|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ফরিদপুরে রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) শুরু হয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব। আবহমানকাল ধরে প্রতি বছর ফরিদপুরে অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণভাবে এ উৎসব পালন করা হয়।
দেশের মধ্যে অন্য যে কোনো জেলার তুলনায় ফরিদপুরে অত্যন্ত উৎসবমুখর পরিবেশে দুর্গাপূজার আয়োজন হয়ে থাকে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এমনকি ভারত থেকেও ভক্তরা পূজার দিনগুলোতে ফরিদপুরে আসেন প্রতিমা দর্শনে। পূজার প্রস্তুতি নিতে কয়েক মাস আগে থেকেই চলে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ।
ফরিদপুরে এবারের দুর্গাপূজায় বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে রয়েছে আলফাডাঙ্গা পৌরসভার কুসুমদী গ্রামের শ্রীশ্রী হরি মন্দিরের মণ্ডপ। এখানে পৌরাণিক কাহিনী অবলম্বনে সতীর ৫১টি পীঠের প্রতিমার তাৎপর্য তুলে ধরে ১৫১টি প্রতিমা বানানো হয়েছে। ভারত থেকে আসা পাঁচজন শিল্পী এ প্রতিমা নির্মাণ করেছেন।
পাশাপাশি তিনটি ডিজিটাল প্রতিমা করা হয়েছে। এর একটি ঢুলি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঢোল বাজাবে আর একটি প্রতিমা মোমবাতি জ্বালিয়ে আরতি দেবে। এছাড়া দুর্গা প্রতিমার পায়ের নিচে থাকা বাঘটিও সক্রিয়ভাবে তার মুখাবয়ব নাড়িয়ে ভক্তদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। এ প্রতিমা নির্মাণ করতে তিন মাস সময় লেগেছে।
শ্রীশ্রী হরি মন্দিরের উপদেষ্টা কার্তিক চন্দ্র দাস বলেন, শিব ও দুর্গার বিয়ের পর দুর্গার বাবা দক্ষ রাজা একটি যজ্ঞের আয়োজন করেন। সেই অনুষ্ঠানে শিবকে অপমানিত করা হয়। এ অপমান সহ্য করতে না পেরে দেবী নিজেই যজ্ঞের আগুনে আত্মাহুতি দেন। এ ঘটনায় ক্রোধে উন্মত্ত শিব দেবীর মৃতদেহ নিয়ে প্রলয় নৃত্য শুরু করেন। পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য ভগবান বিষ্ণু সুদর্শনচক্র দিয়ে দেবীর দেহকে ৫১ খণ্ডে বিভক্ত করে দেন। যে যে স্থানে দেবীর দেহের অংশগুলো পড়েছিল সেই স্থানগুলোই শক্তিপীঠ বা সতীপীঠ নামে পরিচিত।
তিনি বলেন, সতীর পীঠগুলো বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, তিব্বত ও ভুটানসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে আছে। প্রতিটি জায়গায় গিয়ে ভক্তদের সেই পীঠ দেখা সম্ভব নয়। এজন্য এক আঙিনায় সতীপীঠের প্রতিমা দেখার জন্য আমাদের এ আয়োজন।
ফরিদপুরে এ বছর ৭৫৮ মণ্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১৯৮টি মণ্ডপে পূজার আয়োজন করা হয়েছে। এরপর মধুখালীতে ১৫৭ ও বোয়ালমারীতে ১২২টি।
রোববার সন্ধ্যায় বেলতলায় ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। সপ্তমী, অষ্টমী, নবমীর পর আগামী ২ অক্টোবর রাতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে পূজার আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে।
ফরিদপুর শহরের আকর্ষণীয় পূজামণ্ডপের মধ্যে রয়েছে টেপাখোলা শরৎ সাহার বাড়ির মণ্ডপ, ফরিদপুর বাসস্ট্যান্ডে বাস মালিক গ্রুপ ও মিনিবাস মালিক সমিতির পূজা, কাঁসারি পট্টির পূজামণ্ডপ, পূর্ব খাবাসপুরের পূজামণ্ডপ, নিলটুলী সার্বজনীন পূজামণ্ডপ, শোভারামপুর সাহাপাড়ার পূজামণ্ডপ, বান্ধব পল্লির পূজামণ্ডপ, লক্ষ্মীপুর পালপাড়া, ওয়েস্টার্ন পাড়ার পূজামণ্ডপ, ঝিলটুলী সার্বজনীন পূজামণ্ডপ অন্যতম।
রোববার মহাষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। সকাল থেকেই মন্দিরে মন্দিরে চলছে পুরোহিতের মন্ত উচ্চারণ, ঢাকের ধনী, উলুধ্বনি ও শঙ্খের ধ্বনিতে মুখরিত মন্দির প্রাঙ্গণ। ধূপধুনচি, পঞ্চপ্রদীপ আর ঢাকের বাদ্যের তালে আসনে অধিষ্ঠিত হন দেবী দুর্গা। বোধনের ঘট স্থাপনের মধ্য দিয়েই দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। ষষ্ঠীতে দুর্গা দেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাস সম্পন্ন হয়।
রোববার সকালে বেলগাছ তলে (বিল্ববৃক্ষের নিচে) দেবীর আবাহন, সংকল্প এবং ‘ত্রিনয়নী’ দুর্গা দেবীর নিদ্রা ভাঙিয়ে পূজার্চনার মাধ্যমে তাকে বরণ করা হয়। সকালেই কল্পারম্ভ, বিহিত পূজা ও ষষ্ঠী পূজা অনুষ্ঠিত হয়।
এ বছর দেবী দুর্গা এসেছেন গজে (হাতি) চড়ে। গজে আগমনের অর্থ শান্তি, সমৃদ্ধি ও শস্য-শ্যামলার প্রতীক। পূজা শেষে দেবীর প্রস্থান হবে দোলায় (পালকি) চড়ে, যা মহামারী বা মড়কের ইঙ্গিত বহন করে।
মহাচণ্ডীতে উল্লেখ রয়েছে, ত্রেতাযুগে ভগবান রামচন্দ্র রাবণের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হন। শক্তি বৃদ্ধির আশায় শরৎকালে দেবী দুর্গার পূজা করেছিলেন। এরপর তিনি যুদ্ধে জয়লাভ করে রাবণকে পরাজিত করে স্ত্রী সীতাকে উদ্ধার করেন। সেই থেকে প্রতি বছর শরৎকালে দুর্গোৎসব পালিত হয়ে আসছে।
শাস্ত্রকারদের মতে, দেবী দুর্গা তার ভক্তদের দুঃখ, ভয়, শোক ও যন্ত্রণা থেকে রক্ষা করেন।
ফরিদপুরের পুলিশ সুপার এমএ জলিল বলেন, এবারের দুর্গোৎসব নির্বিঘ্নে পালনের জন্য বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রত্যেক মণ্ডপে সিসি ক্যামেরাসহ পুলিশ প্রশাসন সতর্ক থাকবে। আমাদের গোয়েন্দা তথ্যে কোনো শঙ্কার তথ্য নেই।
তিনি বলেন, এবারে ফরিদপুরে ৭১টি মোটরসাইকেল মোবাইল টিম, গুরুত্বপূর্ণ ১৫টি মণ্ডপে স্থায়ী ১৫টি পিকেট টিম, ১১টি পিকআপ মোবাইল টিম, ডিবির ৩০ জন সদস্য, ডিএসবির ২৫ জন সদস্য, ট্রাফিক পুলিশের ৪০ জন সদস্য ও ৩ হাজারের অধিক আনসার সদস্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য মোতায়েন থাকবে।
