শতবর্ষী বংশাল পুলিশ ফাঁড়ি যেন ‘মৃত্যুফাঁদ’
প্রকাশ: ২২ নভেম্বর ২০২৫, ১০:২৯ পিএম
ছবি: যুগান্তর
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
পুরান ঢাকার ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের মাহুৎটুলী এলাকায় অবস্থিত শতবর্ষী বংশাল পুলিশ ফাঁড়ি যেন এখন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন বহু আগেই ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করলেও ভাঙা-চোরা দেয়াল, নড়বড়ে ছাদ এবং ফাটলধরা বারান্দার নিচেই প্রতিদিন ডিউটি করছেন ২৫ জন পুলিশ সদস্য। ভবনের কোনো অংশ সাম্প্রতিক সময়ে নতুন করে ধসে না পড়লেও প্রতিটি মুহূর্তই আতঙ্কের—কোনো অংশ হঠাৎ ভেঙে পড়ে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটবে কি না, সেই ভয়ে দিন কাটছে তাদের।
শনিবার সকাল সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রাচীন ভবনটি অত্যন্ত ক্ষয়প্রাপ্ত ও অস্থিতিশীল। দেয়ালে ফাটল, স্যাঁতসেঁতে দাগ, ঝড়ে পড়া প্লাস্টার এবং দুর্বল কাঠের জানালা ও দরজা চোখে পড়ছে। ভবনের ভেতরে ছোট গাছ জন্মেছে, উঠোনে ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে আছে এবং সম্মুখ অংশে মানুষ চলাচল ও বাইক রাখা দেখা গেছে, যা বোঝায় ভবন আংশিকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ছাদে কোনো মেরামত নেই, তাই ভবন যে কোনো সময় ধসে পড়ার আশঙ্কা তৈরি করছে।
এর আগে ফাঁড়িটিতে দুর্ঘটনা ঘটেছে ২০২৩ সালের ৩০ জুন, যখন ভবনের বারান্দা একবারে ধসে পড়ে। ঘটনার পর সিটি করপোরেশন ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেয়। কিন্তু দীর্ঘদিনের অবহেলায় ভবনটি ক্রমশ মৃত্যুঝুঁকির প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ফাঁড়ির গলির বাসিন্দা মো. ইয়াসিন বলেন, ‘২০২৩ সালে ভয়াবহভাবে বারান্দা ভেঙে পড়ল। জনগণের কোন ক্ষয়ক্ষতি না হলেও তারপরও ফাঁড়ি হস্তান্তর বা নতুন ভবন নির্মাণের উদ্যোগ হয়নি। পুলিশ সদস্যরা কী অবস্থায় কাজ করছেন তা দেখলে মনে হয়—এটা ভবন না, মৃত্যুকে ঠেলে কাজ করার জায়গা। আমরা বাসিন্দারাও আতঙ্কে থাকি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক পুলিশ সদস্যও জানিয়েছেন, ‘প্রতিদিন এখানে দাঁড়ালে মনে হয় মাথার ওপর কিছু ভেঙে পড়বে। রাতে বাতাস জোরে বইলে টিন কাঁপে, দেওয়াল ফেটে চৌচির।’
বংশাল থানাধীন পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এস আই শেখ আলী আজহার যুগান্তরকে বলেন, ‘আমরা পুরোপুরি জানি, ফাঁড়ির বর্তমান অবস্থায় ডিউটি করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। ২০২৩ সালের ৩০ জুন বারান্দা একবারে ধসে গিয়েছিল। বর্তমানে কোনো অংশ ধসে পড়েনি, তবে ভবন জীর্ণ-জর্জর অবস্থায়। আমার সদস্যরা প্রতিদিন ভয় নিয়ে কাজ করছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘ফাঁড়ি হস্তান্তরের জন্য এলাকার মধ্যেই একটি বিকল্প ভবন ভাড়া নেওয়া হয়েছে। হস্তান্তর সম্পন্ন হলে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে। বিষয়টি নিয়ে আমরা দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করছি। আশা করি শিগগিরই কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মল্লিক আহসান উদ্দিন সামি যুগান্তরকে বলেন, ‘বংশাল পুলিশ ফাঁড়ি দ্রুততম সময়ে দুইটি বিকল্প জায়গার মধ্যে একটিতে স্থানান্তর করা হবে। বর্তমান ফাঁড়ি সংস্কার করে বহুতল ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা ইতিমধ্যেই প্রস্তুত এবং বাজেট অনুমোদন করা হয়েছে। খুব শীঘ্রই এটি বাস্তবায়িত হবে।’
এলাকাবাসী বলছেন, আর কোনো দুর্ঘটনা নয়। পুলিশের জীবনও মানুষের মতোই মূল্যবান। দ্রুত ফাঁড়ি স্থানান্তর ও নতুন ভবন নির্মাণের ব্যবস্থা করা জরুরি। পুরান ঢাকার মাহুৎটুলী এলাকার শতবর্ষী বংশাল পুলিশ ফাঁড়ি আজও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে, যা পুলিশ সদস্যদের জন্য প্রতিদিন আতঙ্ক ও প্রাণের ঝুঁকির কারণ।

