কিশোর গ্যাংয়ের হাতে জিম্মি নোয়াখালীবাসী
নোয়াখালী প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৪৯ পিএম
ফাইল ছবি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
নোয়াখালী শহরতলীর পর কিশোর গ্যাং কেটিজি বাহিনীর হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে জেলা শহরবাসী। আতঙ্কে শহরের ব্যবসায়ীরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অসহায়। এ কিশোর গ্যাং বাহিনী একের পর এক ঘটনা ঘটিয়ে শহরবাসীকে জিম্মি করে ফেলেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেখেও দেখছেন না অথবা কোনো অদৃশ্য শক্তির ভয়ে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।
জেলার বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট, মানবাধিকার কর্মীদের তথ্য ও এলাকাবাসী প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ এবং থানা ও কোর্টে দায়ের হওয়া মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, নোয়াখালীর জেলা শহর মাইজদীতে এখন ৫টি কিশোর গ্যাং সক্রিয় থেকে মাদক ব্যবসা, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, রাহাজানি, জমি দখল, বাসাবাড়ি দখল, মেয়ে অপহরণের মতো ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছে।
এ বাহিনী গুলিকে সন্ধ্যার পরপরই শহরের জেলা প্রশাসকের অফিসের সামনে পার্ক, দ্বিতীয় প্রশাসনিক ভবনের সামনে, পুলিশ কেজি স্কুলের সামনে, সাতরাস্তার মোড়ে, শহীদ মিনার এলাকা, রেলস্টেশন, এতিমখানা সড়ক, জেলখানা সড়ক, মাইজদী বাজিগর বাড়ি এলাকা, ইসলামিয়া রোড, সোনাপুর কাটপট্টি এলাকা, জেলখানা মোড়, মাইজদী হাউজিং বালুর মাঠ এলাকায় সংগঠিত হতে দেখা যায়। এ গ্রুপগুলির আবার উপগ্রুপও রয়েছে।
বিগত সরকারের আমলের মামা গ্রুপ ও ভাইয়া গ্রুপের লিডারদের বিতাড়িত করে তাদের সদস্যদেরকেও এ বাহিনী গুলি দলে ভিড়িয়েছে। এ বাহিনী গুলিকে সংঘটিত করে রাজনৈতিক দলের কয়েকজন নেতার আশীর্বাদে কেটিজি গ্রুপ নামে পরিচালিত হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।
কেটিজি বাহিনীর মূল শহর অংশে নেতৃত্ব দিচ্ছে মাহমুদ হাসান বাবু। তার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে শহরের মূল অংশের জেলা প্রশাসকের অফিস এলাকা, পুলিশ সুপার অফিস, শিল্পকলার পিছনের এলাকা, কাউয়া রোড, পাঁচরাস্তা। আর তার নেতৃত্বে রয়েছে ৩টি উপগ্রুপ। উপগ্রুপগুলির নেতৃত্বে রয়েছে ফকিরপুরের নাইমুল, তামিম, হরিনারায়ণপুরের ইউসুফ। এদের গ্রুপে রয়েছে ১৫/১৬ জন।
এরা
এতটাই বেপরোয়া যে বৃহস্পতিবার (১৬
অক্টোবর) রাত সাড়ে আটটার
দিকে গণপূর্ত বিভাগের সামনে থেকে দেশীয় অস্ত্রে
সজ্জিত হয়ে প্রধান সড়কের
প্রতিপক্ষ মধুপুর গ্রুপকে ধাওয়া করে শহরে আতঙ্কের
সৃষ্টি করে। এ সময়
বিশাল সেন্টারের সামনে থাকা একটি পুলিশের
গাড়িও আতঙ্কে দ্রুত থানার দিকে চলে যায়।
পুলিশ সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধ না করে চলে
যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা আতঙ্কে দোকানপাট বন্ধ করে দেয়।
একই বাহিনী শুক্রবার এশার নামাজে মুসল্লি রাখা জেলার কোর্ট মডেল মসজিদ থেকে মুসল্লি রাখা নামাজ পড়ে বাহির হওয়ার সময় জেলা প্রশাসকের অফিসের সামনে কিশোর গ্যাংয়ের দুই গ্রুপে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লে ৭/৮ জন আহত হয়। এসময় তারা শহর থেকে বাজার নিয়ে বাসায় যাওয়ার পথে নোয়াখালী জজকোর্টের পেশকার মহিউদ্দিনের ছেলে কামরুল ইসলাম কামরানকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ও হাতের রগ কেটে জবাই করে হত্যার চেষ্টা চালায়। মারাত্মকভাবে আহত করে মৃত ভেবে তাকে ফেলে চলে যায়। পরে জনতা তাকে উদ্ধার করে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে যায়। বর্তমানে সে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে বলে তার পিতা পেশকার মহিউদ্দিন জানান।
এ ব্যাপারে তিনি সুধারাম থানায় কিশোর গ্যাং লিডার মাহমুদ হাসান বাবুকে প্রধান আসামি করে ৬ জনের নাম দিয়ে ২৫/৩০ জনকে অজ্ঞাতনামা করে মামলা দায়ের করেন (জিআর ৩৭১/২৫)।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে থানার ডিউটি অফিসার কোনো তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করে বলেন, নেতারা ক্যাডার পালবে, পুলিশ কি করবে?
এলাকাবাসী জানায়, কেটিজি বাহিনী প্রতিরাতে বেগমগঞ্জ–মাইজদী সড়ক, বেগমগঞ্জ–চন্দ্রগঞ্জ সড়ক, মাইজদী–রাজগঞ্জ–ছয়ানী সড়কে ছিনতাই, রাহাজানির মতো ঘটনা ঘটালেও ভয়ে কেউ মুখ খুলতে চায় না। তাদের ভয়ে শহরতলির দোকানপাট রাত ৮টার পরপরই বন্ধ হয়ে যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ওষুধ ব্যবসায়ী জানান, দূরদূরান্ত থেকে জেনারেল হাসপাতাল ও পাশের প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে আসা রোগীদের আত্মীয়-স্বজনদেরকে এ বাহিনী জিম্মি করে বালুর মাঠে নিয়ে সর্বস্ব কেড়ে নেয়।
প্রাইম হাসপাতালে আসা রোগীর আত্মীয় আমির হোসেন জানান, তিনি তার বোনকে দেখতে এসে এলজিআরডি অফিসের সামনে ছিনতাইয়ের কবলে পড়ে সর্বস্ব হারান। এরপর সুধারাম থানায় গেলে কর্তব্যরত কর্মকর্তা তার অভিযোগ না নিয়ে তাকে সোপিনা ক্যাম্পে যাওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি রাগে ও ক্ষোভে বলেন, আর দেশেই আসব না।
সুধারাম থানার ওসি কামরুল ইসলাম বলেন, ডিসি অফিসের সামনের ঘটনায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে। পুলিশ ইতিমধ্যে কয়েকজনকে গ্রেফতার করে আদালতে চালান করেছে। অন্য আসামিদের ধরার অভিযান চলছে।
জেলা
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফারুক আহমেদ বলেন, কিশোর গ্যাং হোক আর বড়
গ্যাং হোক, কোনো সন্ত্রাসীর
সঙ্গেই পুলিশ আপস করবে না।
এ ব্যাপারে তিনি সকলের সহযোগিতা
কামনা করেন।

