Logo
Logo
×

সারাদেশ

ছাতকে ৫ কোটি টাকার চাঁদাবাজি: ৯ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট

Icon

ছাতক (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:৫৭ পিএম

ছাতকে ৫ কোটি টাকার চাঁদাবাজি: ৯ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট

সুনামগঞ্জের ছাতকে বিদ্যুৎ সংযোগ ও লাইন সংস্কারের নামে সাধারণ গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রায় ৫ কোটি টাকা চাঁদা ও প্রতারণার মাধ্যমে আদায়ের অভিযোগে ৯ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। দীর্ঘ তদন্ত শেষে এ চার্জশিট বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) সকালে আদালতে জমা দেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মঞ্জুল ইসলাম নয়ন।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, সিলেট পিডিবি প্রজেক্ট অফিসের অধীনে ছাতক উপজেলায় পুরাতন এলটি লাইন (লো-টেনশন লাইন) সংস্কারের নামে একটি প্রভাবশালী চক্র কয়েক বছর ধরে প্রতারণা চালিয়ে আসছিল। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক হাজী শহিদুল তালুকদার, তার ছোট ভাই কামাল তালুকদার, শ্যালক মাসুম চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার ফজলুর রহমান ওরফে ফাহাদ, ছাতক উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বিল্লাল আহমদ, জাউয়াবাজার ইউনিয়নের যুবলীগ নেতা ছাদ মিয়া, কৈতক গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা আশরাফ আলী এবং তাদের পৃষ্ঠপোষক দোয়ারাবাজারের সাবেক এমপি মুহিবুর রহমান মানিকের ঘনিষ্ঠ সহযোগী আজিজ রহমানসহ আরও কয়েকজন মিলে এ সিন্ডিকেট গঠন করে।

আরও অভিযোগ রয়েছে, চক্রটি ছাতকের বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে ঘুরে বিদ্যুৎ খুঁটি স্থাপন, ট্রান্সফরমার বসানো ও নতুন সংযোগ দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে পাঁচ শতাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে বিপুল অর্থ আদায় করে। কারো কাছ থেকে ১০ হাজার, কারো কাছ থেকে ৫০ হাজার, এমনকি কয়েকজনের কাছ থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রতারণার মাধ্যমে এই চক্র মোট প্রায় ৫ কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নেয়।

ভুক্তভোগী গ্রাহকরা অভিযোগে জানান, এই চক্রের সদস্যরা সরকারি প্রকল্পের নাম ব্যবহার করে ভয়ভীতি দেখাত। তারা বলতো, ‘টাকা না দিলে সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হবে বা নাম বাদ যাবে।’ অথচ বাস্তবে কাজের অগ্রগতি ছিল অত্যন্ত ধীর—এক বছরের কাজ পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি।

ঘটনার মোড় ঘুরে যায় গত ১৭ মার্চ রাতে, যখন ছাতক সেনাক্যাম্পের ক্যাপ্টেন শোয়েব বিন আহমেদের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর একটি টহল দল উপজেলার জাউয়াবাজার ইউনিয়নের দেওকাপন গ্রামে অভিযান চালিয়ে দুজনকে নগদ টাকাসহ আটক করে। 

আটকরা হলেন—মাসুম চৌধুরী (৪৭), টাঙ্গাইল জেলার বাসাইল উপজেলার কাউলজানী গ্রামের সাহাদাত আলী চৌধুরীর ছেলে এবং ফজলুর রহমান ওরফে ফাহাদ (৩২), কালিহাতি উপজেলার গুহকোনা গ্রামের বাদশাহ মিয়ার ছেলে। তারা দুজনই ছাতকের কৈতক গ্রামের সেলিম সিদ্দিকীর বাড়িতে ভাড়া থাকতেন।

অভিযান চলাকালে তারা দেওকাপন গ্রামের ইশাদ আলীর ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার কথা বলে ১৭ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করছিলেন—এমন সময় স্থানীয়রা বিষয়টি সেনা টহল টিমকে জানালে অভিযান চালিয়ে তাদের হাতেনাতে ধরা হয়।

পরদিন ১৮ মার্চ সকালে আটকদের আদালতে পাঠানো হয়। এর আগে ১৭ মার্চ রাতে দেওকাপন গ্রামের আব্দুস ছত্তারের ছেলে সাইদুল হক বাদী হয়ে ছাতক থানায় প্রতারণা ও চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলা করেন। 

প্রধান আসামি হাজী শহিদুল তালুকদারসহ তার ভাই, শ্যালক, সহযোগীসহ মোট ৭ জনের নামে মামলা করা হয়।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি সিলেটের পিডিবি প্রজেক্ট অফিসের কতিপয় কর্মকর্তার নাম ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে বিশ্বাস করাত। অনেকক্ষেত্রে প্রকৃত কাজের অনুমোদন ছাড়াই তারা মেরামত ও সংযোগ দেওয়ার কথা বলত। এসব কারণে সাধারণ মানুষ তাদের কথায় বিশ্বাস করে অর্থ দিয়েছিল।

এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, বিদ্যুৎ উন্নয়নের নামে যারা বছরের পর বছর প্রতারণা করেছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত।

ভুক্তভোগীরা আদালতের প্রতি আস্থা প্রকাশ করে বলেছেন, যাদের কারণে আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি, তারা যেন কোনোভাবেই পার না পায়—এই আমাদের একমাত্র চাওয়া।

প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দ্রুতবিচার আইনে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হবে, যাতে বিদ্যুৎ খাতের নামে ভবিষ্যতে কোনো চাঁদাবাজ চক্র সক্রিয় হতে না পারে।

তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসআই মঞ্জুল ইসলাম নয়ন বলেন, তদন্তে আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে বিদ্যুৎ গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রায় ৫ কোটি টাকারও বেশি অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় ৯ জনের বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত প্রমাণ পাওয়া গেছে। দীর্ঘ তদন্ত শেষে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। এ মামলায় গ্রাহকরা নিশ্চয়ই সুবিচার পাবেন।

এদিকে ছাতক থানার ওসি সফিকুর রহমান খান বলেন, চাঁদাবাজি করতে গিয়ে সেনাবাহিনীর হাতে দুজন ধরা পড়েছিল। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে একটি বৃহৎ প্রতারণা চক্রের তথ্য। পাঁচ বছর ধরে তারা বিদ্যুৎ উন্নয়নের নামে প্রতারণা চালিয়ে আসছিল। আমরা পর্যাপ্ত প্রমাণ সংগ্রহ করেছি এবং তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতে ৯ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দিয়েছেন।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম