ভুয়া কাগজপত্রে প্রধান শিক্ষক নিয়োগের অভিযোগ
পাকুন্দিয়া (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৪:৩৯ পিএম
পাকুন্দিয়ায় কোদালিয়া সহরুল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয়। ছবি- যুগান্তর
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় কোদালিয়া সহরুল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয়ে ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে প্রধান শিক্ষক পদে গোলাম মোস্তফা নামে একজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সভাপতি মাজহারুল ইসলাম মাসুদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠেছে।
নিয়োগপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক গোলাম মোস্তফার বিরুদ্ধে সভাপতির স্বাক্ষর জালিয়াতি করে মাউসিতে কর্মরত সাবেক সভাপতি মাসুদের সহায়তায় এমপিও প্রাপ্তির আবেদন করারও অভিযোগ রয়েছে।
নিয়োগকে কেন্দ্র করে মামলা জটিলতায় দশ বছর যাবত এ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই। এছাড়া সহকারী প্রধান শিক্ষকসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক ও কর্মচারী সংকট থাকায় শত বছরের পুরোনো এ বিদ্যালয়টির পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। দ্রুত সংকট নিরসনের দাবি অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের।
বিদ্যালয় সূত্র জানায়, ১৯১০ সালে কোদালিয়া সহরুল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১৩ সালে বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক সালেহ আহম্মেদের মৃত্যুর পর প্রধান শিক্ষক পদটি শূন্য হয়।
২০১৪ সালে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ মাজহারুল হক মাসুদ গোলাম মোস্তফা নামে একজনকে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, প্রধান শিক্ষক নিয়োগকে কেন্দ্র করে শিক্ষক ও স্থানীয় লোকজন নিয়োগের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে। পরে প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে যোগদান করলেও শিক্ষক ও স্থানীয় লোকজন মিলে ওই শিক্ষককে বিদ্যালয়ে প্রবেশে বাধা দেয়।
এতে দুটি পক্ষের লোকজনের মাঝে কয়েক দফা হাতাহাতি হয়। এর জেরে এবং নিয়োগের বৈধতা চ্যালেন্স করে উভয়পক্ষ পালটাপালটি একাধিক মামলা করে।
একটি মামলার বাদী এবং ওই বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাফিজ উল্লাহ বলেন, ২০১৪ সালে অনৈতিকভাবে নির্বাচিত বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ মাজহারুল হক মাসুদ তার অবৈধ হস্তক্ষেপে বিদ্যালয়টি দীর্ঘদিন ধরে নানা প্রশাসনিক জটিলতার সম্মুখীন হচ্ছে। ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে ওই নিয়োগের বিরুদ্ধে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকসহ আরও দুজন সহকারী শিক্ষক কিশোরগঞ্জ জেলা সহকারী জজ আদালতে মামলা করেন।
তিনি বলেন, জালিয়াতির মামলায় সাবেক সভাপতি মাজহারুল হক মাসুদ ও তার অবৈধ নিয়োগপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক গোলাম মোস্তফার বিরুদ্ধে কিশোরগঞ্জ জেলা ম্যাজিস্টেট আদালত থেকে গত ২৪ আগস্ট সমন জারি করা হয়েছে। তাদেরকে আগামী ২৬ অক্টোবর আদালতে সশরীরে হাজির হওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছে।
নিয়োগ পাওয়া প্রধান শিক্ষক গোলাম মোস্তফা বলেন, আমি সম্পূর্ণ নিয়মতান্ত্রিকভাবে বিদ্যালয়ে চাকরি নিই এবং যোগদান করে শিক্ষকদের বেতন ও বোনাসে স্বাক্ষর করি।
যোগদানের দেড় মাস পর কয়েকজন শিক্ষক ও স্থানীয় লোকজন মিলে আমাকে বিদ্যালয়ে আসতে বাধা দেয়। আমি কয়েক দফায় বিদ্যালয়ে আসার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হই। তাই আইনি প্রক্রিয়ায় ফেরার চেষ্টা করছি।
কালিয়াচাপরা চিনিকল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমজাদ হোসেন বলেন, বিদ্যালয়টি শতাধিক বছরের পুরোনো এবং ইতিহাস ঐতিহ্য বহণ করে আসছে। বর্তমানে প্রায় হাজারো শিক্ষার্থী রয়েছে এই স্কুলে।
বেশ কয়েক বছর ধরে প্রধান শিক্ষক নিয়োগকে কেন্দ্র করে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে এতে বিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি তথা শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় বেঘাত ঘটছে। আমরা এর দ্রুত সমাধান চাই।
পাকুন্দিয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ওমর ফারুক ভূঁইয়া বলেন, এ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও অন্যান্য পদে নিয়োগ প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় না করে সাবেক সভাপতি মাজহারুল হক মাসুদ একক ক্ষমতাবলে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন। এজন্যই বিদ্যালয়টিতে দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা তৈরি হয়েছে।
কিশোরগঞ্জ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোছা. মাকছুদা আক্তার বলেন, মামলা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে বিদ্যালয়টি দীর্ঘ মেয়াদী সংকটে পড়েছে। যেহেতু বিষয়টি নিয়ে উভয়পক্ষ আদালতের দারস্থ হয়েছে, তাই এ বিষয়ে আমাদের কিছু করার নেই। আদালত থেকেই নিষ্পত্তি করতে হবে।
