মেয়ের জন্য বাঁচতে চান অর্নাসে পড়ুয়া মাসুদা!
চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮:১৬ পিএম
চোখে অশ্রু নিয়ে কোলের শিশুকে জড়িয়ে ধরে আছেন মাসুদা খাতুন। — ছবি: দৈনিক যুগান্তর
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
দশম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন মাসুদা খাতুন। কিন্ত বাবার দরিদ্রতায় পড়ালেখা তো দূরের কথা, পরীক্ষার আগেই বসতে হয় বিয়ের পিঁড়িতে। বিয়ের পরপরই গর্ভে সন্তান আসে মানসিকভাবে ভেঙে পড়া মাসুদার। এরমধ্যে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে বেশ ভালোভাবেই উত্তীর্ণ হন। জন্ম হয় কন্যা সন্তানের। কিন্তু দিনমজুর স্বামীর ইচ্ছা ছিল না স্ত্রীকে পড়াশোনা করানোর!
তবে নিজের অদম্য ইচ্ছা শক্তিতে আপন আলোয় এগিয়ে যেতে থাকে মাসুদা। ভর্তি হন কলেজে। এরপর সংসারে অভাব অনটন প্রবল আকারে দেখা দিলে স্বামী-স্ত্রী মিলে চলে যান ঢাকায়। চাকরি নেন গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীতে। কিন্তু রক্তে যার শিক্ষক হওয়ার নেশা তাকে কী দমিয়ে রাখা যায়? বছর ঘুরতে না ঘুরতেই মাসুদা ফিরে আসেন বাবার বাড়িতে। ।
দরিদ্রতার কষাঘাতে জর্জরিত ভ্যান চালক বাবা নাজিম উদ্দিন ও গৃহিণী মা মমতা খাতুন মেয়েকে পড়াশোনার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন। মাসুদা আবারো শুরু করেন পড়ালেখা। সংসার সামলানোর পাশাপাশি অনেক প্রতিবন্ধকতা পেড়িয়ে পড়ালেখায় মনোনিবেশ করেন মাসুদা। তবে, ভাগ্যে নামক শব্দটি বার বার মাসুদাকে আঘাত করছে। বর্তমানে চাটমোহর সরকারি কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে পড়ুয়া অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী মাসুদা ক্যান্সারে আক্রান্ত! টাকার অভাবে পাবনার চাটমোহর উপজেলার ঝাঁকড়া গ্রামের মোশারফ হোসেনের স্ত্রী মাসুদার চিকিৎসা হচ্ছে না! বিনা চিকিৎসায় এখন মৃত্যুর প্রহর গুনছেন শিক্ষক হতে চাওয়া মাসুদা খাতুন।
ছাইকোলা দক্ষিণপাড়া গ্রামে মাসুদার বাবার বাড়িতে গিয়ে সরেজিমন দেখা যায়, জরাজীর্ণ টিনের ঘরে বিছানার এককোণে শুয়ে পেটের অসহ্য যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন মাসুদা খাতুন। মায়ের কান্না দেখে পাশে বসে ছয় বছর বয়সী একমাত্র মেয়ে মাশিয়াত খাতুনও কান্না করছে। মায়ের কপালে ও গালে বার বার চুমু খাচ্ছে শিশুটি। মেয়ের অসহ্য যন্ত্রণা দেখে কাঁদছেন মা মমতা খাতুনও। বাড়ির পরিবেশ একদম থম থমে। বিছানার পাশেই রাখা টেবিলে থরে থরে সাজানো মাসুদার পড়ার বই।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া মাসুদাকে চিকিৎসক প্রাথমিক অবস্থায় ৮টা কেমোথেরাপি নিতে বলেছেন। প্রতিটা কেমোথেরাপি ও আসা যাওয়ার খরচ মিলিয়ে প্রায় ৩০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। ধারদেনা করে ৩টা কেমোথেরাপি নেওয়ার পর আর সম্ভব হয়নি! মাসুদার অপারেশন, কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি নেওয়াসহ সুস্থ হতে প্রায় ৫ লাখ টাকার প্রয়োজন-এমনটাই জানিয়েছেন চিকিৎসক।
কিন্তু বিশাল অঙ্কের এই টাকার কথা শুনে মাসুদাকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনেন তার বাবা-মা। গার্মেন্টস কর্মী স্বামীর সম্বল যা ছিল সবটুকু বিক্রি করে স্ত্রীর চিকিৎসা করিয়েছেন। এখন স্বামী ও বাবার পক্ষে আর কোনো মতেই মাসুদার চিকিৎসা করানো সম্ভব নয়। তাই, বিনা চিকিৎসায় শিক্ষক হতে চাওয়া মাসুদা খাতুন এখন মৃত্যুর প্রহর গুনছেন!
মেয়ের জন্য বাঁচতে চাওয়া মাসুদা খাতুন যুগান্তরকে বলেন, সংসার কী সেটা বোঝার আগেই বাল্য বিয়ে হয়। এরপর অনেক সংগ্রাম করে পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছি। বাবা-মা, স্বামী কেউ-ই পড়ালেখা জানে না। ছোট বেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল শিক্ষক হওয়ার। কিন্তু আমার সব স্বপ্ন শেষ করে দিয়েছে ক্যান্সার নামক মারণ রোগ। কিন্তু আমি মারা গেলে আমার মেয়েকে কে দেখবে? মেয়ের কী হবে? মা ছাড়া সন্তানের যে কী পরিণতি হয় সেটা আমি জানি। আমি আমার মেয়ের জন্য বাঁচতে চাই। মাসদুা খাতুন সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার অনুরোধ জানান।
বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুসা নাসের চৌধুরীকে জানালে তিনি যুগান্তরকে বলেন, টাকার অভাবে চিকিৎসা হবে না বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। আপনি সমাজসেবা অফিসে আবেদন করতে বলেন। আমি দ্রæততম সময়ের মধ্যে সরকারি সহযোগিতা পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করব। তবে সরকারি সহযোগিতা সীমিত হওয়ার কারণে সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার অনুরোধ জানান তিনি।
মাসুদার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন এই নাম্বারে-০১৭১০-০৯৭৫৩৫
