অসময়ে তরমুজ চাষে কৃষক নিরাঞ্জনের বাজিমাত
সুকুমল কুমার প্রামাণিক, রাণীনগর (নওগাঁ)
প্রকাশ: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৭:৪৭ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
নওগাঁর রাণীনগর উপজেলায় অসময়ে তরমুজ চাষ করে এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন কৃষক নিরাঞ্জন চন্দ্র। তার জমিতে শোভা পাচ্ছে ‘মার্সেলো’ জাতের কালো কালো রঙের তরমুজ।
কৃষক নিরাঞ্জনের বাড়ি উপজেলার কাশিমপুর ডাঙ্গাপাড়া গ্রামে। বাড়ির পাশে তিনি প্রায় ৩০ শতাংশ উঁচু জমিতে মাচা ও মালচিং পদ্ধতিতে প্রথমবারের মতো চাষ করেছেন ‘মার্সেলো’ জাতের কালো রঙের তরমুজ।
পরীক্ষামূলকভাবে এ তরমুজ চাষ করেই সফলতা পেয়েছেন তিনি। তার সফলতা দেখে আগ্রহী চাষিরা অসময়ের এই বর্ষাকালীন তরমুজ দেখতে ক্ষেতে ভিড় করছেন।
তরমুজ চাষি নিরাঞ্জন চন্দ্র জানান, কয়েক বছর আগে তিনি একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করতেন। সেই চাকরিতে আর্থিক সচ্ছলতা মেলেনি তার। এরপর ফিরে আসেন গ্রামের বাড়িতে। শুরু করেন কৃষিকাজ। বাড়ির সামনে পৈতৃক জমিতে চাষ শুরু করেন বিভিন্ন জাতের সবজি। তবে ব্যতিক্রমী সবজি চাষ বরাবরই নিরাঞ্জনের আগ্রহ কেন্দ্রবিন্দু। তবে চাকরি ছেড়ে কৃষিতে সফল হওয়ার উল্টোপৃষ্ঠে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে নিরঞ্জনকে।
তিনি জানান, হঠাৎ একদিন ইউটিউব দেখে অসময়ে তরমুজ চাষে আগ্রহ বাড়ে তার। এরপর শুরু করেন তরমুজ চাষ। মৌসুমি তরমুজের তুলনায় এসব তরমুজ চাষে রোগবালাই হয় কম। অল্প দিনে ফসল পাওয়ার পাশাপাশি বাজারে চাহিদা রয়েছে বেশ। মাচা ও মালচিং পদ্ধতিতে তরমুজ চাষ সহজ। এর ফলে কোনো রাসায়নিক সার বা বালাইনাশক দিতে হয়না। তরমুজের পাশাপাশি তিনি একই মাচায় উচ্চ ফলনশীল শসাও উৎপাদন করছেন।
তিনি আরও জানান, বাজারে প্রতিটি তরমুজের দাম কেজি প্রতি ৫০ থেকে ৬০ টাকা করে পাবেন বলে আশা করছেন। এতে করে ভোক্তাদের কাছে বিষমুক্ত তরমুজ পৌঁছে দিয়ে অল্প খরচে ও অল্প পরিশ্রমে অধিক লাভের আশা করছেন তিনি।
রাণীনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোসা. মোস্তাকিমা খাতুন বলেন, মার্সেলো জাতের এই তরমুজ ভাইরাস সহনশীল। মাত্র ৬০-৬৫ দিনের মধ্যেই ফসল তোলা যায়। লম্বাটে ডিম্বাকৃতির এই তরমুজের ভিতরের মাংসল অংশ আকর্ষণীয় গাঢ় লাল রঙের এবং খেতে খুবই সুস্বাদু ও সুমিষ্ট হয়। বর্ষাকালে প্রতিটি তরমুজের গড় ওজন হয় ৩ থেকে ৫ কেজি। তবে শীতকালে মাটিতে চাষ করলে ফলন আরও বাড়ে। মালচিং পদ্ধতিতে চাষ করলে ফলন ও গুণগতমান দুটোই উন্নত হয়। পাশাপাশি অসময়ের এসব তরমুজের চাষ পদ্ধতি তুলনামূলক সহজ। ফলে চাষিরা খুব সহজেই এসব ফসল চাষ করতে পারেন। প্রতি বিঘা জমিতে ১৫শ থেকে ২ হাজার তরমুজ পাওয়া সম্ভব।
তিনি আরও বলেন, ‘আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি প্রদর্শনী’ প্রকল্পের আওতায় উপজেলার কাশিমপুর ডাঙ্গাপাড়ায় এই তরমুজ চাষ করা হয়েছে। আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির সহায়তায় এই বর্ষাকালীন তরমুজ এখন স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে নতুন সম্ভাবনার উৎস হয়ে উঠেছে।
