Logo
Logo
×

সুস্থ থাকুন

অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত শিশুর যত্ন কীভাবে নেবেন

Icon

ডা. সেলিনা সুলতানা

প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত শিশুর যত্ন কীভাবে নেবেন

অটিজম একটি মানসিক বিকাশজনিত সমস্যা যা শিশুদের জন্মের প্রথম তিন বছরের মধ্যেই পরিলক্ষিত হয়। প্রতীকী ছবি

অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত শিশুর লালন-পালনে পরিবারের সদস্যদের শারীরিক এবং মানসিকভাবে ক্লান্ত করে তুলতে পারে। সেক্ষেত্রে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও অন্য থেরাপিস্টদের সঙ্গে সুন্দর সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে, যেখানে অন্য, বিশেষ করে শিশুদের বাবা-মারাও অন্তর্ভুক্ত থাকবেন। তারা বিশেষ শিশুটি যেখানে অবস্থান করছে তার চারপাশ থেকে শিশুর জন্য নির্ভরযোগ্য এবং ব্যবহারযোগ্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করবেন। শিশুর জন্য সব ধরনের আর্থিক সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করবেন যাতে বাবা-মার মানসিক দুশ্চিন্তা একটু কমে যেতে পারে। যেমন-বাবা-মাকে তার কাছের সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে তাদের জন্য বরাদ্দকৃত আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা করে দেবেন। বিশেষজ্ঞ টিম জানাতে চেষ্টা করবেন তাদের বাসস্থানের চারপাশে বিশেষ শিশুদের জন্য যেসব সুযোগ-সুবিধা সরকারি ব্যবস্থাপনায় আছে সেগুলো কীভাবে সহজলভ্য করে দেওয়া যাবে।

স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সঙ্গে শিশুর প্রতিবার দেখার সাক্ষাতের রেকর্ড যত্নসহকারে রাখতে হবে, যাতে পরবর্তী সময়ে কী ধরনের উন্নতি হলো সেগুলো বিশেষজ্ঞ টিম মূল্যায়ন করতে পারে। এ সময় বাবা-মার সঙ্গে কথা বলে তাদের সন্তানদের অগ্রগতি সম্পর্কে জানার চেষ্টা করতে হবে। অন্য স্বাস্থ্য বিকল্প পদ্ধতিগুলো সম্পর্কে ধারণা নিতে হবে এবং নিজের সন্তানের উন্নতি বা অবনতি এগুলো নিয়ে পরামর্শ করতে হবে।

অটিজম একটি মানসিক বিকাশজনিত সমস্যা যা শিশুদের জন্মের প্রথম তিন বছরের মধ্যেই পরিলক্ষিত হয়। অটিজম সম্পর্কে অনেক ভুল বা ভ্রান্তিমূলক কথা সমাজে প্রচলিত আছে, যেগুলো বাবা-মাকে বিভ্রান্ত করে দিতে পারে। কিন্তু সত্যটি জানা, অটিজম সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে পারলেই শিশুটির সামাজিক এবং যোগাযোগের দক্ষতা বাড়ানো সম্ভব হবে।

অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত শিশুর বাবা-মার ব্যক্তিগত সম্পর্ক ও পরিবারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। বার্নআউট এড়াতে বিশ্রাম, ব্যায়াম বা প্রিয় কার্যকলাপ উপভোগ করার জন্য সময় বের করতে হবে। পরিবারের অন্য শিশুর সঙ্গেও একান্ত সময় কাটানোর চেষ্টা করতে হবে। যে যেটায় স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন সেটারই ব্যবস্থা রাখতে হবে জীবনে প্রতিটি মুহূর্তে।

অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত শিশুদের অন্য পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে। তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের উপায়গুলো সম্পর্কে জানার চেষ্টা করতে হবে যাতে পারিবারিক সম্পর্কগুলো ভালো থাকে। এক্ষেত্রে অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডারের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলাকারী অন্য পরিবারগুলো কার্যকর পরামর্শ দিতে পারে। এভাবে অটিজম আক্রান্ত শিশুদের বাবা-মা ও ভাইবোনদের জন্য একটি সহায়তা গোষ্ঠী তৈরি করতে হবে যেটা বহির্বিশ্বে প্রচলিত আছে।

নতুন প্রযুক্তি এবং থেরাপি সম্পর্কে জানার জন্য স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে। গবেষকরা অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত শিশুদের সাহায্য করার জন্য নতুন উপায়গুলো অন্বেষণ করে চলেছেন। শিশুদের সহায়ক উপকরণ, খেলার সরঞ্জাম এবং তাদের সেবাদানকারী সংস্থাগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক রাখা খুবই জরুরি। যেখানে এ শিশুদের সঙ্গে সঙ্গে বাবা-মার মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করার চেষ্টা করা হবে সার্বক্ষণিকভাবে। কারণ বাবা-মা যখনই তার শিশুটিকে মেনে নিতে পারবেন তখনই শিশুটি চলার পথ অনেকটাই মসৃণ হয়ে যাবে। যার ফলে শিশুটিকে সমাজের মূলধারায় নিয়ে আসা সম্ভব হবে।

লেখক : কনসালট্যান্ট, নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার এবং চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড পেডিয়াট্রিক ডিপার্টমেন্ট, বেটার লাইফ হসপিটাল 

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম