Logo
Logo
×

সারাদেশ

ছোট প্রকল্পে বড় দুর্নীতি

কাপাসিয়ায় ১৩৮ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘পুকুর চুরি’

Icon

কাপাসিয়া (গাজীপুর) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৩:২১ পিএম

কাপাসিয়ায় ১৩৮ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘পুকুর চুরি’

ছবি: যুগান্তর

গাজীপুরের কাপাসিয়ায় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতায় এবং লার্নিং এক্সিলারেশন ইন সেকেন্ডারি এডুকেশন (লেইস) প্রজেক্টের অর্থায়নে উপজেলার ১৩৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৬৫টি মাদ্রাসা এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক ৭৩টি প্রতিষ্ঠানে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি, জলবায়ুর পরিবর্তন ও সচেতনতা মূলক দেয়ালিকা এবং জলবায়ুর পরিবর্তন ও সচেতনতা বিষয়ক উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার দেওয়া জন্য নির্দেশনা রয়েছে। এর অংশ হিসেবে প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানকে ৫ হাজার টাকা অনুদান দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। ১ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মোট ৬ লাখ ৯০ হাজার টাকায় বৃক্ষ রোপণ, দেয়ালিকা ও বক্তব্য প্রতিযোগিতায় পুরস্কার বিতরণ প্রকল্পটি ছোট হলেও এর বাস্তবায়নে পুকুর চুরির মতো ঘটনা ঘটেছে। 

সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা গেছে, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস গত ২৭ জুলাই ইউসিবিএল ব্যাংক প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের নিজ নিজ একাউন্টে ৫ হাজার টাকা পাঠিয়েছেন এবং প্রতিষ্ঠান প্রধানকে নির্দেশনা দিয়েছেন চারাগাছ রোপণ, চিত্রাঙ্কন দেয়ালিকা এবং উপস্থিত বক্তৃতা বিতর্ক প্রতিযোগিতা পুরস্কার দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।  

কিন্তু নির্ধারিত সময় অতিক্রম হলেও অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান প্রধান নিজেই ওই অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান ৪ থেকে ১০টি চারাগাছ রোপণ করে ফেসবুকে পোস্ট করে জানান নিয়েছেন এবং ওই পোস্ট লিখেছেন 'বৃক্ষ রোপণ কর্মসূচি'। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে বাস্তবিক দেয়ালিকার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি এবং বক্তৃতা বিতর্ক প্রতিযোগিতা কবে হয়েছে বা হবে এর সদুত্তর প্রতিষ্ঠান প্রধান দিতে পারননি। অনেক প্রতিষ্ঠান প্রধান চারাগাছ রোপণ সহ অন্যান্য নির্দেশনা অমান্য করে পুরো অর্থ পকেটে ঢুকিয়েছেন। প্রকল্পটি ছোট হলেও এতে দুর্নীতি বড় থাবা পড়েছে। বৃক্ষরোপণ মৌসুমে মাঝারি থেকে বড় ১টি ফলজ বা বনজ চারার স্থানীয় বাজার মূল্য ৪০ থেকে ৮০ টাকা হলেও ওই প্রতিষ্ঠান প্রধানরা ৫ হাজার টাকায় ৪ থেকে ১০টি ছোট বা মাঝারি চারাগাছ রোপণ করেছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেখানে মানুষ গড়ার কারিগর সেখানে সামান্য অর্থ আত্মসাৎ থেকে মুক্তি পায়নি বৃক্ষরোপণসহ ছাত্রছাত্রীদের অংশগ্রহণমূলক জলবায়ু পরিবর্তন ও সচেতনতামূলক দেয়ালিকা এবং উপস্থিত বক্তৃতা বিতর্ক প্রতিযোগিতার অর্থ। কাগজে কলমে প্রকল্পটি শতভাগ বাস্তবায়ন হলেও বাস্তবিক চিত্রের বিপরীত। যে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চারা রোপণ, দেয়ালিকা ও বক্তৃতা প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান করেননি তার মধ্যে বড়চালা আমির উদ্দিন দাখিল মাদ্রাসা, সুলতানপুর মামুনিয়া বালিকা দাখিল মাদ্রাসা, ভাকোয়াদী উচ্চ বিদ্যালয়, দিঘাব আমজাদিয়া ফাজিল ডিগ্রী মাদ্রাসা, দিঘাব ‎আমানউল্লাহ বালিকা মাদ্রাসা, উজলী দিঘীরপাড় জে ইউ আলিম মাদ্রাসাসহ অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান।

এ ব্যাপারে তিলশুনিয়া দারুসছুন্নাহ দাখিল মাদ্রাসার সুপার শরিফুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, উপরের নির্দেশ আছে ফলজ ও বনজ কমপক্ষে ২টি চারাগাছ রোপণ করতেই হবে সেখানে ৪টি চারা রোপণ করেছি তাছাড়া দেয়ালিকা এবং বক্তব্য প্রতিযোগিতা এখনো করা হয়নি অচিরেই করব।

এ বিষয়ে ডুমদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. মোক্তার উদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, বক্তৃতা বিতর্ক পুরস্কার বিতরণ করেছি তবে কতদিন পূর্বে করেছি তা মনে নেই এবং দেয়ালিকা করেছি তবে দেয়ালে লাগানো হয়নি। তবে কিছুক্ষণ পরে ফিরতি ফোনে জানান, দু-এক দিনের মধ্যে ম্যানেজিং কমিটির মিটিং ডেকে নির্দেশনা বাস্তবায়ন করবেন।

এ বিষয়ে দিঘাব আমজাদিয়া ফাজিল ডিগ্রী মাদরাসা অধ্যক্ষ মাওলানা হাদিউল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, নির্দেশনা পালন করেছি তবে কোনো তথ্য প্রমাণের ছবি নেই।

এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এমএ আরিফ সরকার যুগান্তরকে বলেন, ইতোমধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠান ব্যয়ের কাগজ আমার অফিসে জমা দিয়েছে তবে কাগজের সেঙ্গে বাস্তবতার মিল না পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম