Logo
Logo
×

সারাদেশ

যুবদলের সেই দুই নেতার বিরুদ্ধে খাদ্যগুদাম কর্মকর্তার মামলা

Icon

রাজশাহী ব্যুরো

প্রকাশ: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৬:৩৪ পিএম

যুবদলের সেই দুই নেতার বিরুদ্ধে খাদ্যগুদাম কর্মকর্তার মামলা

রাজশাহীর দুর্গাপুরে খাদ্য বিভাগের ১৪০ বস্তা চাল চুরির অভিযোগ তোলা যুবদলের দুই নেতার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। দুর্গাপুর সরকারি খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে মামলাটি দায়ের করেছেন। যদিও গত বুধবার তাকে বদলি করা হয়েছে।

মামলার দুই আসামি হলেন- রেজাউল করিম (৩০) ও সজিব আলী (২৮)। রেজাউলের বাড়ি দুর্গাপুর পৌরসভার পূর্বসিংগা মহল্লায়, সজিবের বাড়ি পশ্চিমসিংগা। রেজাউল দুর্গাপুর পৌর যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির সাবেক সদস্য। সজিবও যুবদলের নেতা।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত ২৮ আগস্ট বেলা ১১টার দিকে যুবদলের এ দুই নেতা বিনা অনুমতিতে খাদ্যগুদামে যান এবং ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন যে, তিনি অনৈতিকভাবে অনেক আয়-রোজগার করেছেন। তাই তাদের দেড় লাখ টাকা চাঁদা দিতে হবে। চাঁদা দিতে না চাইলে তারা হুমকি দিয়ে চলে যান।

উল্লেখ্য, গত ২৮ আগস্ট খাদ্যগুদাম থেকে একটি ট্রলিতে করে ১৪০ বস্তা চাল নিয়ে গিয়ে গুদামের নৈশপ্রহরী শাহজাহান আলমের বাড়িতে ঢোকানো হচ্ছিল। যুবদলের ওই নেতাকর্মীরা বিষয়টি দেখে ভিডিও করে রাখেন। জানাজানি হওয়ায় দ্রুতই ওই চাল আবার সরিয়ে নেওয়া হয়।

পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাবরিনা শারমিন তার অফিসের কর্মচারীকে দিয়ে যুবদলের এই নেতাদের ডাকেন। সেখানে ইউএনও তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের পাশাপাশি মামলা করার হুমকি দেন বলে তারা অভিযোগ তোলেন।

ঘটনার পর ফেসবুক লাইভে এসে রেজাউল করিম বলেন, ‘গরিব মানুষের ১৪০ বস্তা চাল খাদ্যগুদাম থেকে চুরি করে খাদ্য কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম ও ইয়াসিন আলী নৈশপ্রহরী শাহজাহানের সহযোগিতায় তার বাসায় রাখে। রফিকুলের কাছে জানতে চাইলে তিনি ইউএনও স্যারের নাম বলেন। তার নির্দেশেই নাকি এই চাল শাজাহানের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়।’

তিনি অভিযোগ করেন, চাল চুরির প্রতিবাদ করায় ইউএনও তার বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি দেন। ভিডিও ডিলিট করতে তার ফোনও কেড়ে নেওয়া হয়।

এ ঘটনায় দৈনিক যুগান্তরসহ কয়েকটি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। এরপর গত বুধবার খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামকে সিরাজগঞ্জের কাজিপুর সংযুক্তিতে মুলাধলীতে বদলি করা হয়েছে। আর নিরাপত্তা প্রহরী শাহজাহান আলম ও বাবুল কুমারকে বগুড়া খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে বদলি করা হয়। তবে রফিকুল ইসলাম সেখানে না গিয়ে যুবদল নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা করলেন।

যুবদল নেতা রেজাউল করিম ও সজিব আলীর দাবি, ৭ টন চাল চুরির বিষয়টি ভিডিও করে সামনে আনার কারণে চাঁদাবাজির মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। উল্টো সেদিন চাল চুরির বিষয়টি ধামাচাপা দিতে টাকা নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল বলে তাদের দাবি।

অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও মামলার বাদী রফিকুল ইসলামকে ফোন করা হলে তিনি ধরেননি। গত বুধবার তিনি দাবি করেছিলেন, নৈশপ্রহরী শাহজাহান আলমের বাড়িতে কারা চাল নিয়ে গেছে তা তিনি জানেন না। সেই চাল পরে তার বাড়ি থেকে কোথায় নেওয়া হয়েছে সেটিও তিনি জানেন না।

দুর্গাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিকুল ইসলাম বলেন, খাদ্য কর্মকর্তা বাদী হয়ে দুজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। মামলার তদন্ত শুরু হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

চলতি মৌসুমে দুর্গাপুর খাদ্যগুদামে নিম্নমানের লাল-তামাটে বর্ণের চাল মজুতের অভিযোগ ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি গুদামে গিয়ে এই চাল জব্দ করেছেন ইউএনও। ইতোমধ্যে গুদাম থেকে প্রায় ৪০ লাখ টাকার ৮০ মেট্রিক টন নিম্নমানের চাল অপসারণ করা হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম সরবরাহকারীদের সঙ্গে যোগসাজশ করে কম দামে কেনা এই চাল ঢুকিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। এ ব্যাপারে খাদ্য বিভাগের পক্ষ থেকে তদন্ত চলছে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম