তিস্তায় পানি বৃদ্ধি, মহিপুর সেতু রক্ষা বাঁধের ৭০ মিটার বিলীন
রংপুর ব্যুরো
প্রকাশ: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:২৩ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
উজানের ভারতে পাহাড়ি ঢলে রংপুরের গঙ্গাচড়ায় তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানির স্রোতে মহিপুর তিস্তা সেতু রক্ষা বাঁধের ৭০ মিটার ভেঙে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
বাঁধের ভাঙন অব্যাহত থাকায় তিস্তা সেতু দিয়ে রংপুর-লালমনিরহাট সড়ক পথে যোগাযোগ বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। নদীপারের কয়েকটি চরের বাড়িঘর-আবাদি জমি ভাঙনের হুমকিতে পড়েছে। আতঙ্কে দিনযাপন করছেন নদীপারের স্থানীয়রা।
রংপুর বিভাগের অন্যতম ব্যস্ত এই সড়ক পথে প্রতিদিন প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার মানুষ ও হালকা যানবাহন চলাচল করে থাকে। বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় শেষ পর্যন্ত মহিপুর তিস্তা দ্বিতীয় সেতু হুমকির মুখে পড়েছে । শুধু তাই এই পথে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেলে লালমনিরহাট জেলার সঙ্গে ও বুড়িমারী স্থল শুল্ক বন্দরের সরাসরি যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে। লালমনিরহাট জেলার লোকজনকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার ঘুরে রংপুরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
সরেজমিন ঘুরে বৃহস্পতিবার দেখা গেছে, গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের মহিপুর এলাকায় তিস্তা সেতুর উত্তর প্রান্তে সেতু রক্ষা বাঁধের প্রায় ৭০ মিটার ভেঙে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। বাঁধের ভাঙন অব্যাহত থাকায় স্থানীয়রা আতঙ্কে দিনযাপন করছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা মফিজার রহমান বলেন, সেতু রক্ষা বাঁধে প্রায় ৫ মাস আগেই ভাঙন শুরু হয়েছিল। তখন বাঁধের অংশটি সম্পূর্ণ অক্ষত ছিল। সে সময়ে বাঁধের ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সরকার অধিদপ্তর উদ্যোগ নিলে আজকের পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না।
লক্ষ্মটারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী বলেন, এটি ব্যবস্তম সড়ক ও সেতু। দ্রুত ভাঙনরোধে উদ্যোগ না নিলে তিস্তা সড়ক সেতুটি হুমকির মুখে পড়বে। তিনি বাঁধে ভাঙনের বিষয়টি উপজেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বাঁধের রক্ষণাবেক্ষণকারী কর্তৃপক্ষ স্থানীয় সরকার অধিদপ্তরকে জানিয়েছেন। তারা জরুরিভিত্তিতে কাজ করার কথা বলেছিলেন; কিন্তু পরবর্তীতে কোনো কাজ করেনি। ফলে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বাঁধের বড় অংশ ভেঙ্গে বিপজ্জনক অবস্থায় চলে গেছে। উজানের পানি তিস্তায় বাড়ছে তাই পুরো বাঁধটি দ্রুত ভেঙ্গে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে করে তিস্তা সেতু, রংপুর-লালমনিরহাট সড়ক, শংকরদহ, ইচলীসহ কয়েকটি চরের গ্রাম ভাঙনের হুমকির মুখে পড়েছে।
উল্লেখ্য, রংপুরের সঙ্গে লালমনিরহাট জেলার কালিগঞ্জ, পাটগ্রাম, হাতিবান্ধাসহ সব উপজেলার সড়ক যোগাযোগ সহজ করতে তিস্তা নদীর মাহিপুরে একটি সড়ক সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। ২০১৮ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ১২১ কোটি টাকা ব্যয়ে গঙ্গাচড়ার মহিপুরে তিস্তা নদীর ওপর এই দ্বিতীয় সেতু নির্মাণ করা হয়। এর ফলে বুড়িমারী স্থল শুল্ক বন্ধর ও রংপুরের সঙ্গে প্রায় ২৫ কিলোমিটার পথ কমে আসে।
চলতি বছরে বৃষ্টি শুরু হলে ভারত থেকে আসা তিস্তার উজানের ঢলের তীব্র স্রোত সরাসরি এসে আঘাত হানে বাঁধে। এতে বাঁধের নিচের অংশের মাটি ভেসে গিয়ে ব্লকগুলো ধসে পড়ে বিপজ্জনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এলাকার জনপ্রতিনিধিরা বিষয়টি স্থানীয় সরকার অধিদপ্তরের জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মুসাকে জানালে তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
পরে এলাকাবাসীর দাবির মুখে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতায় সেতুর রক্ষা বাঁধের ধস রোধে কাজ করার কথা জানানো হয়; কিন্তু পরবর্তীতে সেই কাজ বাস্তবায়ন করেনি কোনো কর্তৃপক্ষ।
সেপ্টেম্বরের ১৪ তারিখ থেকে উজানে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধটিতে তীব্র ভাঙন শুরু হয়। বুধবার ১৮ সেপ্টেম্বর বিকাল পর্যন্ত বাঁধের প্রায় ৭০ মিটার অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। উজানের ঢলের কারণে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।
এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার অধিদপ্তরের উপজেলা প্রকৌশলী ওবায়দুর রহমান বলেন, আমি এ উপজেলায় নতুন যোগদান করেছি। বাঁধ ভেঙ্গেছে কিংবা বাঁধটি আমাদেরও কিনা জানি না। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নেব।
গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান মৃধা বলেন, তিস্তা সেতু রক্ষা বাঁধে ভাঙনের বিষয়ে আমি ডিসি স্যার ও স্থানীয় সরকার অধিদপ্তরের (এলজিইডির) নির্বাহী প্রকৌশলীকে জানিয়েছি। তারা দ্রুত পদক্ষেপ নেবে বলে আমাকে জানিয়েছেন। এ বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।
