Logo
Logo
×

সারাদেশ

আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটালো তিস্তাপাড়ের মানুষ

Icon

গঙ্গাচড়া (রংপুর) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ১১:০৯ এএম

আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটালো তিস্তাপাড়ের মানুষ

ছবি: যুগান্তর

কয়েকদিনের ভারি বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে হু হু করে বাড়ছিল তিস্তা নদীর পানি। রোববার (৫ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৬টায় দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমার (৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার) ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। যদিও বেলা ১২টায় ৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে এবং বিকাল ৩টায় ওই পয়েন্টে বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। অস্বাভাবিক পানি বাড়তে থাকায় নদী কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে। সন্ধ্যা ৬টায় উপজেলার নিম্নাঞ্চলের বাসীন্দাদের সতর্ক করে মাইকে প্রচারণা চালানো হয়।

নদীর গর্জনে একরকম বিপাকে পড়েন নদী তীরের বাসিন্দারা।

সরেজমিন ও মোবাইল ফোনের মাধ্যমে রংপুর জেলার গঙ্গাচড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিলে রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পানির অস্বাভাবিক বৃদ্ধির তথ্য আসতে থাকে। সর্বশেষ রাত ১২টায় সর্বোচ্চ ৩৫ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধির তথ্য আসে।

এরপর রাত যত বাড়তে থাকে পানিও বাড়তে থাকে, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও বাড়তে থাকে নদী তীরবর্তী মানুষগুলোর। 

তিস্তাপাড়ের মিজান জানান, বিকাল থেকে পানি বাড়া শুরু হলো, চরের ফসলগুলো তলিয়ে গেল—সব আশা শেষ হয়ে গেল। কখন যে বাড়িতে পানি ওঠে সেই চিন্তাই করছি। সময়-অসময়ের এ বন্যায় আমরা নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছি। আমি বাহিরে ঘুমহীন ঘুরছি, দেখেন আমার মতো শত শত মানুষ ঘুরছে। বাড়িতে গিয়ে দেখেন প্রতিটি পরিবারের লোকজন আতঙ্ক ও ভয় নিয়ে জেগে জেগে ঘুমহীন রাত কাটাচ্ছে। আমাদের নিয়ে কারও ভাবার যেনো সময়টুকুও নেই। এত দুঃখ-কষ্টের পরেও ভ্যাট-ট্যাক্স দেই।

আমাদের নিয়ে একটু ভাবুন, দয়া করে তিস্তা পাড়ের পরবর্তী প্রজন্মকে বাঁচান।

তিস্তা নদী ডালিয়া ডিভিশনের উপসহকারী প্রকৌশলী (পানি শাখা) তহিদুল ইসলাম বলেন, উজানের ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে তিস্তার পানি বাড়ে। এতে নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যায়। আশঙ্কা রাতের মধ্যে পানি আরও বাড়তে পারে। বন্যার পানি নিয়ন্ত্রণে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে। সতর্কাবস্থায় থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এছাড়া তিস্তার নিম্নাঞ্চলের মানুষকে সতর্ক অবস্থানে থাকতে বলা হয়েছে। এজন্য মাইকে সতর্ক করা হয়েছে।

রাতে খবর আসে নোহালী ইউনিয়নের বাঁধ রক্ষার্থে মানুষজন বালুভর্তি বস্তা ফেলে। নিম্নাঞ্চলগুলোতে ঢুকেছে পানি। গঙ্গাচড়া গান্নারপাড় বিপদজনক অবস্থায়, সেখানেও ভাঙনরোধে বস্তা ফেলার কাজ চলছে। এরকম উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টে ভাঙনরোধে স্ব স্ব এলাকাবাসীর ঘুমহীন পাহারা চলছে।

বিপৎসীমার সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান মৃধা জানান, নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ডালিয়া পয়েন্টে সোমবার (৬ অক্টোবর) সকাল ৬টায় বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হলেও সকাল ৯টায় বিপৎসীমার ৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। পানি কমতে শুরু করছে, তারপরেও এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় উপজেলা প্রশাসনের সবরকম প্রস্তুতি রয়েছে। এলাকাবাসীকে বলব, যেভাবেই হোক এ সংকট মোকাবিলা করতেই হবে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম