Logo
Logo
×

সারাদেশ

মাদারীপুরে সংখ্যালঘু বৃদ্ধার জমি দখলের অভিযোগ, থানা পুলিশও নির্বিকার

Icon

টেকেরহাট (মাদারীপুর) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৩:৫৪ পিএম

মাদারীপুরে সংখ্যালঘু বৃদ্ধার জমি দখলের অভিযোগ, থানা পুলিশও নির্বিকার

ছবি: যুগান্তর

কখনো দিনে, আবার কখন রাতে নির্মাণ করা হচ্ছে দোকানঘর। সংখ্যালঘু এক বৃদ্ধার জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে এক প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে। থানায় লিখিত দিয়েও কোনো সুরাহা মেলেনি। ফলে চরম আতঙ্কে ভুগছে অসহায় পরিবারটি।

সবশেষ ভূমি জরীপ বিআরএস কাগজে দেখা যায়, মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার ডাইয়ারচর মৌজার ৯৫২ ও ১১৩১নং খতিয়ানের ৬৩২, ৬২৮, ৬২৯ দাগের সাড়ে ১০ শতাংশ জমির মালিক রামেশ সাহার স্ত্রী খনা রানী সাহা। প্রতিবছর খাজনা পরিশোধ করে ভোগদখলে আছেন দীর্ঘদিন। পাশের পাঁচ্চর বাজারে ছেলে বিষ্ণুপদ সাহার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হওয়ায় সেখানে বসবাস শুরু করেন খনা ও তার পরিবার। 

বর্তমানে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী বৃদ্ধা খনা সাহা। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ওই জমির ওপর নজর পড়ে স্থানীয় প্রভাবশালী সিরাজুল ইসলাম সিরু চৌধুরী ও তার আত্মীয় (পুত্ররা) আবুল খায়েরের। রাতারাতি জমি দখল করে দোকানাপাট নির্মাণ শুরু করেন অভিযুক্তরা। বাধা দেওয়ায় হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীর পরিবারের। থানায় লিখিত জানালে পুলিশ গিয়ে কাজ বন্ধ করে দেয়। পরে রাতের আঁধারে আবারও নির্মাণ কাজ শুরু করে সিরাজ চৌধুরীর ও তার লোকজন। এতে চরম আতঙ্কে ভুক্তভোগীর পরিবার। 

ভুক্তভোগী বৃদ্ধা খনা সাহার ছেলে বিষ্ণু সাহা বলেন, আমার মায়ের বয়স ৮০ বছর। ডায়রারচর মৌজায় আমার বৃদ্ধা মায়ের সাড়ে ১০ শতাংশ জমি। সেটি তার পৈত্রিক সম্পত্তি। মা-বাবা আমার সাথে পাঁচ্চর এলাকায় বসবাস করে। গত ৫ আগস্টের পর শুরু হয় ওই জমি দখলের চেষ্টা। পরে শেষমেশ পুরো জমিটাই এখন দখলে নিয়ে নেয় স্থানীয় সিরু চৌধুরীসহ তার লোকজন। আমি নিরহ মানুষ, কোথাও কোন সুবিচার পাচ্ছি না।     

বিষ্ণুপদ সাহার স্ত্রী বন্যা রানী সাহা বলেন, আমাদের এই জমির মূল্য কয়েক কোটি টাকা। আজকে আমার শাশুড়ির জমি দখল করেছে, কালকে আমাদের ঘরবাড়ি দখল করবে। আমরা কোথায় যাবো, বর্তমান সরকারের কাছে বিনতি করছি, আমাদের এই সমস্যা থেকে মুক্ত করুক। আমরা এখন আতঙ্কে আছি। 

এদিকে অভিযুক্ত সিরাজুল ইসলাম সিরু চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করে তার কোন ব্যক্তব্য পাওয়া যায়নি। ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও কোন সাড়া মেলেনি। তবে, সিরু চৌধুরীর আত্মীয় (সম্পর্কে পুত্ররা) আবুল খায়ের দাবি করেন, নিজের সম্পত্তিতেই ঘর নির্মাণ করছেন তারা। তিনি বলেন, জমির দাম বেড়েছে, তাই জালজালিয়াতি শুরু করেছে বিষ্ণু সাহা। প্রতিটি হিসাবই নিবো। ৪০ বছর ধরে আমরা এখানে বসবাস করছি। আমরা মাটি ভরাট করেছি, গাছপালা রোপন করেছি। আমরা আমাদেরই জমিতে ঘর নির্মাণ করছি, অন্য কারো জমি দখল করছি না। এই জমি দেখভাল করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে আমার বোনের শ্বশুর সিরাজুল ইসলাম সিরু চৌধুরীকে।       

এ ব্যাপারে শিবচর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রকিবুল ইসলাম জানান, জমি দখলের অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। পুলিশ গিয়ে কাজ বন্ধ করে দেয়। জমিজমা সংক্রান্ত বিষয়ে পুলিশের তেমন কিছুই করার থাকেনা। ভুক্তভোগী আদালতে মামলা করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এইচ এম ইবনে মিজান জানান, ভুক্তভোগীর পরিবার থেকে অভিযোগ পাওয়া গেছে, বিষয়টি ভুমি সহকারি কমিশনারের মাধ্যমে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এরইমধ্যে ভুমি সহকারী কমিশনারকে নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। 

মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জমিজমা নিয়ে আইন শৃঙ্খলার কোন অবনতি না ঘটে সেজন্য থানা পুলিশকে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে দুই পক্ষকে থানায় ডেকে সমাধানের চেষ্টা করা হবে।                

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম