সাড়ে ৪ ঘণ্টা পর অবরোধ প্রত্যাহার বুয়েট শিক্ষার্থীদের
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৬ আগস্ট ২০২৫, ১০:৩৩ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
তিন দফা দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ (বুয়েট) একাধিক বেসরকারি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ সময় আশপাশের সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় সাড়ে ৪ ঘণ্টা অবস্থানের পর তারা রাত ৮টায় শাহবাগ ছাড়েন। এদিন পৃথক দাবিতে বনানীতে পোশাক শ্রমিক এবং গাবতলীর টেকনিক্যাল মোড়ে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করেন। একই দিনে নগরীর তিন স্থানে অবরোধের কারণে রাজধানীর সড়কজুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। ভোগান্তিতে পড়েন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ।
তাদের তিনটি দাবি হলো- ইঞ্জিনিয়ারিং নবম গ্রেড বা সহকারী প্রকৌশলী বা সমমান পদে প্রবেশের জন্য সবাইকে নিয়োগ পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হতে হবে এবং ন্যূনতম বিএসসি ডিগ্রিধারী হতে হবে। কোটার মাধ্যমে কোনো পদোন্নতি নয়, এমনকি অন্য নামে সমমান পদ তৈরি করেও পদোন্নতি দেওয়া যাবে না। দ্বিতীয়ত, দশম গ্রেড (টেকনিক্যাল) বা উপসহকারী প্রকৌশলী বা সমমান পদে ডিপ্লোমাদের জন্য বরাদ্দ ১০০ শতাংশ কোটা বাতিল করে ওই পদের জন্য ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং নির্ধারণ করে, উচ্চতর শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন বিএসসি বা এমএসসি ডিগ্রিধারীদের আবেদনের সুযোগ দিতে হবে এবং সর্বশেষ দাবি হচ্ছে- বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি ব্যতীত কেউ নামের পাশে ‘ইঞ্জিনিয়ার’ পদবি ব্যবহার করলে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। জানা গেছে, মঙ্গলবার বিকাল তিনটার দিকে শাহবাগ মোড়ে জড়ো হন বুয়েট শিক্ষার্থীরা। পরে বেসরকারি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকশ শিক্ষার্থী তাদের সঙ্গে যোগ দেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্র জানায়, শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। বিকাল পৌনে ৬টার দিকে শাহবাগে আন্দোলনরতরা সংবাদ সম্মেলনে তাদের দাবি পূরণে কর্তৃপক্ষকে রাত ৮টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন।
এতে বক্তব্য রাখেন প্রকৌশল অধিকার আন্দোলনের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি শাকিল আহমেদ ইকবাল। তিনি বলেন, পাঁচ মাস ধরে তিন দফা দাবিতে তারা আন্দোলন চালিয়ে আসছেন।
এর মধ্যে সোমবার রংপুরে নেসকোতে কর্মরত বুয়েটের সাবেক শিক্ষার্থী এক প্রকৌশলীকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে। এখন আমাদের দাবি হচ্ছে, রংপুরে হত্যার হুমকিদাতাদের গ্রেফতার ও চাকরি থেকে অপসারণ এবং তিন দফা দাবির প্রজ্ঞাপন জারি।
তিনি বলেন, গত ৫ মাসে ১০০ প্রতিষ্ঠানে চিঠি দিয়েছি। আজ শিক্ষা ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে গিয়ে কথা বলেছি। কিন্তু কোনো আপডেট নেই। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কাজ করেছি। আমরা রাতে প্রোগ্রাম দিয়েছি, যাতে জনদুর্ভোগ না হয়। কিন্তু আজকে আমাদের ব্লকেডে আসতে বাধ্য করা হয়েছে।
ইকবাল বলেন, আমাদের দাবির মধ্যেই রোববার রংপুর নেসকোতে আমাদের ভাই রোকনকে জবাই করে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে। তার অপরাধ হচ্ছে আমরা যে চিঠি জমা দিতে চাই, সেটা তিনি জমা নিয়েছেন ও প্রধান প্রকৌশলীকে দিয়েছেন। এটা তার অপরাধ। কিন্তু এখন পর্যন্ত হুমকিদাতারা গ্রেফতার হয়নি।
তিনি বলেন, ২০-২৫ জন গিয়ে মব তৈরি করে প্রকৌশলীদের হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। রোকন ভাইকে যারা হুমকি দিয়েছে, তাদের গ্রেফতার ও বহিষ্কার করতে হবে। আমাদের তিন দফার জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে।
রাত ৮টার মধ্যে উপদেষ্টা পরিষদকে শাহবাগে এসে আমাদের সঙ্গে বসে সমস্যা সমাধান করতে হবে। না হলে আমরা আরও কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো। তবে কোনো সমাধান না পেয়ে রাত ৮টার পর তারা শাহবাগ ছেড়ে চলে যান।
এদিকে রাত সাড়ে ৮টায় শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালিদ মনসুর জানান, ৮টার পর শিক্ষার্থীরা পরবর্তী কর্মসূচি সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানোর কথা বলে শাহবাগ ছেড়ে দেন। এতে আস্তে আস্তে সড়ক সচল হতে শুরু করে। তিনি জানান, আন্দোলন চলাকালে ডাইভারশন দিয়ে সড়কে যান চলাচলের চেষ্টা অব্যাহত রাখে পুলিশ।
নুরেন নামে এক আন্দোলনকারী জানিয়েছেন, সারা দেশ থেকে প্রকৌশলী ও শিক্ষার্থীরা লংমার্চ করে বুধবার ঢাকায় আসবেন। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। নগরীর ব্যস্ততম শাহবাগ মোড় অবরোধ করায় যানজটের ভোগান্তিতে পড়েন অফিস শেষে ঘরমুখী মানুষ। বেলা সাড়ে তিনটা থেকে অবরোধের কারণে শাহবাগ মোড় দিয়ে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এতে আশপাশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। চিকিৎসার জন্য রায়েরবাগ থেকে বারডেম হাসপাতালে আসা আমির হোসেন বলেন, মৎস্যভবন মোড়ে এসে জানতে পারেন রাস্তা বন্ধ। পরে তিনি হেঁটে হাসপাতালে আসেন। এমন দুর্ভোগে পড়েছেন অসংখ্য মানুষ।
এদিকে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গাবতলীর টেকনিক্যাল মোড়ে সড়ক অবরোধ করেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সেসের শিক্ষার্থীরা। স্থায়ী ক্যাম্পাসের দাবিতে তারা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ জানান। পরে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা সড়ক ছেড়ে দিলে আস্তে আস্তে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। দারুসসালাম থানার ওসি রকিবুল হোসেন এ তথ্য জানান।
এদিকে বকেয়া বেতনের দাবিতে বনানীতে চেয়ারম্যানবাড়ী সড়ক অবরোধ করেন মাসুদ অ্যাপারেলস গার্মেন্টস নামের একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। সকাল সাড়ে ১০টায় তারা সড়কে অবস্থান নেন। এতে বনানী, মহাখালীসহ আশপাশের এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর দুপুর সাড়ে ১১টার দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দেন। পরে তারা সড়কের বাইরে গিয়ে বিক্ষোভ করেন বলে জানান বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসান। ট্রাফিক গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার জিয়াউর রহমান জানান, শ্রমিকদের অবরোধের কারণে মহাখালী থেকে বনানী পর্যন্ত যানবাহন চলাচল ব্যাহত হয়।
