গ্রীষ্মে শিশুর স্বাস্থ্য ঝুঁকি
ডা. সেলিনা সুলতানা
প্রকাশ: ১০ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
অতিরিক্ত তাপ ও আর্দ্রতায় সাধারণত বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকে শিশুরা। শিশুদের অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা অন্যদের তুলনায় বেশি। তাই ঋতু অনুসারে শিশুদের যত্নের ধরনও পরিবর্তন করতে হবে। গ্রীষ্মকালে শিশুদের সুস্থ রাখতে ঘরোয়া প্রস্তুতি প্রয়োজন। প্রতিদিনই তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে থাকছে। এ সময়ে বাড়িতে খাবার স্যালাইন, থার্মোমিটার, পানির বোতল, তোয়ালে, রিচার্জেবল ফ্যানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
ছয় মাসের কম বয়সি শিশুদের ঘনঘন বুকের দুধ খাওয়াতে হবে হাইড্রেটেড রাখার জন্য। ৬ মাসের বেশি বয়সি শিশুদের দুই তিন ঘণ্টা পরপর পানি পান করানো উচিত। গোসলের পর, শিশুর মাথা ভালোভাবে শুকাতে হবে যেন চুল ভেজা না থাকে, ভেজা চুলের কারণে শিশুর ঠান্ডা লাগতে পারে, এ থেকে জ্বর বা কাশিও হতে পারে।
দিনের গরম সময়ে শিশুদের বাইরে না নেওয়াই ভালো। বাইরে বের হওয়ার সময় মেডিকেটেড সানস্ক্রিন ব্যবহার এবং ছায়ায় থাকার চেষ্টা করতে হবে। সরাসরি তাপ থেকে দূরে রাখতে হবে। প্রয়োজনে টুপি পরাতে হবে বা ছাতা ব্যবহার করা যেতে পারে। সুতি কাপড় স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানিতে ভিজিয়ে দিনে ২-৩ বার শিশুর শরীর মুছে দিতে হবে।
ঘর ঠান্ডা রাখতে দিনেরবেলা ঘরের পর্দা বন্ধ ও রাতে জানালা খুলে রাখতে হবে। খোলামেলা, আরামদায়ক, ভালোভাবে বাতাস চলাচলকারী এমন ঘরে শিশুদের রাখতে হবে। এ ছাড়া ফ্যান ও সম্ভব হলে এয়ারকুলার ব্যবহার করা যেতে পারে।
পানিশূন্যতা দেখা দিলে শিশুকে কিছুক্ষণ পর পর বিশুদ্ধ পানি, তাজা মৌসুমি ফলের রস ও অন্যান্য তরল খাবার দিতে হবে। তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়াতে এ সময় আইসক্রিম, কোল্ড ড্রিংকস বা ফ্রিজের ঠান্ডা পানি বেশি খায় শিশুরা। বড় শিশুদের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে, তারা সুযোগ পেলেই তৃষ্ণা নিবারণে রাস্তার পাশের আইসক্রিম বা জুস পান করে, যা রোটা ভাইরাল ডায়রিয়া বা টাইফয়েডের প্রধান কারণ।
গরমে ভারী পোশাক পরলে অতিরিক্ত ঘাম হয়, যা থেকে পানিশূন্যতা হতে পারে। তাই হালকা ঢিলেঢালা, সুতি কাপড়ের পোশাক পরাতে হবে। শরীরে হাইড্রেশন বজায় রাখতে পর্যাপ্ত তরল পান করতে হবে।
এ সময় ভাইরাল জ্বরের আশঙ্কা থাকে। ভাইরাল জ্বরে সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিক কার্যকর নয়। জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল দেওয়া ভালো। বাতাসে ভেসে বেড়ায় ফুলের পরাগরেণু, যা অ্যালার্জেন হিসাবে কাজ করে। এ সময় ধুলাবালির পরিমাণও বেড়ে যায়। এসব কারণে হাঁপানি, অ্যালার্জিক রাইনাইটিস, অন্যান্য অ্যালার্জিজনিত রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়। বিশেষ করে শিশুদের শ্বাসতন্ত্রের রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়। এসময় ভাইরাস সংক্রমণে কাশি-সর্দি বা নিউমোনিয়া হতে পারে। এতে নাক বন্ধ হয়ে স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসে ব্যাঘাত ঘটায়। সে ক্ষেত্রে নাকে ড্রপ দিতে হবে। কাশি হলে লেবুর রস, তুলসি পাতার রস ও আদা দিয়ে চা খাওয়ালে শিশু ভালো বোধ করবে। ঘরোয়া চিকিৎসার সময় খেয়াল রাখতে হবে শিশুর কফ, সর্দি হলুদ বা সবুজাভ হলে এবং জ্বর না কমলে অবশ্যই শিশু বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে।
লেখক : কনসালটেন্ট, নিউরোডেভলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার এবং চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড পেডিয়াট্রিক ডিপার্টমেন্ট, বেটার লাইফ হসপিটাল। সাবেক অটিজম বিশেষজ্ঞ: ঢাকা কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটাল।
