Logo
Logo
×

সারাদেশ

পদ্মা নদীতে আধিপত্য নিয়ে দুপক্ষের গোলাগুলি, গুলিবিদ্ধ ২

Icon

পাবনা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৪২ পিএম

পদ্মা নদীতে আধিপত্য নিয়ে দুপক্ষের গোলাগুলি, গুলিবিদ্ধ ২

পদ্মা নদীর ‘অধরা’ জলদস্যু কাকন বাহিনীর আস্তানায় কম্বাইন্ড অভিযানের ৩ মাস পর আবারও নদীর আধিপত্য নিয়ে সন্ত্রাসীদের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। সোমবার (৬ অক্টোবর) সন্ধ্যার আগে ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশী ইউনিয়নের পদ্মা নদীর স্লুইসগেট এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

এতে নিজাম উদ্দিন (৩২) ও মো. সজিব (৩০) নামে দুজন গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

গুলিবিদ্ধ নিজাম উপজেলার সাঁড়াঘাট এলাকার হোসেন আলীর ছেলে এবং সজিব একই এলাকার বাবলু হোসেনের ছেলে।

চলতি বছরের জুন ও জুলাই মাসে পদ্মায় আধিপত্য নিয়ে সন্ত্রাসী কাকন বাহিনীর সঙ্গে বিবদমান গ্রুপগুলোর ৩ দফা সংঘর্ষ এবং গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে দৈনিক যুগান্তরে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ হলে গত ১৭ জুলাই যৌথ বাহিনী ঈশ্বরদীর সাড়া ঘাট ও পার্শ্ববর্তী নাটোরের লালপুরের দিয়ার বাহাদুরপুর চর এলাকায় কাকন বাহিনীর আস্তানায় অভিযান চালায়।

অভিযানে নারীসহ ৩ জনকে আটক, তিনটি বিদেশি অস্ত্র, গোলাবারুদ, মাদকদ্রব্য, একটি মাথার খুলি,নগদ ১২ লক্ষাধিক টাকাসহ সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নানা সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও চাঁদাবাজি ও বালু মহালের চাঁদার টাকার ভাগবাটোয়ারার একটি বড় তালিকা উদ্ধার করা হয়।

এই অভিযানের পর কাকন বাহিনী নিষ্ক্রিয় হয়েছে বলে মনে করা হলেও সোমবার আবারও বিবদমান দুটি গ্রুপের মধ্যে আধিপত্য নিয়ে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নতুন করে ভাবনায় ফেলেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঈশ্বরদী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সদস্য সচিব মেহেদী হাসান এবং পদ্মাপারের কুষ্টিয়া ভেড়ামারার খন্দকার সোহেল হাসানের লোকজনের মধ্যে এ গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।

সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা নদীর তরীয়া মহলের ইজারা নিয়েছেন ঈশ্বরদী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সদস্য সচিব মেহেদী হাসান। অপরদিকে নদীতে নৌকা চলাচলকারী (চ্যানেল) ইজারা পান কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারার খন্দকার সোহেল হাসান নামে এক ব্যক্তি। নদীতে খাজনা আদায় নিয়ে ওই দুপক্ষের মধ্যে বিরোধের জের ধরে সোমবার এ গোলাগুলির ঘটনা ঘটে বলে সূত্রের দাবি।

উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা মেহেদী হাসান অভিযোগ করে বলেন, দুপুরে হঠাৎ করেই খন্দকার সোহেল স্পিডবোটে করে তার লোকজন নিয়ে এসে আমার ইজারা নেওয়া ঘাটে নির্বিচারে গুলি চালায়। এতে স্থানীয় নিজামের বুক ও সজিবের চোখে গুলি লাগে। এছাড়া সোহেল আমার একটি স্পিডবোট ও নগদ প্রায় ৫০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। আহত দুজনকে প্রথমে ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়, পরে অবস্থার অবনতি হলে তাদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

তিনি আরও জানান, অনেকদিন ধরে লালপুরের কাকন বাহিনীর সঙ্গে আমাদের বিরোধ চলছে। এ ঘটনায়ও কাকন বাহিনীর লোকজন থাকতে পারে বলে আমরা সন্দেহ করছি।

মেহেদী হাসান বলেন, গুলিবিদ্ধের ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে খন্দকার সোহেলের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।

ঈশ্বরদী থানার ওসি আসম আব্দুন নূর জানান, ঘটনার পরপরই খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হলেও কাউকে পাওয়া যায়নি।

তিনি বলেন, কাকন বাহিনী আবারও মাথা চাঁড়া দিয়ে উঠল কিনা-তা আমরা খতিয়ে দেখছি।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার নাজিরগঞ্জ থেকে রাজশাহীর চারঘাট পর্যন্ত পদ্মা নদীর বিস্তীর্ণ ৪০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে কাকন বাহিনীর সাম্রাজ্য। পদ্মা নদীতে বৈধ এবং অবৈধ সব বালু ব্যবসায়ীদের নিয়মিত চাঁদা দিতে হয় কাকন বাহিনীকে।

এছাড়া নদীতে জেলে সম্প্রদায়সহ কৃষকদের কাছেও মূর্তিমান আতঙ্ক এই কাকন বাহিনী। কাকন বাহিনীর সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতার বলয়ে থাকা রাজনৈতিক নেতারা জড়িত থেকে ফায়দা হাসিল করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এজন্য নির্বিঘ্নে ক্ষমতা প্রদর্শন করতে পদ্মায় একের পর এক অস্ত্রের মহড়া চালিয়ে যায় এসব সন্ত্রাসী চক্র।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম