গ্রাফিক আর্টস ইনস্টিটিউট ছাত্রাবাসে ভয়ংকর টর্চার সেল
যুগান্তর প্রতিবেদন ও মোহাম্মদপুর (ঢাকা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৪ মে ২০২৫, ১০:৫০ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে সরকারি গ্রাফিক আর্টস ইনস্টিটিউট ছাত্রাবাসে গড়ে ওঠে ভয়ংকর এক টর্চার সেল। নানা অজুহাতে শিক্ষার্থীদের তুলে এনে আটকে রেখে লোমহর্ষক নির্যাতন চালানো হতো। প্লায়ার্স দিয়ে নখ তুলে ফেলা হতো। কারও শরীরে দেওয়া হতো সিগারেটের আগুনের ছ্যাঁকা। এই চক্রের সঙ্গে ছাত্রদলের কিছু কর্মী জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি কয়েকজন শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের ঘটনায় বেরিয়ে আসে টর্চার সেলের চাঞ্চল্যকর তথ্য।
দুই শিক্ষার্থীর মামলার পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আরিফুর রহমান গাল্টু যুগান্তরকে জানান, তিনি লেখাপড়ার পাশাপাশি ট্রাফিক পুলিশের সহযোগী হিসাবে সড়কে কাজ করেন। ১৫ মে রাতে মহীউদ্দিন মাহি নামে এক শিক্ষার্থী তাকে ফোন করে আর্টস ইনস্টিটিউটের ছাত্রাবাসে নিয়ে যায়। সেখানে তার আরও দুই বন্ধু ডিজাইন বিভাগের পঞ্চমবর্ষের শিক্ষার্থী ফরহাদ হোসেন শাওন ও একই ব্যাচের প্রিন্টিং বিভাগের শিক্ষার্থী টিটু হোসেন মোল্লাকে আগে থেকেই আটক করে রাখা হয় মোবাইল ফোন চুরির অভিযোগে। গাল্টু সেখানে যাওয়ার পর হলের ৩১৮ নম্বর রুমে তিনজনকে বেধড়ক মারধর করা হয়। একপর্যায়ে তিনজনকে আলাদা করে নির্যাচন চালানো হয়।
গাল্টু বলেন, যারা নির্যাতন চালিয়েছে, তারা ইনস্টিটিউটের সপ্তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মিনারুল, সাব্বির, অংকন ও রকি। আমি তাদের বারবার বলি মোবাইল ফোন চুরির সঙ্গে জড়িত নই, কিন্তু ওরা কথা শোনেনি। আমাকে মারতে মারতে ওরা অজ্ঞান করে ফেলে। প্লায়ার্স দিয়ে হাতের আঙুলের নখ তুলে নেয়। সিগারেটে গাঁজা ভরে খাচ্ছিল ওরা, ওই সিগারেট দিয়ে তারা ছ্যাঁকাও দেয়। মারতে মারতে ওরা বলছিল, আবরার ফাহাদ, তোফাজ্জলের অবস্থা দেখছস? তোরও এমন অবস্থা হবে। তিনি বলেন, তারপর ৩১৮ নম্বর রুমের দরজা খোলা রেখে নির্যাতনকারীরা চলে যায়। পরদিন বিকাল ৩টায় আমার জ্ঞান ফেরে। পরে এক শিক্ষার্থীর মাধ্যমে আমি বাসায় ফোন দিয়ে বিষয়টি জানাই। বাসা থেকে জরুরি সেবা-৯৯৯ এ কল করলে পুলিশ গিয়ে আমাকে উদ্ধার করে। এ ব্যাপারে থানায় মামলা করেছেন বলে জানান গাল্টু।
আরেক শিক্ষার্থী তানজিম ওই চক্রের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তিনিও মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা করেছেন। তানজিম জানান, তিনি ১৭ মে রাতে ওই চক্রের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ছাত্রলীগ ট্যাগ দিয়ে তাকে ধরে নিয়ে ছাত্রাবাসে আটকে রেখে ভয়ংকর নির্যাতন চালায়। তানজিমেরও নখ তুলে দেওয়া হয় প্লায়ার্স দিয়ে। এছাড়া নির্যাতনে ক্ষতস্থানে দেওয়া হয় সিগারেটের ছ্যাঁকা। তানজিন বলেন, আমাকে লোহার রড দিয়ে পিটিয়েছে। যারা আমার ওপর এমন ভয়াবহ নির্যাতন করেছে আমি তাদের সর্বোচ্চ বিচার চাই।
পুলিশের তেজগাঁও জোনের ডিসি ইবনে মিজান যুগান্তরকে জানান, এ ঘটনায় শনিবার আরিফ, মাহি ও রকি নামে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরা ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে প্রাথমিকভাবে পুলিশ জানতে পেরেছে। দোষী অন্যদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।
গ্রাফিক আর্টস ইনস্টিটিউটের প্রিন্সিপাল ফারহানা ইয়াসমিন বলেন, আমরা ঘটনার পর জড়িতদের সাময়িক বহিষ্কার করেছি। একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। কমিটি আমার কাছে আরও দুদিন সময় চেয়েছে। যেহেতু হলে এমন একটি অমানবিক ঘটনা ঘটেছে। তাই আমরা শিক্ষার্থীদের হল পুরোপুরি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিতে পারি। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট জমা দেওয়ার পর আমরা তাদের বিরুদ্ধে স্থায়ী বহিষ্কারসহ ব্যবস্থা নেব।
মোহাম্মদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আলী ইফতেখার বলেন, এ ঘটনায় জড়িত সবার বিরুদ্ধে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছি।
এদিকে এ ঘটনায় শনিবার দুপুরে গ্রাফিক আর্ট ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন। তারা দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
