Logo
Logo
×

সারাদেশ

ঢাকেশ্বরী-সদরঘাটে বিজয়া শোভাযাত্রা, দেবী দুর্গার বিদায়

Icon

হাজারীবাগ (ঢাকা) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০২৫, ১১:০৩ পিএম

ঢাকেশ্বরী-সদরঘাটে বিজয়া শোভাযাত্রা, দেবী দুর্গার বিদায়

শারদীয় দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলো। বিজয়া দশমীতে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির প্রাঙ্গণ থেকে সদরঘাট পর্যন্ত বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গাকে বিদায় জানালেন শত শত ভক্ত-অনুরাগী। ভক্তদের মনে একদিকে বিদায়ের বেদনা, অন্যদিকে নতুন করে আমন্ত্রণ জানানোর প্রতীক্ষা। 

হিন্দু ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, মহালয়ার দিন কন্যারূপে আগমন ঘটে দেবীর। দশমীতে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে তিনি এক বছরের জন্য কৈলাসে ফিরে যান। 

উৎসবমুখর পরিবেশে এ শোভাযাত্রা মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির আয়োজনে বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) বিকালে শুরু হয়ে কয়েক ঘণ্টা রাজধানীর প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে। 

শোভাযাত্রায় রঙিন সাজসজ্জা, ঢাক-ঢোল, শঙ্খধ্বনি আর ভক্তিগীতির সুরে মুখরিত হয়ে ওঠে রাজধানী। ছোট-বড়, নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে বিভিন্ন পেশার মানুষ হাতে দেবীর প্রতীক, আলপনার ছাপ, দেশীয় বাদ্যযন্ত্র ও পতাকা নিয়ে যোগ দেন। ট্রাকে নেচে-গেয়ে শোভাযাত্রায় অংশ নেয় বিভিন্ন পূজা উদযাপন কমিটি।

সরেজমিন দেখা যায়, বিকালের পর থেকেই ঢাকেশ্বরী মন্দির প্রাঙ্গণ ও আশপাশের এলাকায় মানুষের ঢল নামে। সাদা-লাল শাড়ি, রঙিন পাঞ্জাবি ও ঐতিহ্যবাহী পোশাকে সজ্জিত নারী-পুরুষেরা শোভাযাত্রার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকেন। 

ট্রাকে সাজসজ্জা, আলোকসজ্জা, বাদ্যযন্ত্র ও ভক্তদের নৃত্যে এলাকা যেন মেতে ওঠে উৎসবে। শিশুদের হাতে কাগজের পতাকা, কিশোরদের মুখে ঢাকের তালে নাচ-গান, আবার কোথাও মঙ্গলশঙ্খের ধ্বনি—সব মিলিয়ে পুরো পরিবেশ এক অনন্য ভক্তিময় আবহ তৈরি করে।

ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল, শিববাড়ি আবাসিক এলাকার শিবমন্দির, তেজগাঁও শাহীনবাগ সার্বজনীন পূজা কমিটি, আজিমপুর সরকারি আবাসন পূজা কমিটি, তেজগাঁও ফার্ম সরকারি প্রাথমিক হিন্দু কল্যাণ সমিতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক এলাকার রামকৃষ্ণ ধর্মসভা, শাহজাহানপুর রেলওয়ে সার্বজনীন পূজা মন্দিরসহ শতাধিক ট্রাক শোভাযাত্রায় যুক্ত হয়।

শোভাযাত্রাটি ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকে শুরু হয়ে পলাশী মোড়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দোয়েল চত্বর, সচিবালয়, গুলিস্তান হয়ে সদরঘাটে পৌঁছায়। সেখানে নির্দিষ্ট আচার-অনুষ্ঠান শেষে সম্পন্ন হয় দেবী দুর্গার বিসর্জন।

মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব বলেন, বিজয়া শোভাযাত্রা এখন আর শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় আচার নয়, বরং ঢাকার মানুষের জন্য এক মহাসাংস্কৃতিক মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। এই শোভাযাত্রা শুভ শক্তির জয় ও অশুভ শক্তির পরাজয়ের প্রতীক। মানুষ এখানে সাম্য, ভ্রাতৃত্ব ও মিলনের বার্তায় একত্রিত হয়।

তিনি জানান, দেবী দুর্গার বিদায় মানেই কেবল কৈলাশে ফিরে যাওয়া নয়, বরং মানুষের মনে এই আশার আলো জ্বেলে দেওয়া-আগামী বছর আবার দেবী ফিরে আসবেন। 

সবার প্রতি বিজয়ার শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেন, এই উৎসব যেন আমাদের সমাজকে হিংসা, বৈষম্য ও অশুভ শক্তির হাত থেকে মুক্ত করে সাম্য, শান্তি ও সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ করে।

শোভাযাত্রাকে ঘিরে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল চোখে পড়ার মতো। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে পুলিশ, র‌্যাব ও ডিবির পাশাপাশি অসংখ্য স্বেচ্ছাসেবক দায়িত্ব পালন করেন।

সকাল থেকেই ঢাকেশ্বরীসহ রাজধানীর সব পূজামণ্ডপে চলে দেবীর আরাধনা। সকাল ৯টার পর বিহীতপূজা, দর্পণ বিসর্জন ও ঘট বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দশমীর আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। দুপুরে সধবাদের সিঁদুর খেলায় অংশ নিয়ে আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মাতেন ভক্তরা।

কেন্দ্রীয় পূজা উদযাপন পরিষদের আয়োজিত আরেকটি শোভাযাত্রা পলাশীর মোড় থেকে যাত্রা শুরু করে পুরান ঢাকার ওয়াইজঘাটে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে একে একে প্রতিমা বিসর্জন হয়। পাশাপাশি আশুলিয়া, বছিলা ও অন্যান্য এলাকাতেও একইভাবে বিসর্জনের আয়োজন করা হয়।

এবার রাজধানীতে ২৫৯টি এবং সারা দেশে মোট ৩৩ হাজার ৩৫৫টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম