Logo
Logo
×

সারাদেশ

ফুটপাত দখল করে বাজার, তিন দফায় মোটা অঙ্কের চাঁদা আদায়

Icon

লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:৫৯ পিএম

ফুটপাত দখল করে বাজার, তিন দফায় মোটা অঙ্কের চাঁদা আদায়

ছবি: যুগান্তর

চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় বটতলী মোটরস্টেশনের পাশে সড়কের জায়গা ও ফুটপাত দখল করে গড়ে উঠেছে অবৈধ বাজার। বাজারটি স্হানীয়ভাবে সাহেব বাজার নামে পরিচিত। দৈনিক তিন দফায় ২৫০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে হয় ফুটপাতে বসা ভ্রাম্যমাণ দোকানদারদের।

প্রতিদিন সড়কের জায়গা ও ফুটপাত দখল করে এখানে শতাধিক দোকান বসে। এ বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে দোকান ভেদে দৈনিক তিন দফায় ২৫০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে হয়- বিশেষ করে যে দোকানের সামনে বসবে ওই দোকানের মালিক, ইজারাদার, ট্রাফিক আর শহর পরিচালনা কমিটিকে। তবে শহর পরিচালনা কমিটির কয়েকজন দায়িত্ববান নেতা কমিটির নামে চাঁদা তোলার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।

বিষয়টি নিয়ে কয়েকজন ব্যবসায়ীর বক্তব্য ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে নানা সমালোচনার সৃষ্টি হয়।

স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন, এসব দোকানের কারণে সড়কে যানজটের মতো সমস্যা হলেও দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। প্রশাসন দোকানগুলো তুলে দিলে কয়েক ঘণ্টা পর আবার বসে। ফুটপাত দখলের কারণে যাত্রীদের ওঠানামা করতে হয় মূল সড়ক দিয়ে। এমনকি পথচারীদেরও হাঁটতে হয় গাড়ির ফাঁকে ফাঁকে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে অবৈধ তিন চাকার যানবাহনের দৌরাত্ম্য। ট্রাফিক পুলিশের চোখের সামনেই এগুলো চলছে, কিন্তু কার্যকর ব্যবস্থা খুব একটা নেই।

সোমবার (১৩ অক্টোবর) সন্ধ্যায় সরেজমিন দেখা যায়, ফুটপাত ছাপিয়ে সড়কে গড়ে উঠেছে একশর বেশি দোকান। এসব অস্থায়ী দোকানে বিক্রি হচ্ছে কাঁচা সবজি, আদা, পেঁয়াজ, রসুন, ফলমূল, শুঁটকি মাছ। সন্ধ্যা হলে এর সঙ্গে যোগ হয় মাছ ব্যবসায়ীরা। দিনে উপজেলার বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করে অবিক্রীত মাছগুলো এখানে এনে বিক্রি করছেন তারা।

দোকানদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগে ফুটপাতের ওপরে কয়েকটি মাত্র দোকান ছিল। ক্রেতাদের ভিড় বাড়ায় কেনাবেচাও বেড়েছে, সেই সঙ্গে বেড়েছে দোকানের সংখ্যা। এখন এখানে স্থায়ী ও ভ্রাম্যমাণ মিলিয়ে একশর মতো দোকান। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে সকালে ভ্রাম্যমাণ দোকান আরও বেড়ে যায়। এতে প্রায় পুরো সড়ক দখল হয়ে যায়।

এসব দোকান আগে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যবসায়ীরা শহর উন্নয়ন কমিটি নামে পরিচালনা করত। তবে ছাত্র জনতার-অভ্যুত্থানের পর বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী–সমর্থিত একটি কমিটি শহর পরিচালনা কমিটি নাম দিয়ে পরিচালনা করছে। এ নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যেও রয়েছে ক্ষোভ। 

এ বিষয়ে বটতলী বাজার ইজারাদার মো. মিজানুর রহমান বলেন, আমরা সড়কে দোকান বসাতে বলিনি। বারবার সরিয়ে নেওয়ার কথা বলছি। বিভিন্ন কমিটির নামে টাকা উত্তোলন করা হয় কিন্তু আমরা বৈধ ইজারাদার হয়েও টাকা উত্তোলনে বাধা দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বটতলী শহর পরিচালনা কমিটির সদস্য রিদোয়ানুল কবির এরফান বলেন, শহর পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে পরিচ্ছন্নতা বাবদ রশিদের মাধ্যমে দৈনিক চাঁদা নেওয়া হয়। এর বাইরে রশিদবিহীন টাকা আদায়ের ক্ষেত্রে আমাদের সম্পৃক্ততা নেই।

স্থানীয় রাজনীতিবিদ মুসলিম উদ্দীন বলেন, সড়ক ও ফুটপাত দখল করে গড়ে উঠা এসব অবৈধ দোকানের কারণে বটতলীতে প্রতিনিয়ত যানজট লেগে থাকে। তাছাড়া এ বাজারকে ঘিরে চলে খোলামেলা চাঁদাবাজি। এমনও ঘটনা ঘটেছে একজন দরিদ্র কৃষক যে টাকার সবজি বিক্রি করেছেন সেই পরিমাণ টাকা চাঁদা দিয়ে শূন্য হাতে বাড়ি ফিরেছেন। তাই সড়কে শৃঙ্খলা ও চাঁদাবাজি বন্ধে অচিরেই ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।

লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইফুল ইসলাম বলেন, এসব অবৈধ দোকান বন্ধে সড়ক ও জনপদ বিভাগকে নিয়ে বেশ কয়েকবার উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। স্থায়ীভাবে উচ্ছেদ করতে শীঘ্রই অভিযান পরিচালনা করা হবে। চাঁদাবাজির বিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। করলে তদন্তসাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম