কথিত বিএনপি কর্মী হত্যার ঘটনায় স্ত্রীর মামলা
হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১০ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:৩৮ পিএম
ছবি: যুগান্তর
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
চট্টগ্রামের হাটহাজারীর মদুনাঘাট ব্রিজের অদূরে দুষ্কৃতকারীদের এলোপাতাড়ি গুলিতে রাউজানের কথিত বিএনপি কর্মী ও ব্যবসায়ী আবদুল হাকিম (৪৬) নিহত হওয়ার ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে।
শুক্রবার (১০ অক্টোবর) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন থানার ওসি মো. মনজুর কাদের ভূঁইয়া। বৃহস্পতিবার রাতে আবদুল হাকিমের স্ত্রী তাছপিয়া আলম তানজু হাটহাজারী মডেল থানায় উপস্থিত হয়ে মামলাটি করেন।
ঘটনার দুই দিন পর করা মামলার এজাহারে বাদী বলেন, তার স্বামী আবদুল হাকিম মূলত একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি রাজনীতি করতেন না। হত্যা মামলায় সুনির্দিষ্ট কাউকে আসামি করা হয়নি। এদিকে, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ওই দিন (মঙ্গলবার) রাতে গ্রেফতার সন্দেহভাজন ৩ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
আবদুল হাকিমের স্ত্রী তাছপিয়ার করা মামলার এজাহারে তিনি তার স্বামীকে বিএনপি নেতা বা কর্মী অথবা সমর্থক কোনোটিই উল্লেখ করেননি। এজাহারে তার স্বামীকে অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতকারীরা পরস্পর যোগসাজশে পূর্বপরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে বলে দাবি করেন।
তাছপিয়া তার নিহত স্বামী আবদুল হাকিমকে একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী এবং তার গ্রামের বাড়িতে ‘হামিম এগ্রো’ নামে একটি ফার্ম ও অন্যান্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন।
আবদুল হাকিম বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ অনুসারী হিসাবে পরিচিত। তিনি একজন ‘বিএনপি কর্মী বা সমর্থক’ বলে লোকমুখে প্রচার রয়েছে। রাউজান উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নে গত বছর ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে বিএনপির সদস্য সংগ্রহ ও ফরম বিতরণসহ নানা অনুষ্ঠানে তার অংশগ্রহণের কিছু ছবি ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
এদিকে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এক বিবৃতিতে বলেছেন, রাউজানে গুলিতে নিহত আবদুল হাকিম এবং দুষ্কৃতকারীদের কেউই বিএনপির কর্মী নন।
স্থানীয়রা জানান, দলে কোনো আনুষ্ঠানিক পদ ছিল না আবদুল হাকিমের। রাজনীতির পাশাপাশি তিনি ভেষজ পণ্যের ব্যবসা, গরুর খামার ও কর্ণফুলী নদী থেকে বালু উত্তোলনের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি রাউজান উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নের পাঁচখাইন এলাকার হাজি রাজা মিয়ার বাড়ির ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত আলী মদনের ছেলে। তিনি দুই মেয়ে ও এক ছেলের জনক ছিলেন।
মামলার এজাহারে সেদিনের ঘটনার বর্ণনায় জানা গেছে, গত ৭ অক্টোবর ব্যবসায়ী হাকিম তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান হামিম এগ্রো ফার্ম দেখার জন্য বেলা ১১টায় চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশ এলাকা থেকে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে প্রাইভেটকারযোগে রওনা করেন। সেখানে পৌঁছে খামারের কর্মচারীদের দিকনিদের্শনা দিয়ে রাউজান উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নে গ্রামের বাড়িতে যান। দুপুরের খাওয়া-দাওয়া শেষে আবার হামিম এগ্রো ফার্মে গিয়ে কর্মচারী সোলায়মান ও ফুফাতো ভাই শুক্কুরের সঙ্গে কথা শেষ করে বিকাল ৫টার দিকে চট্টগ্রাম নগরীর নিজ বাসার উদ্দেশে রওনা দেন। এ সময় তার গাড়িতে ফুফাতো ভাই শুক্কুরও ছিলেন। তারা হাটহাজারী উপজেলার মদুনাঘাট ব্রিজ অতিক্রম করে পানি শোধনাগারের সামনে পৌঁছালে তিন মোটরসাইকেল যোগে হেলমেট ও মুখোশ পরা অজ্ঞাত ৬ দুষ্কৃতকারী হাকিমের গাড়ির কাছে আসে এবং তাকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করতে থাকে। এ সময় গাড়ির সামনের সিটে বসে থাকা ব্যবসায়ী হাকিম গুলিবিদ্ধ হয়ে রক্তাক্ত হন এবং সিটেই লুটিয়ে পড়েন। গাড়িচালক মো. ইসমাইলও গুলিবিদ্ধ হন এবং প্রাণে বাঁচতে গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে মদুনাঘাট বাজারের দিকে চলে যান। এ সময় হাকিমের ফুফাতো ভাই শুক্কুর ভয়ে গাড়ির পেছনের সিটে লুকিয়ে ছিলেন। পরে স্থানীয় লোকজন হাকিমকে উদ্ধার করে এভারকেয়ার হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
কী কারণে এমন হত্যাকাণ্ড হতে পারে- এ প্রশ্নের জবাবে আবদুল হাকিমের স্ত্রী ও হত্যা মামলার বাদী তাছপিয়া আলম তানজু বলেন, ‘আমি কী বলব! আমার স্বামীতো রাজনীতি করেন নাই। তিনি মূলত একজন ব্যবসায়ী। ওই দিন সন্ধ্যার আগে গ্রামের বাড়ি থেকে শহরে ফেরার পথে তার গাড়ি থামিয়ে গুলি করে তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমাদের পরিবারের কারও সঙ্গে কোনো বিরোধ ছিল না তার। আমি শুধু এ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার চাই।
এদিকে, ঘটনার দিন রাতে রাউজান নোয়াপাড়া থেকে হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার চারজনের মধ্যে তিনজনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বৃহস্পতিবার ৫৪ ধারায় আদালতে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাটহাজারী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী মো. তারেক আজিজ।
গ্রেফতাররা হলেন- রাউজান উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নের গশ্চি ব্রাহ্মণহাট এলাকার নুরুল ইসলামের ছেলে মো. নাসিম (২৬), পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নের বদু মুন্সির পাড়ার রমজান আলির ছেলে মো. মহিউদ্দিন মহিন (২৩) ও একই এলাকার আরবান আলীর ছেলে আরফাত হোসেন (২২)।
এদিকে, শুক্রবার ঘটনার তিন দিন অতিবাহিত হলেও এখনো পর্যন্ত ঘটনার সঙ্গে জড়িত সুনির্দিষ্ট কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। পাশাপাশি এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্য কারণ সম্পর্কেও সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য জানতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
যদিও পুলিশ বলছে, হেলমেট ও মাস্ক পরা কয়েকজন মোটরসাইকেলে এসে গুলি করে পালিয়ে যায়। এ বিষয়ে একাধিক সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে।
জানতে চাইলে হাটহাজারী মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) এবং মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোস্তাক আহম্মদ চৌধুরী বলেন, সন্দেহভাজন হিসাবে আটকদের যাচাই-বাছাই করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। হত্যার মূল কারণ এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে আমরা সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা দিয়ে তদন্ত করছি। আশা করি অস্ত্রধারীদের খুব শিগগিরই শনাক্ত করা সম্ভব হবে।
