আন্দোলনকারীরা শিক্ষকরা। বৃহস্পতিবার রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকদের ন্যায্য ৩ দফা দাবি আদায়ে বাস্তবায়ন পরিষদ এবং ঐক্য পরিষদের চলমান কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। আমাদের নৈতিকতা, মানবিকতা ও সন্তানতুল্য কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে আগামী রোববার থেকে পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত সারা দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কমপ্লিট শাটডাউন বা তালাবদ্ধ কর্মসূচি স্থগিত করা হলো। এদিন থেকে সব শ্রেণির তৃতীয় প্রান্তিক মূল্যায়ন (বার্ষিক পরীক্ষা) চলবে। আন্দোলন করা উভয় পরিষদের নেতাদের আলোচনার ভিত্তিতে পরবর্তী কমসূচি দেওয়া হবে বলে জানানো হয়। এদিকে আন্দোলনের ফলে দেশের অনেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা বর্জন করেছেন শিক্ষকরা। এতে চরম ক্ষতির শিকার হচ্ছে কোমলমতি শিশুরা। এদিকে, বৃহস্পতিবার চতুর্থ দিনের মতো সহকারী শিক্ষকদের দুই অংশ মিলে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালন করেছেন। বিভিন্ন বিদ্যালয়ে শিক্ষকরা নিজেরাই ফটকে তালা লাগিয়েছেন।
ফলে অনেক বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা হয়নি। কোথাও কোথাও পরীক্ষা হলেও নানা অব্যবস্থাপনা দেখা গেছে। আবার স্থানীয় প্রশাসনের নেতৃত্বে অনেক বিদ্যালয়ে তালা ভেঙে পরীক্ষা নেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। বার্ষিক পরীক্ষার মূল্যায়ন নিয়ে মানসিক চাপে আছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে আন্দোলনের কারণে অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। পরীক্ষা না নেওয়ায় এদিন এক শিক্ষকের মাথা ফাটিয়ে দিয়েছেন কয়েকজন অভিভাবক।
এদিকে, বৃহস্পতিবার আন্দোলনরত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অসংখ্য সহকারী শিক্ষককে স্ট্যান্ড রিলিজ করে ভিন্ন জেলায় বদলি করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। প্রশাসনিক কারণ দেখিয়ে এ বদলি করা হয়েছে। চলমান আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের নেতারাও ভিন্ন জেলায় বদলির এ তালিকায় রয়েছেন। তাদের দেওয়া তথ্যমতে, অসংখ্য শিক্ষককে একইভাবে ভিন্ন জেলায় বদলি করেছে অধিদপ্তর।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি শিক্ষাবর্ষে তিন মাস দেরিতে পাঠ্যবই হাতে পেয়েছে শিক্ষার্থীরা। তার ওপর বছরজুড়ে শিক্ষকদের কখনো ক্লাস বর্জন, কখনো বিক্ষোভ-সমাবেশের কর্মসূচি ছিল। এতে সরকারি-বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস হয়েছে ১০০ দিনেরও কম। ফলে যতটা ক্লাস প্রয়োজন, তা পায়নি প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা। ব্যাপক শিখন-ঘাটতি নিয়েই চলতি শিক্ষাবর্ষ শেষ করতে হচ্ছে তাদের।
অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির যুগান্তরকে বলেন, শিক্ষকদের কর্মবিরতির কারণে প্রাথমিক স্তরের কোমলমতি শিশুরা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। শিক্ষকরা তাদের যৌক্তিক দাবি জানাতেই পারেন। তবে শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে নয়। শিক্ষাবর্ষের শেষ সময়ে শিক্ষার্থীদের শিখন-ঘাটতি দূর না করে এ ধরনের আন্দোলন খুবই দুঃখজনক।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার ঢাকাসহ সারা দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালন করেন। তবে রাজধানীর গুলশান থানার অধীনে অনেক বিদ্যালয়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঢাকার আশপাশের অনেক বিদ্যালয়েও পরীক্ষা নেওয়া হয়। বার্ষিক পরীক্ষা না নেওয়ার জেরে ফরিদপুর উপজেলার বনওয়ারিনগর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রাজিব সরকারের মাথা ফাটান বিক্ষুব্ধ অভিভাবকরা। তারা তার মাথায় ইট দিয়ে আঘাত করেন। এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের নেতারা। পরীক্ষা না নেওয়ায় লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাত শিক্ষককে শোকজ করা হয়েছে। সিরাজগঞ্জের উল্লাপড়া ঝিকিড়া বন্দর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নিয়েছেন।
আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া মোহাম্মদ শামছুদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষককে বৃহস্পতিবার বিভিন্ন জায়গায় বদলি করার খবর পাওয়া গেছে। এর আগে বুধবার কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে পরীক্ষা না নিলে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি ব্যবস্থা নেওয়ারও ঘোষণা দিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের এই ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করেন শিক্ষকরা।
গত ২৭ নভেম্বর থেকে তিন দফা দাবিতে কর্মবিরতি শুরু করে ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’। সোমবার তারা বার্ষিক পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচিও শুরু করেন। এই পরিষদ বুধবার থেকে বিদ্যালয়ে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি শুরু করে। একই দাবিতে সহকারী শিক্ষকদের আরেকটি সংগঠন ‘সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের’ ব্যানারে ২৩ থেকে ২৭ নভেম্বর কর্মবিরতি পালন করে। ঐক্য পরিষদও বৃহস্পতিবার থেকে বিদ্যালয়ে একই কর্মসূচি শুরু করেছে।
